১৫ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১০:৫৫

দেশে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে

দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা একলাফে বেড়ে ২৬ জনে পৌঁছেছে; যা ৯ সপ্তাহের সর্বোচ্চ মৃত্যু। শনাক্ত ছাড়াল ১৭ শ’। এতে দেশে মৃত্যু সংখ্যা দাড়িয়েছে আট হাজার ৫৭১ জনে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৮ জনে দাঁড়াল। হঠাৎ করেই মৃত্যু বেড়ে যাওয়াকে উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গতবছরের ১৫ ডিসেম্বর এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন মোট ১ হাজার ৮৭৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

এর আগে গত রোববারের বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৫২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত ১ হাজার ১৫৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর একই সময়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৮ জনের। গতকালের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দুই দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে করোনা শনাক্তের এক বছর পার হওয়ার দুই মাসের ব্যবধানে গত বুধবার আবারও হাজারের ঘরে পৌঁছায় করোনা শনাক্ত। এরপর থেকে করোনা শনাক্ত শুধু বাড়ছে। গতকাল সোমবার শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৭৩ জন। আগের দিন রোববার ১ হাজার ১৫৯ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল।

একই সময়ে অ্যান্টিজেন ও আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে মোট ১৮ হাজার ৬৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত আরও এক হাজার ৭৭৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার নয় দশমিক ৪৮ শতাংশ।

গতকালের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৬ জনের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও পাঁচ জন নারী। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে তাদের মধ্যে দুই জনের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, পাঁচ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ও ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ১৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৪৩২ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ১২৭ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে করোনার সংক্রমণ তুলনামূলক কম থাকলেও মার্চের শুরু থেকে তা আবারও বাড়তে শুরু করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘শনাক্ত ও মৃত্যু এভাবে বেড়ে যাওয়াটা অবশ্যই উদ্বেগজনক। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে গিয়ে পুনরায় তা আবার বাড়া অবশ্যই উদ্বেগজনক। কেন তা বাড়ছে, সেটা বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত একটা কমিটি করা, যেটি দ্রুত এর কারণ বের করবে। কারণ বের করলে সমাধান করা যাবে। কারণ জানার পর সরকারের ঘোষণা করে দেওয়া উচিত যে, বাংলাদেশে উদ্বেগজনকভাবে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। যাতে মানুষ সচেতন হয়, স্বাস্থ্যবিধি মানে। পাশাপাশি সরকারও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে পারবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি ২১৯টি ল্যাবে ১৮ হাজার ৬৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৬টি নমুনা। এ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১০ লাখ ৯ হাজার ২২৩টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ আর নারী ৫ জন। তাদের প্রত্যেকেই হাসপাতালে মারা গেছেন।

২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে মারা যাওয়া ২৬ জনের মধ্যে ১৯ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিল।

মৃতদের মধ্যে ২৩ জন ঢাকা বিভাগের, ১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ জন রাজশাহী বিভাগের এবং ১ জন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৮ হাজার ৫৭১ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৪৮৪ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ৮৭ জন নারী।

এদিকে করোনায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ কোটি ৪০ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬৫ হাজার। সোমবার সকাল ১১টার দিকে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় (জেএইচইউ) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ৪০ লাখ ৭ হাজার ৬২০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৬ জন। করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৮১ হাজার ৬৫৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৩৪ জনের।

আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭০ জন এবং মারা গেছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৭ জন। আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৭৬২ জনের।

আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ৬০৮ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯২ হাজার ৯০ জন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে যুক্তরাজ্য রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৩৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ২৫ হাজার ৫১৬ জন।

https://dailysangram.com/post/446744