১৪ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১:০৮

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গবেষণা জরুরি

করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তি পেতে দেশে দেশে চলছে টিকাদান কর্মসূচি। একেক দেশ একেক কোম্পানির টিকা নিচ্ছে। অতি দ্রুত টিকা তৈরি করায় এর নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও টিকা নেয়ার পর সমস্যা তৈরি হচ্ছে। টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করে কোনো কোনো দেশ বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। কেউ টিকাদান বন্ধ রেখেছে। এক কোম্পানির টিকার বদলে অন্যটি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কার্যকারিতা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত গবেষণার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, গবেষণা করে টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার বিষয়টি মানুষকে বোঝাতে পারলে টিকা গ্রহণের হার বাড়বে। একইসঙ্গে টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে তাও দূর করা যাবে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন নেয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে। এর আগে ইমিউনিটি তৈরি হয় না। আর ভাইরাসটির শক্তিকালীন সময় দুই সপ্তাহ। এর আগেই হয়তো কারো শরীরে ভাইরাসটি ঢুকে থাকে, তখন তিনি হয়তো টের পাননি। তার লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। কিন্তু তিনি সংক্রমিত হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, দেশে টিকা নিয়ে বড় ধরনের গবেষণা দরকার। টিকাটি কতদিন পর অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। টিকা কতমাত্রায় কার্যকর তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। দেশের এই বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট জানান, আইইডিসিআর এই নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এই ধরনের গবেষণায় নজর দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, টিকা নেয়ার পর যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের বিষয় তদন্ত করা হয়েছে। এ রকম চারজনের বিষয়ে তদন্ত করে টিকা নেয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, করোনার টিকা নেয়ার পর মৃত্যুর যেকোনো রিপোর্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রতিবেদন আকারে জানাতে হয়। এমনকি অন্য কোনো রোগেও মারা গেলে বিশ্ব সংস্থা সংস্থাকে রিপোর্ট করতে হয়। কী কারণে মারা গেল। করোনার টিকা নেয়ার পর ইদানীং একজন মারা যাওয়ার বিষয়েও তদন্তাধীন বলে উল্লেখ করেন এই জনস্বাস্থ্যবিদ। তিনি বলেন, এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল ভারতে হয়েছে। বিশ্ব সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে। ফলে আমাদের এখানে গবেষণার প্রয়োজন নেই। এছাড়া টিকায় যেসব উপদান বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে তা সময়ে সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়। ডা. মুস্তাক হোসেন আরো বলেন, এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে বড় আকারে গবেষণা করা দরকার। কতদিন পর থেকে ভ্যাকসিনটি কার্যকারিতা শুরু হয়। তার জানামতে আইইডিসিআর এবং আরো কিছু প্রতিষ্ঠান এসব বিষয়ে গবেষণা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, টিকা নিয়ে গবেষণা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আইইডিসিআর-এ। টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবেই। জ্বর ব্যথা হলে প্যারাসিটামল খেতে হবে। এ ব্যাপারে ভ্যাকসিন নেয়ার সময় টিকাকেন্দ্র থেকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এদিকে টিকা নেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার আরো গবেষণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। আগামী সপ্তাহ থেকে এই রিভিউ শুরু হওয়ার কথা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়, এরই মধ্যে এই টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে টিকা গ্রহণকারীর রক্ত জমাট বেঁধে যায় এমন বিচ্ছিন্ন রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে অক্সফোর্ডের এস্ট্রাজেনেকার টিকা অস্থায়ীভাবে প্রয়োগ স্থগিত রেখেছে ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড এবং থাইল্যান্ড।

বাংলাদেশে টিকা গ্রহণের এক মাস পর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েসের। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। টিকা নেয়ার ১২ দিন পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন। সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স ম গোলাম কিবরিয়াও টিকা নেয়ার ৬ষ্ঠ দিনের মাথায় আক্রান্ত হন। এ ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াত ও তার স্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছেন সম্প্রতি। টিকা নেয়ার পর রাজধানী ঢাকার এক স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সাজ্জাদ হোসেন নামের ওই স্বাস্থ্যকর্মী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার হিসেবে কর্মরত। ১৬ দিনের মাথায় তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নেয়ার পরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ কোন টিকাই শতভাগ কার্যকর এটা বলা হচ্ছে না। আর টিকা নেয়ার পরপরই কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না। এজন্য নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ অবস্থায় টিকা নেয়ার পরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজকর্ম চালাতে হবে। বেশি প্রয়োজন না হলে জনসমাগমে না যাওয়া।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=266157