১০ মার্চ ২০২১, বুধবার, ৬:০৬

রোগী বাড়ছে হাসপাতালে আইসিইউতে চাপ

সারা দেশে হঠাৎ করেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনেই রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৮৭১ জন। শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮১ জন রোগী। হঠাৎ করে রোগী শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়াতে করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যা থেকে শুরু করে কেবিন ও আইসিইউতে রোগীর চাপ বাড়ছে। অনেক জটিল রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ ও কেবিন সাপোর্ট দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কূর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার একটিও খালি নাই।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে টিকা আসার পর থেকে এবং কিছুদিন ধরে শনাক্তের হার কমে যাওয়াতে মানুষ অসচেতন হয়ে পড়েছে।

মাস্ক ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যত্রতত্র ঘুরাফেরা করছে। এতে করে সংক্রমণ বিস্তার করছে। এ ছাড়া দেশে ভাইরাসের নতুন কোনো ধরনের সৃষ্টি অথবা বিদেশ থেকে আসা নতুন কোনো ধরনের জন্য সংক্রমণ বাড়তে পারে। গত বছরের এই সময় থেকে দেশে করোনার প্রার্দুভাব শুরু হয়েছিল তাই সেটির পুনরাবৃত্তিও একটা কারণ হতে পারে বলে কোনো কোনো স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। এখনই সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সরকারি ১০ হাসপাতালেই রোগী বাড়ছে। ১০টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা আছে ২৩৮১টি। এসব শয্যায় চলতি মাসের প্রথম ৯দিনেই আগের চেয়ে ১৯২ জন রোগী বেশি ভর্তি হয়েছেন। পহেলা মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৭৫ জন। পরের দিন ২রা মার্চ রোগী বেড়ে হয়েছে ৮৯১ জন, ৩রা মার্চ ৯১৮ জন, ৪ঠা মার্চ ৯৭৯ জন, ৫ই মার্চ ৯৬১ জন, ৬ই মার্চ ১০২৪ জন, ৭ই মার্চ ১০৩৮ জন, ৮ই মার্চ ১০৬৪ জন ও গতকাল ৯ই মার্চ পর্যন্ত ছিল ১০৬৭ জন।

চট্টগ্রাম মহানগরীর ৭টি করোনা হাসপাতালেও চলতি মাসে রোগী সংখ্যা বাড়ছে। মাসের শুরুতে চট্টগ্রামের ৬৮৭টি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ১৫৯ জন। গতকাল পর্যন্ত রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩ জনে। শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম নয় সারা দেশেই করোনা রোগী বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে সারা দেশে এখন সাধারণ করোনা শয্যা আছে ১০ হাজার ৩২৩টি। এসব শয্যায় ১লা মার্চ রোগী ভর্তি ছিল ১৩৭৭ জন। গতকাল পর্যন্ত রোগী সংখ্যা ছিল ১৬৫১ জন। একইভাবে সারা দেশে আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সারা দেশের ৫৮২টি আইসিইউ শয্যায় মাসের শুরুতে রোগী ছিল ১৫৪ জন। গতকাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০৪ জন।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা আছে ১৬৯টি। ১লা মার্চ এসব শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ১৫ জন। গতকাল ৯ই মার্চ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দঁাঁড়িয়েছে ২৫ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৮৮৩টি। ১লা মার্চ এসব শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ৪৫১ জন। ৯ই মার্চ সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ জনে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ শয্যা আছে ৩১০টি। ১লা মার্চ এসব শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ৬৪ জন। গতকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিল ৮৫ জন রোগী। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শয্যা আছে ২৭৫টি। মাসের প্রথমদিকে এসব শয্যায় রোগী ছিল ১৪৬ জন। গতকাল পর্যন্ত ছিল ২২১ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৪টি শয্যায় মাত্র ৭৩ জন রোগী ভর্তি ছিল কিন্তু গতকাল ৯ই মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ জনে। করোনা রোগীদের জন্য রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে শয্যা আছে ২৫০টি। এসব শয্যায় পহেলা মার্চ রোগী ভর্তি ছিল ৭৭ জন আর গতকাল ৯ই মার্চ রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১২ জন। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৯০টি সাধারণ শয্যায় ১লা মার্চ রোগী ছিল ৭ জন। গতকাল পর্যন্ত রোগী বেড়ে হয়েছে ২১ জন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক মানবজমিনকে বলেন, কেবিন থেকে শুরু করে সাধারণ শয্যা এমনকি আইসিইউতে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী কেবিন ও আইসিইউ চাহিদা মেটাতে পারছি না। ২০টি কেবিনের সবগুলোই রোগীতে পূর্ণ। আইসিইউ শয্যা খালি নাই একটিও। অথচ কিছুদিন আগেও অর্ধেকের বেশি কেবিন ও আইসিইউ শয্যা খালি থাকতো।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবৎ শনাক্তের হার কমে যাওয়াতে মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তির ভাব ছিল। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরার ব্যাপারে অসতর্ক হয়ে পড়েছিল। এখন থেকে ১৫/২০দিন আগেও ঢাকার রাস্তায় যেসব মানুষকে মাস্ক পরতে দেখা গেছে এখন তার থেকে কম লোক মাস্ক পরছে। এই অসতর্কতা একটা কারণ হতে পারে। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকে ভাইরাসের নতুন কোনো ধরন দেশে প্রবেশ করেছে কিনা সেটা অনুসন্ধান করা দরকার। এটি হতে পারে ইউকে, সাউথ আফ্রিকা বা অন্য কোনো দেশের ভাইরাসের ধরন। তাই দেশে নতুন যে রোগীরা শনাক্ত হচ্ছে তাদের থেকে নমুনা নিয়ে করোনা ভাইরাসের জিন বিন্যাস পরীক্ষা করা দরকার।

https://jamaat-e-islami.org/Bji@PrinciplePanel/news-new.php