১৩ মার্চ ২০২১, শনিবার, ১:২২

করোনা নিয়ে সিলেটে উদ্বেগ বাড়ছে

করোনায় মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু। দুই মাস আগে সিলেটে বৃটেনের স্টেইন শনাক্তের খবর। সব মিলিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সিলেটে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে- সিলেটে গত এক বছরে করোনায় মারা গেছেন ২৭৯ জন। করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন মে থেকে আগষ্টের মধ্যে। এরপর মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে সপ্তাহে এক অথবা দুইজন করে করোনা আক্রান্ত হয়ে রোগী মারা যাচ্ছেন। সিলেটের কোভিড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল থেকে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

সরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও বাস্তবে সংখ্যা আরো বেশি। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অনেকেই। এখন মৌসুম পরিবর্তন হয়েছে। শীতের পর এসেছে বসন্ত। এই সময়ে নতুন করে করোনা বেড়েছে সিলেটে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা শীত নিয়ে বেশি ভীত ছিলেন সিলেটে। কিন্তু শীতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। সিলেটে করোনাকালীন কিছুদিন বন্ধ ছিল বৃটেনের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ। এরপর সেটি চালু হলে গত ৫ মাসে সিলেটে প্রায় ২২০০ প্রবাসী বৃটেন থেকে এসেছেন। এর মধ্যে মাত্র ১৬ জনের করোনা পজেটিভ মিলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- গত জানুয়ারিতে ল্যাব রিপোর্টে ভুলের কারণে সিলেটে একদিনে অধিক সংখ্যক বৃটেন ফেরত প্রবাসীর করোনা পজেটিভ মেলে। এ ঘটনার পর স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরে অবশ্য ৩ জন ছাড়া বাকিদের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। জানুয়ারিতে ৩ জন প্রবাসীর নমুনা ঢাকায় নিয়ে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে পরীক্ষা করা হয়। ওই সময় তাদের শরীরে করোনার নতুন স্ট্রেইনের সন্ধান মেলে। সেটি তখন প্রকাশ করেননি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সাম্প্রতিক সময়ে সেটি প্রকাশিত হলে উদ্বেগ দেখা দেয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান- সিলেটে জানুয়ারিতেই নতুন স্ট্রেইনের করোনা পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের কন্ট্রাক্ট ট্রেস করার চেষ্টা করা হয়। এতে সফল হয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ কারণে সিলেটে ব্যাপকহারে নতুন স্ট্রেইনের করোনা ছড়িয়ে পড়েনি। এখন ঢাকায় বাড়ছে করোনার প্রকোপ। এতে করে সিলেটেও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের উপ-পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘সিলেটে পাওয়া নতুন স্ট্রেইন অনেকটা শক্তিহীন। বৃটেনে এগুলো শক্তিশালী হলেও সিলেটে পাওয়া স্ট্রেইনে তেমন শক্তি নেই। অর্থাৎ বৃটেনে নতুন স্ট্রেইনে করোনা দ্রুত ছড়ায়। কিন্তু সিলেটে সেটি ব্যাপকহারে ছড়ায়নি। এ কারণে নতুন স্ট্রেইনে করোনা নিয়ে তেমন দুঃচিন্তা নেই। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে সতর্ক আছেন সবাই। তবে- করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলতে যেটি বুঝায় সেটি এখনো সিলেটে কিংবা বাংলাদেশে হয়নি। আমরা ধারণা করছি- দ্বিতীয় ঢেউ মৃদু আকারে হলেও বাংলাদেশ কিংবা সিলেটকে নাড়া দিতে পারে। আর এটির মোকাবিলা করতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।’ এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে করোনা বেড়ে যাওয়ার জন্য নতুন স্ট্রেইনকে দায়ী করছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারি মাস থেকে সিলেটে করোনা প্রতিরোধে নেই ততোটা সর্তকতা। জানুয়ারি থেকে সিলেটে বেশি সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে ৩ দিনের ছুটিতে অর্ধলাখ পর্যটক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটে আসেন। তাদের কারণে সিলেটে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। পর্যটকরাও মাস্ক ব্যবহার বিধি মানেননি। আর সিলেটের লোকজনও আগের মতো মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এর ফলে তাদের দ্বারা সিলেটে স্থানীয়ভাবে করোনা বেড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের উপ-পরিচালক জানান- সিলেটে করোনার টিকা দেয়া চলছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা দেয়া শুরু হয়। আমরা আশা করছি- আগামী বর্ষার মৌসুমে সিলেটে করোনার প্রাদুর্ভাব অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তবে, করোনা থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=266009&cat=3