৯ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৫৮

বড়পুকুরিয়া খনিতে বিক্ষোভ, বের হয়ে গেছেন ৬০৪ শ্রমিক

অবশেষে বিদ্রোহ করে খনি থেকে বের হয়ে এসেছেন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকরা। তিন দিনেও খনির প্রধান ফটক উন্মুক্ত করা এবং শ্রমিকদের বের হওয়ার ব্যাপারে ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা না-হওয়ায় রোববার রাত ৮টার দিকে খনিতে কর্মরত ৬০৪ জন শ্রমিক একযোগে বের হয়ে আসেন। এ কারণে তিন শিফটের পরিবর্তে শুধু চীনা শ্রমিকদের দিয়ে কোনোরকমে এক শিফটে চলছে খনির কয়লা তোলা। সোমবার দুপুরে ফুলবাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ করেন তারা।

খনিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সোমবার পার্বতীপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান। এ মামলায় ইব্রাহিম আলী, রবিউল সরকার, আসাদুজ্জামান জীবন, নূরে মুজাহিদ ও মহিবুল ইসলাম ডালিম নামে পাঁচজন খনি শ্রমিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পার্বতীপুর থানার ওসি মোখলেসুর রহমান জানান, ২৩ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘ সাত মাস তাদের খনির বাইরে আসতে দেওয়া হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধির নামে ভেতরে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আব্দুর রহিম বলেন, গত সাত মাস আমি বাথরুমে ঘুমিয়েছি। যখন আমি খনিতে প্রবেশ করি তখন আমার নবজাত মেয়ের বয়স ছিল তিন মাস। এখন আমার মেয়ের বয়স ১০ মাস। সাত মাস পর রোববার বাড়িতে গেলে তার মেয়েও তাকে চিনতে পারেনি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। ভেতরে তাদের ওপর একপ্রকার নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রস্রাব করার ক্ষেত্রেও জরিমানা দিতে হয়েছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, রোববার খনির প্রধান ফটক উন্মুক্তসহ তিন দফা দাবি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ না-হওয়ায় রাতে একযোগে বের হয়ে এসেছেন শ্রমিকরা। এখন শ্রমিকদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশের ভয়ে শ্রমিকরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, এটা শ্বশুরবাড়ি নয়, এটা খনি। এখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি। চীনারা করোনার ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করতে হবে। যখন ইচ্ছা বের হওয়া যাবে না আবার প্রবেশও করা যাবে না। এমন সম্মতিতেই তারা কাজে যোগ দেয়। এখন চীনা শ্রমিকদের দিয়ে তিন শিফটের পরিবর্তে এক শিফটে কয়লা তোলার কাজ চলছে।

খনি থেকে বের হয়ে আসার পর সোমবার ফুলবাড়ীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন শ্রমিকরা। সংবাদ সম্মেলনে তারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় খনির প্রধান ফটক উন্মুক্ত, মামলা প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবি মেনে নিয়ে দেশের স্বার্থে কয়লা উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা নুর ইসলাম বলেন, খনির লকডাউন প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের দিয়ে কাজে যোগদান করাতে হবে, প্রধান ফটক উন্মুক্ত করতে হবে, বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান ও মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়। দাবি না মানা পর্যন্ত তারা কাজে যোগদান করবেন না বলে ঘোষণা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নেতা শামিম, মোস্তাফিজুর, মতিনুর প্রমুখ। এরপর ফুলবাড়ী পৌর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। বিকালে কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিতে খনিতে প্রবেশ করেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/400043