রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে রোববার ধসে পড়া বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের নির্মাণাধীন পিয়ার ক্যাপ
১৫ মার্চ ২০২১, সোমবার, ৭:৪৫

বিআরটি প্রকল্প

হঠাৎ কাত হয়ে পড়ল গার্ডার

পিয়ার ক্যাপে ধস * চীনা ৩ নাগরিকসহ আহত ৬ * তদন্ত কমিটি গঠন

রাজধানীতে নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ত্রুটির কারণে রোববার সকাল ১০টার দিকে এয়ারপোর্টের সামনের সড়ক এলাকায় বিআরটি’র লঞ্চিং গার্ডার হঠাৎ কাত হয়ে পড়ে।


এতে ৩ চীনা নাগরিকসহ অন্তত ৬ জন আহত হন। এদিকে আব্দুল্লাহপুর এলাকায় নতুন ঢালাই দেওয়া পিয়ার ক্যাপ ধসে পড়েছে।

শনিবার গভীর রাতের ওই ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ দুই ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বলে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এয়ারপোর্ট এলাকায় গার্ডার পড়ে আহতরা হলেন- মি. হোয়ানি ফেই (৩৫), ডিউ জিয়াং উয়েই (৫০), হুয়াং জং ইউয়ান (৩৮), মোজাম্মেল (২৮) ও মাইদুল (২৪)। তাদেরকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আহত লিটন হোসাইন (৩০) প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছিল। রাস্তার পূর্ব পাশের মনোলোভা রেস্তোরাঁর সামনের রাস্তায় ৮ ও ৯ নং স্পেনের মাঝখানে একটি লঞ্চিং গার্ডার বসানোর সময় একপাশে কাত হয়ে পড়ে।

এ সময় আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন জানান, আহত ৬ জনকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে তিনজন চীনা নাগরিক রয়েছেন। একজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। এখানে প্রজেক্টের স্প্যান বসানোর সময় লঞ্চিং গার্ডার একপাশে কাত হয়ে পড়ে যায়। এতে লোকজন আহত হন।’

বিমানবন্দর থানার এসআই সুমন পারভেজ জানান, ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠাই। সেখান থেকে একজনকে পঙ্গু হাসপাতালে এবং ৫ জনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে পঙ্গু হাসপাতাল থেকেও ওই ব্যক্তিকে এভারকেয়ারে স্থানান্তর করা হয়।

সাইফুল ইসলাম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি বিমানবন্দরের সামনে ছিলেন। বিপরীত দিকে বিকট শব্দ হতেই তাকিয়ে দেখেন ধুলো উড়ছে। মানুষ এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। পরে কাছে গিয়ে দেখেন গার্ডার ধসে পড়েছে। গার্ডারের ওপর ১৫ থেকে ২০ জন লোক ছিল। তাদের মধ্যে ৫-৬ জন আহত হয়েছে। অন্যরা অক্ষত।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় তারা ওপর থেকে নিচে ছিটকে পড়েন। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহিম বলেন, এখানে যারা কাজ করছিলেন, তাদের মাথায় এক ধরনের হেলমেট ও অ্যাপ্রোন ছাড়া আর কোনো নিরাপত্তা উপকরণ চোখে পড়েনি। যে কারণে গার্ডারটি কাত হতেই অনেকে ওপর থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান। আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর জন্য ঘটনাস্থলে কোনো গাড়িও ছিল না।

ঘটনার পর রাস্তার দুইপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হবে।’

এর আগে শনিবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে আব্দুল্লাহপুরের পলওয়েল কারনেকশনের সামনে বিআরটির নির্মাণাধীন একটি পিয়ার ক্যাপ ধসে পড়ে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। নির্মাণাধীন র‌্যাপিড ট্রানজিটের ২২ নম্বর পিলারের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল পিয়ার ক্যাপ। তার ওপর স্প্যান বসানোর কথা ছিল। তবে ঢালাই শেষ হওয়ার পর রাতেই সেটি ধসে পড়ে।

এতে পিয়ার ক্যাপের রডগুলো বের হয়ে গেছে। ওপরের ভারি রডগুলোও বাঁকা হয়ে গেছে। দুপুরে দেখা যায়, নির্মাণ শ্রমিকরা ধসে পড়া পিলারের রডগুলো গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে বের করার চেষ্টা করছেন। সুমন নামে এক শ্রমিক বলেন, রাতে ডিউটি শেষে বাসায় চলে যাই। সকালে এসে দেখি এর একপাশের অংশ ধসে পড়েছে । কীভাবে পড়েছে বলতে পারি না। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, রাতে একটি গাড়ি এসে ধাক্কা দিলে ঢালাই করা পিলারটি ধসে পড়ে।

রোববার সন্ধ্যায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দুর্ঘটনার পরই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সেফটি গার্ড ছিল না, এমনটা কেউ বললেই তো হবে না। আমি বলব, প্রকল্পে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সেফটি গার্ড ছিল। এরপরও যদি কোনো অব্যবস্থাপনা থাকে, তবে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তখন কারও গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যানজট নিরসনের লক্ষ্যে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১ ডিসেম্বর ২০১২ সালে। ৮ বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয় মাত্র ৪১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে চলাচলকারী বাসগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া কোথাও থামবে না।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/401928