২৯ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ৮:০৭

বড় শিল্পে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ

শিল্প খাতে গত বছর শেষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ২৪ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। ২০১৫ সালের তুলনায় যা বেড়েছে ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শুধু বড় শিল্পে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। কিছু বড় পুনঃতফসিল করা ঋণ যথাসময়ে ফেরত না আসায় পরিস্থিতি এরকম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে বড় শিল্পে খেলাপি ঋণ ছিল ৯ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। তিন হাজার ৯০৩ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে তা ১৩ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা হয়েছে। মাঝারি শিল্পে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সামান্য। আগের বছরে মাঝারি শিল্পে ৭ হাজার ৭২২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি ছিল। এক বছরে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে গত ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৮২ কোটি টাকা। ক্ষুদ্রশিল্পে খেলাপি ঋণ ২১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৭৭ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে ক্ষুদ্রশিল্পের ২ হাজার ৫২২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি ছিল।

রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেশি হারে বেড়েছে। এসব ব্যাংকে সামগ্রিকভাবে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ ৪১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে ডিসেম্বর শেষে ৮ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা হয়েছে। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে চার হাজার ৩০২ কোটি টাকায় নেমেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৯১২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ৬৩৭ কোটি টাকায় নেমেছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৬১ কোটি টাকার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বিশেষ সুবিধায় বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়। এসব ঋণের বেশিরভাগই ছিল বড় শিল্পোদ্যোক্তাদের। যার বেশিরভাগই করা হয় সরকারি বাণিজ্যিক ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। এর বাইরে আবার ১১টি বড় শিল্প গ্রুপের ১৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এসব ঋণের একটি অংশ নতুন করে খেলাপি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) শিল্প খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোট এক লাখ ৪৪ হাজার ৬০৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। আগের বছরের প্রথম ৬ মাসে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৪ হাজার ২৬ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিতরণ করা মোট শিল্পঋণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো দিয়েছে তিন হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো দিয়েছে এক হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো দিয়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা শিল্পঋণ ২৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো

বিতরণ করেছে ৯ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে বড় শিল্পে বিতরণ হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিতরণ বেড়েছে ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে মাঝারি শিল্পে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ বিতরণ কমে ১৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা হয়েছে। আর ক্ষুদ্রশিল্পে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ বিতরণ বেড়ে ১২ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর শেষে শিল্প খাতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ২২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। আগের বছর শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।

http://bangla.samakal.net/2017/03/29/280717#sthash.0qIW8AuL.dpuf