আসন্ন পবিত্র মাহে রমযান ও ঈদ উল ফিতরকে টার্গেট করে সড়কপথ ছেড়ে এখন সুন্দরবনের রুট নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। অবৈধ পথে আসা ভারতীয় পোশাকে সয়লাব হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বাজারগুলো। যার ফলে দেশীয় ব্যবসায়ীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, চাহিদা কমছে দেশীয় কাপড়ের বাজারে। প্রশাসনের তৎপতায়ও থামছে না চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম। প্রতিনিয়ত শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় শাড়ী কাপড় ও থ্রীপিচসহ অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রী। ইতোমধ্যে চোরাই পথে আসা ভারতীয় শাড়ি-কাপড়ের একটি বড় চালান সুন্দরবনের চরাপুটিয়া এলাকা থেকে আটক করে কোস্টগার্ড। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাচারের সাথে জড়িত মাফিয়াদের চিহ্নিত করতে না পারায় থামছে না অবৈধ পথে চোরাচালান।
প্রতি বছর ঈদ, পূজা আর নানা উৎসব আয়োজনে নতুন কাপড়ের চাহিদা বাড়ে বাজারের দোকানগুলোতে। আর লোকজনের এমন চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশের বাজারের প্রবেশ করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কাপড়ের বড় বড় চালান।
১২ মার্চ গভীর রাতে মোংলা বন্দরের পশুর নদীর সুন্দরবনের চরাপুয়িা এলাকা থেকে একটি দেশীয় ট্রলার বোঝাই প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় শাড়ী কাপড়ের একটি বড় চালান জব্দ করে মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন। জব্দকৃত মালামাল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কোস্টগার্ড হেফাজতে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক ভারতীয় এ মূল্যবান শাড়ী কাপড়ের গাইডগুলো মোংলা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রক্রিয়া চলছে, যা পরবর্তীতে কি পরিমাণ কাপরের পণ্য ও তার মূল্য নির্ধারণ করা হবে বলেও জানায় কোস্টগার্ড সদস্যরা। তবে রাতে সুন্দরবনের গহীন থেকে এ সকল ভারতীয় পণ্যগুলো জব্দ করলেও পাচারের সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি কোস্টগার্ড। ভারতীয় শাড়ীর চালান জব্দের ঘটনায় কোস্টগার্ডের উপর মোংলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে বারবার শুধুমাত্র শাড়ী, থ্রীপিচ ও শার্টপিচ কাপড় আটক হয় কিন্তু পাচারকারী থাকে ধরা ছোয়ার বাইরে। এ নিয়ে ব্যাবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
মোংলা বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ফেন্সি ক্লোথ স্টোরের মালিক ও মোংলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. খোকন মিয়া জানান, নিয়মিত চোরাই পথে আসা কাপড়ের চালান জব্দ হচ্ছে কিন্তু কারা এর সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে না। তবে সুন্দরবনে বনরক্ষীদের চোখ আড়াল করে কিভাবে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য পাচার করছে তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর সাথে বনরক্ষীরা কেউ জড়িত আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জোর দাবি ব্যবসায়ীদের।
বেশ কয়েক বছর ধরে আহরহ ঘটছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে কাপড়ের চালান আসার ঘটনা। এ কারণে যারা ভারতীয় শাড়ী-কাপড় বিক্রি করছেন তারাই কেবল ব্যবসা করছেন। কারন শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারণে কম মুল্যে ভারতীয় চাকচিক্যে শাড়ি ও থ্রি পিচ বিক্রি বেশি হচ্ছে। আর দেশীয় কাপড়ের পণ্য বিক্রি করতে না পারায় বাকী ব্যবসায়ীরা পড়ছেন লোকসানে। সেই সঙ্গে কমছে দেশীয় কাপড়ের চাহিদা।
মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম হাবিবুল আলম জানান, সুন্দরবন ও খুলনাসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশী কাপড়ের চোরাচালান আটকের ফলে খুলনা, বাগেরহাট, মোংলা, যশোর ও সাতক্ষীরা এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। যার কারণেই ১২ মার্চ প্রায় কোটি টাকার চালান আটকের সাফল্য টহলেরই অংশ। পাচারকারীরা নিজ স্বার্থ ও বেশী মুনাফা লোভের আশায় সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে গোপন পথে বিদেশী শাড়ি কাপড় চোরাচালানী বা আমদানি করছে। যা একবারেই কাম্য নয়। অবৈধভাবে ভারতীয় মালামাল দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছেন কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা।
তিনি দাবি করেন, আগের তুলনায় এখন অনেকটা কমে গেছে চোরাইপথে মালামাল আসার ঘটনা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে আসা মালামাল জব্দ হলেও কেন ওই পাচারের সাথে জড়িতরা আটক হন না এমন প্রশ্নের জবাবে জোনাল কমার্ন্ডার জানান, তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারের সাথে জড়িতরা যানবহন ও পণ্য ফেলে সুন্দরবনের গহীনে দ্রুত পালিয়ে যায়, ফলে তাদের আটক করা সম্ভব হয় না।