২৯ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ৮:১১

র‍্যাবের অস্ত্র মামলাকে ‘তথ্যগত ভুল’ বলছে পুলিশ

 আড়াই মাস আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে অস্ত্রসহ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে রযাট ব। এ ঘটনায় র্যা ব বাদী হয়ে থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করে। তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে র্যা বের করা মামলাকে ‘তথ্যগত ভুল’ উল্লেখ করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে মামলা থেকে মামলার দুই আসামিকে অব্যাহতিরও সুপারিশ করা হয়েছে। ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।
অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি শফিউল বশর ওরফে রনি এবং সোহেল রানা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন। গত ১৪ জানুয়ারি বিকেলে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কের বড়দীঘিপাড় এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে রাইফেল, ৫৬টি গুলিসহ ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব। দুজনকে গ্রেপ্তারের পরপরই ওই রাইফেল ও গুলি নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র বলে দাবি করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে বড়দীঘিপাড় এলাকাটি (যেখানে তল্লাশি চালায় র্যা ব) প্রায় এক কিলোমিটার দূরে।
মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন হাটহাজারী থানার পরিদর্শক মো. শরীফুল ইসলাম। তিনি মাসখানেক আগে বাঁশখালী থানায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব পান একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন।
আদালতে দেওয়া দুই পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কামাল হোসেন উল্লেখ করেন, জব্দ করা অস্ত্রের মালিকানা, লাইসেন্স বিষয়ে কোনো বাছবিচার না করে ভুল তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে মামলাটি করা হয়েছে। জব্দ করা প্রাইভেট কারটিও অস্ত্রের লাইসেন্সধারী ব্যক্তির। ঘটনার দিন তৌফিক আহমেদ চৌধুরী তাঁর কার্যালয়ে সালিসে ব্যস্ত ছিলেন। সেখানে লোকজন বেশি থাকায় নিরাপত্তার কারণে অস্ত্র নিজের কাছে না রেখে কার্যালয়ের বাইরে তাঁর প্রাইভেট কারে রাখেন। পরে বিকেলে ওই গাড়িতে করে তাঁর দুই আত্মীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে তাঁর স্ত্রীকে আনতে যাওয়ার পথে র্যা বের তল্লাশির মুখে পড়েন। তাঁরা অস্ত্রটি কাউন্সিলর তৌফিকের বললেও র্যা ব সদস্যরা শোনেননি।
মামলাটির বিষয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যগত ভুল হওয়ায় অস্ত্র মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় তৌফিক আহমেদ চৌধুরী উল্লেখ করেন, অস্ত্র আইনে তাঁর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা আছে। তবে হাইকোর্টের আদেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
এ বিষয়ে ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর আত্মীয়কে ধরে নিয়ে মামলা দেওয়ায় হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি।
লাইসেন্স যাঁর নামে অস্ত্র ও গুলি তাঁর কাছেই থাকতে হবে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আগ্নেয়াস্ত্র) মো. সাব্বির রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলর তৌফিকের অস্ত্রগুলো কেন ওই দুই যুবকের কাছে গেল তা তদন্ত করতে জেলা প্রশাসন থেকে জেলা পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে শুনানির জন্য আদালতে এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করেননি বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক এ এইচ এম মশিউর রহমান।
মামলাটির বিষয়ে র্যা ব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ গত শুক্রবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, লাইসেন্স শর্ত অনুযায়ী অস্ত্রগুলো কাউন্সিলর তৌফিকের কাছে পাওয়া যায়নি, দুই যুবকের কাছে পাওয়া গেছে। এ জন্য র্যা ব মামলা করেছে। এ মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে র্যা বের পক্ষ থেকে নারাজি আবেদন করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে সরকারি কৌঁসুলির সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।


http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1124591/