১৫ মার্চ ২০২১, সোমবার, ৭:৫৪

বর্ষার আগে সচল হচ্ছে না রাজধানীর সব খাল

৭টি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট পরিষ্কারে কাজ করছে ডিএসসিসি * ১৪টি খালের রুটিন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ডিএনসিসি

আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে সচল হচ্ছে না রাজধানী ঢাকার সব খাল। নানামুখী দখল ও ভরাটের কারণে এগুলোতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি সম্ভব নয়। ফলে এবারও ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার ধকল সইতে হবে।

পদে পদে বাধার কারণে খালগুলো সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশেন। এখন সিএস এবং আরএস রেকর্ড ধরে খাল উদ্ধারে নামার কথা ভাবছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত খালের সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে ২৬টির দায়িত্ব বুঝে পেয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

বাকি ১৩টি খাল পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা তত্ত্বাবধানে আছে। সেসব খালেও পানির প্রবাহ নেই। অন্যান্য বছর রুটিন মেনে তেমন পরিষ্কারও করা হয় না। তবে এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। ইতোমধ্যে খালগুলো পরিষ্কার রাখতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা ইতিবাচকভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেন, খালের দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর বিগত আড়াই মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাকি কাজ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করার লক্ষে কার্যক্রম চলছে। এছাড়া নিজস্ব এলাকার খালগুলোয় নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা ।

তথ্যমতে, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর খাল পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করার কার্যক্রম হাতে নেয় দক্ষিণ সিটি। জিরানী, মাণ্ডা, শ্যামপুর, কমলাপুর, কদমতলা, কাজলা ও শুকনগর খালের অবৈধ দখল ও আবর্জনামুক্ত করে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে।

এসব খাল ও বক্স কালভার্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টন আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ৩৫ কিলোমিটার খাল প্রবহমান হয়েছে। এছাড়া হাজারীবাগ, কালুনগর, বউজবাজার, ষড়কুঞ্জ খাল পরিষ্কার এবং ৫২, ৫৩ ও ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে।

ডিএনসিসির কাছে ঢাকা ওয়াসা ১৪টি খাল হস্তান্তর করেছে। এর মধ্যে রূপনগর, রামচন্দ্রপুর, গোদাগাড়ী, কল্যাণপুর ক, খ, গ, ঙ ও চ খাল পরিষ্কার করেছে ডিএনসিসি। বিগত আড়াই মাসে এসব খাল থেকে ১০ হাজার ৪০০ টন বর্জ্য অপসারণ করেছে।

ফলে এসব এলাকার এ খালগুলো অনেকাংশে প্রবহমান হয়েছে। এটা ধরে রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে খালের দায়িত্ব পাওয়ার পর ডিএসসিসির খাল ও বক্স কালভার্টগুলোয় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব খাল ও বক্স কালভার্ট অপসারণ করা হবে।’

একই বিষয়ে ডিএনসিসির উপ-প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে পাওয়া ১৪টি খাল পরিষ্কার ও দখলমুক্ত রাখতে রুটিন কার্যক্রম চলছে। এসব খালের অবৈধ দখলদারমুক্ত এবং আবর্জনামুক্ত করে পানির প্রবাহ বাড়াতে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বছরব্যাপী এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে খালগুলোর চেহারা আলাদা দেখা যাবে। এখন এগুলোকে খাল বলে মনে হবে।’

সূত্রমতে, রাজধানীর প্রধান খালগুলোর মধ্যে রয়েছে কাটাসুর, হাজারীবাগ, ইব্রাহীমপুর, কল্যাণপুর, আব্দুল্লাপুর, রামচন্দ্রপুর, বাউনিয়া, দ্বিগুণ, দিয়াবাড়ী, ধোলাই, রায়ের বাজার, বাইশটেকি, শাহজাহানপুর খাল, জিরানী, মাণ্ডা, মেরাদিয়া, গজারিয়া, কসাইবাড়ী, শাহজাদপুর, সুতিভোলা, ডুমনি, বোয়ালিয়া, রামপুরা, গোবিন্দপুর, সেগুনবাগিচা ও খিলগাঁও-বাসাবো খাল। এগুলোকে কেন্দ্র করে আরও শাখা-প্রশাখা রয়েছে।

এসব খাল দখল, মুক্ত করে প্রবহমান রাখতে পারলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন সম্ভব হবে। নইলে প্রতি বছরের মতো একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরের এ খালগুলোর বিদ্যমান বেহাল অবস্থা থেকে মুক্ত করতে সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) রেকর্ড ধরে খাল উদ্ধার করতে হবে। একইসঙ্গে খালগুলোর সংযোগ নিশ্চিত করে চারপাশের নদ-নদীর (বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা) সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তাহলে রাজধানীর পানি নিষ্কাশন কার্যক্রমের অগ্রগতি ঘটবে।

এ প্রসঙ্গে প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার খাল, ড্রেনেজ এবং বক্স কালভার্ট ব্যবস্থার দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটির কাছে নিয়ে আসা এক ধাপ অগ্রগতি বলা যায়। তিনি বলেন, ‘সিএস রেকর্ড ধরে ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করতে হবে। একই সঙ্গে এসব খালের সঙ্গে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর কার্যকর সংযোগ ঘটাতে হবে। তাহলে রাজধানীর জলজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।’

একই বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান যুগান্তরকে বলেন, ‘খালগুলো দখল, দূষণ রোধ করে প্রবাহ ঠিক রাখতে কোথাও কোথাও নতুন নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে সিএস এবং আরএস রেকর্ড ধরে খাল উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/401931