১৫ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১০:৪৩

রোজার বাকি এক মাস

নিত্যপণ্যে ভোক্তার নাভিশ্বাস

নিত্যপণ্যে ভোক্তার নাভিশ্বাস

পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার এক মাস আগ থেকেই বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম চড়া। রাজধানীর খুচরা বাজারে পণ্যমূল্য পর্যালোচনা করে রোববার দেখা গেছে, ৩০ দিনের ব্যবধানে ১৪টি পণ্যের দাম বেড়েছে।

এগুলো হচ্ছে- সব ধরনের চাল, মুরগি, দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ, প্যাকেটজাত আটা, ভোজ্যতেল, হলুদ, আদা, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা, গুঁড়া দুধ, খাসির মাংস।

এসব পণ্য কিনতে ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিমশিম খাচ্ছে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

উল্লিখিত ১৪টি পণ্যের দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় লক্ষ্য করা গেছে।

টিসিবির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি চাল সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ২৮ দশমিক ১০ শতাংশ, পেঁয়াজ ৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, দেশি হলুদ ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, দেশি আদা ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, জিরা ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, দারুচিনি ১ দশমিক ২২ শতাংশ, লবঙ্গ ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ধনে ৪ শতাংশ, তেজপাতা কেজিতে ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।

পাশাপাশি প্রতি কেজি খাসির মাংস মাসের ব্যবধানে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মুরগি সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে। আর কেজিতে গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

রাজধানীর নয়াবাজার, কাওরান বাজার ও মালিবাগ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬৮ টাকা, এক মাস আগে যা ছিল ৬২ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা, এক মাস আগে যা ছিল ৪৮ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা, এক মাস আগে যা ছিল ৩৪ টাকা।

গত এক মাস ধরে কখনও সরবরাহ সংকট আবার খামার পর্যায় দাম বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে মুরগির দাম বাড়ানো হচ্ছে। রোববার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা, এক মাস আগে যা ছিল ১৪৫-১৫০ টাকা। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৪৬৫ টাকা, এক মাস আগে যা ছিল ৪১০ টাকা। প্রতি কেজি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকা, এক মাস আগে যা ছিল ২২০-২৩০ টাকা।

এদিন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা এক মাস আগে ৩৫ ও ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকা, এক মাস আগে যা ছিল ১১৭-১১৮ টাকা।

এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা। এছাড়া নতুন করে মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি খাসির মাংস ৫০ টাকা বেড়ে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি হলুদ মাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি দারুচিনি মাসের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ধনে ১০ ও তেজপাতায় ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ ও ২০০ টাকা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা সালাউদ্দিন বলেন, বাজারে এখন সব ধরনের মুরগির সরবরাহ কম। কারণ এ সময় বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মুরগি সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি খামার পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে খামার পর্যায় থেকে বেশি দরে মুরগি রাজধানীর বাজারে আসছে। সে কারণে বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. কবির হোসেন বলেন, রোজা আসার আগেই বিক্রেতারা সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন থেকেই তারা অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার কারণে বাজারে কোনো পণ্যে হাত দেয়া যাচ্ছে না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানায়, রমজান উপলক্ষ্যে বিশেষ বাজার তদারকি শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ প্রতিটি জেলায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/401939