১০ মার্চ ২০২১, বুধবার, ৬:০৭

অস্থির পিয়াজের বাজার

বেশ কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে পিয়াজের বাজার। ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে এই পণ্যটির দাম। দুই/তিনদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং পাইকারিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে যা কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে আবারো হাফ সেঞ্চুরি হাঁকালো আলোচিত পণ্য পিয়াজের দামে। রমজান মাসকে সামনে রেখে সরবরাহ কমার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পিয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা। তারা বলছেন, বাজারে পিয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সিন্ডিকেট করে তারা পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পিয়াজের আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।

বাজারে মুড়িকাটা নতুন দেশি পিয়াজ শেষের দিকে। তাই নতুন পিয়াজ আসার আগ পর্যন্ত দাম একটু বেশি থাকবে বলে জানান তারা। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, পাইকারি বাজারে ২-৩ দিনের ব্যবধানে ২৫-৩০ টাকার পিয়াজ একলাফে ৪২ টাকা হয়েছে। এই মুহূর্তে পিয়াজের ঘাটতি হওয়ার কথা না। মূলত প্রতিবছর রমজানে পিয়াজের দাম বাড়ানো হয়। এবার সরবরাহ কমার অজুহাতে আগে থেকেই বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

টিসিবি’র হিসাবেই এই কয়েকদিনে দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ২১.৪৩ শতাংশ। কাওরান বাজারের পিয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, পিয়াজের সবচেয়ে বড় আড়ত শ্যামবাজারে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। বড় ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কমার অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছেন। নতুন পিয়াজ আসার আগ পর্যন্ত দাম বাড়তেই থাকবে বলে জানান তারা। তবে রমজানের আগে মাস খানেকের মধ্যে পিয়াজ বাজারে আসা শুরু হলে দাম কমবে বলে মনে করেন কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা। তবে খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের অভিযোগ, দেশে একটা পণ্যের দাম বাড়লে আর সহজে কমে না। তাই রমজানেও দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না। তারা বলছেন, রমজানে পণ্যের দাম বাড়ালে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বড় ব্যবসায়ীদের। সেজন্য এবার আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

কাওরান বাজারের পিয়াজের পাইকারি বিক্রেতা আলম জানান, পিয়াজের দাম প্রতিদিনই ২-৩ টাকা করে বাড়ছে। শ্যামবাজারে বাড়ে তাই এখানেও বাড়ে। আমাদেরই ৪০ টাকা কেজি দরে আনতে হয়। তো আমরা যদি ২ টাকা লাভ না করি তাহলে ব্যবসা করে কি লাভ? তিনি জানান, বর্তমানে দেশি ভালো পিয়াজ পাইকারিতে ২১০ টাকা পাল্লা বিক্রি হচ্ছে, যা কেজিতে ৪২ টাকা পড়ে।

কাওরান বাজারের পিয়াজ বিক্রেতারা আরো জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবার নতুন পিয়াজের ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন পিয়াজ উঠলে দাম কমবে। রমজানে খুব একটা বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা। তারা আরো জানান, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে গত ২রা জানুয়ারি থেকে পিয়াজ আমদানি শুরু হয়। তবে দেশি পিয়াজের সরবরাহ বাড়ায় ২৭শে জানুয়ারি থেকে আমদানি বন্ধ রেখেছিলেন আমদানিকারকরা। এখন দেশের বাজারে পিয়াজের সরবরাহ কমায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। রমজানে দাম স্থিতিশীল রাখতে, পাশাপাশি পিয়াজের আমদানি বাড়াতে শুল্ক কমানোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।

খুচরা বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কেজিপ্রতি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। অথচ দুইদিন আগেও ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মোহাম্মদপুরের একটি মুদি দোকানে পিয়াজের দাম জিজ্ঞেস করেন একজন ক্রেতা। এ সময় মুদি দোকানি মুরসালিন দাম চান ৫০ টাকা কেজি। তিনি জানান, পাইকারিতে ৪২ টাকায় কিনতে হচ্ছে পিয়াজ। এরপর আমাদের পরিবহন খরচ আছে। এখন যদি ৫০ টাকায় বিক্রি না করি তাহলে লাভ কই? ব্যবসা করি যাতে কিছু লাভ করতে পারি। তিনি বলেন, দাম বাড়লে আমাদেরও সমস্যা। ক্রেতারা দাম বাড়ার কারণ জানতে চান। এর ব্যাখ্যা দিতে দিতে আমাদের অবস্থা কাহিল। কিন্তু দাম বাড়লে আমাদের তো লাভ বেশি হয় না।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=265646&cat=3