১২ মার্চ ২০২১, শুক্রবার, ৫:৪৫

আবদুর রহিম মেডিকেল

কেনাকাটায় নয়ছয়

হাসপাতালের লন্ড্রি বানানোর নামে প্রায় ১২ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আড়াই কোটি টাকার মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার নামেও দেড় কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। সবমিলিয়ে দুইটি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা লোপাট করেছে লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক স্বাস্থ্য সেক্টরের মাফিয়া বলে খ্যাত মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেভি ডিউটি হসপিটাল লন্ড্রি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ২০১৮ সালের ২৬শে ডিসেম্বর লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজার নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. আমির আলী স্বাক্ষরিত ৪১১২৩১৫ নং কোডে ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে। যেখানে প্রতিটি ফুল অটোমেটিক ওয়াশার এক্সট্রাক্টর ১ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ফুল অটোমেটিক ড্রায়ার প্রতিটি ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, অটোমেটিক ফ্ল্যাটওয়ার্ক আয়রনার প্রতিটি ৭২ লাখ টাকা, আয়রনিং টেবিল প্রতিটি ৬০ হাজার টাকা, বয়লার ৮০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং সাব-স্টেশনের মূল্য ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া টার্নকি প্রজেক্টের মূল্য ১ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাজার যাচাই করে দেখা গেছে, ওয়ার্ক অর্ডারে উল্লেখ করা লন্ড্রির মালামালের দাম এক কোটি ২০ লাখ টাকা থেকে এক কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি হবে না। তাই লন্ড্রি প্ল্যান্ট স্থাপনের এ ওয়ার্ক অর্ডারে প্রায় ১২ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ২৩শে ডিসেম্বর একই প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া আরেক ওয়ার্ক অর্ডারে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি কেনার আদেশ দেয়া হয়। এ ওয়ার্ক অর্ডারেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. আমির আলী স্বাক্ষর করেন। এ ওয়ার্ক অর্ডারে ব্ল্যাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটরের মূল্য ৩০ লাখ টাকা, প্রতিটি পালস অক্সিমিটারের মূল্য ৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা, ২ টনের প্রতিটি এয়ার কন্ডিশন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, প্রতিটি কার্ডিয়াক মনিটর ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা, আইসিইউ বেড ২০ লাখ টাকা এবং ভেন্টিলেটরসহ এনেসথিসিয়া মেশিন ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেডিকেল পণ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত এক ব্যবসায়ী মানবজমিনকে বলেন, ওয়ার্ক অর্ডারে উল্লেখ করা পণ্যগুলো কিনতে এক কোটি টাকার বেশি লাগবে না। কারণ ওয়ার্ক অর্ডারে উল্লেখ করা দামের সঙ্গে বাজারের এসব পণ্যের দামের আকাশ পাতাল ফারাক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুটি ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৪২ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি ও লন্ড্রি সামগ্রী কেনার আদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লেক্সিকোন। এসব পণ্যের বাজারমূল্য তিন কোটি টাকার বেশি হবে না। তবে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. আমির আলী। তিনি বলেন, লন্ড্রি প্ল্যান্ট ইন্সটোলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজের বিলও পরিশোধ করা হয়নি। আর নিয়ম মেনেই বাজার দর যাচাই-বাছাই করে ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি নিজেদের অন্যায়মুক্ত রাখতে এবং অন্যদের অন্যায়মুক্ত করতে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=265900&cat=2