৯ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:২৪

ভোটসংখ্যার বিচারে নগণ্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করছেন মেয়ররা

সরদার আবদুর রহমান : নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বলতে যা বুঝায় দিনে দিনে তা কেবল খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করেই খুশি থাকছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। প্রকৃতপক্ষে ভোটসংখ্যার বিচারে খুবই নগণ্য সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করছেন নির্বাচিতরা।
বিশেষত দেশের তিনটি বৃহৎ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী বলে ঘোষিত মেয়ররা মোট ভোটারের মাত্র ১৫ থেকে ১৯ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করছেন বলে বিশ্লেষণে দেখা যায়। ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর এবং চট্টগ্রাম- এই তিন সিটির ভোট বিশ্লেষণ করে এই চিত্র উঠে আসে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন
সর্বশেষ চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেখা যায়, আনুমানিক ৬০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই সিটিতে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার। ভোট পড়ে মাত্র ৪ লাখ ৩৬ হাজার। আর বিজয়ী ঘোষিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভোট পান ৩ লাখ ৬৯ হাজার। অর্থাৎ মোট ভোটারের শতকরা ১৯ ভাগের প্রতিনিধিত্ব হাসিল করেছেন তিনি। এই সিটির ভোট নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনা উঠলেও এতে আমল দেয়া হয়নি যথারীতি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি
এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ৯০ লক্ষাধিক জনসংখ্যার এই নগরীতে মোট ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার। এখানে নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ৭ লাখ ১১ হাজার। শতকরা হিসাবে ভোট পড়ে ২৯ শতাংশ। আর বিজয়ী নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৪ লক্ষ ২৪ হাজার। মোট ভোটার সংখ্যার হিসাবে এই ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার মাত্র ১৭.২৮ ভাগ। বিজয়ী মেয়র এই সংখ্যক ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করছেন বলে দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি
ঢাকা উত্তর সিটিতে একই দিন অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৬০ লক্ষাধিক জনসংখ্যার এই সিটিতে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার। ভোট পড়ে মাত্র ৭ লাখ ৬২ হাজার। শতকরা হিসাবে এই হার ২৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর বিজয়ী নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৪ লাখ ৪৭ হাজার। মোট ভোটার সংখ্যার হিসাবে এই ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার মাত্র ১৪.৮৫ ভাগ। বিজয়ী মেয়র এই সংখ্যক ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করছেন বলে দেখা যায়।

নিয়ম রক্ষাতেই খুশি ইসি!
নগর পর্যায়ের এসব নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকগণ খুশি হলেও প্রকৃত পরিস্থিতি হলো, সামগ্রিকভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা যেমন হ্রাস পেয়ে চলেছে তেমনই নির্বাচিতদেরও এতো স্বল্পসংখ্যক ভোটারের সমর্থন নিয়েই কৃত্রিম তৃপ্তির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। একে এক ধরনের বিপর্যয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নানা কারণে সামগ্রিকভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি ভোটারদের অনেকের আস্থা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। জনসাধারণ ধরে নিয়েছেন, ‘ভোট দিয়েও এর প্রতিফলন ফলাফলে মিলবে না। তাই ভোট দেয়া আর না দেয়া সমান।’ মানুষ মনে করেছে, ভোট দিলেও যিনি জিতবেন, না দিলেও তিনি জিতবেন। অর্থাৎ ভোটে কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের এনিয়ে কোনো ভাবনা আছে বলে মনে হয়নি। চট্টগ্রামের নির্বাচন শেষে ভোটের হার কম হওয়াকে একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা এভাবে বাখ্যা করেছেন, ‘দেশ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটের প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ছে।’ এতে দেখা যায়, কোনো ‘অংশগ্রহণমূলক’ ও ‘সার্বজনীন’ নির্বাচন নয়- যে কোনোপ্রকারে দায়িত্ব সম্পন্ন করার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব সীমিত রাখার পক্ষপাতি। এবিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এই পরিস্থিতির সমাধান করা কঠিন। কারণ, কোনো দলীয় সরকারের নির্বাচনে মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এ জন্য একটি নির্দলীয় ব্যবস্থার অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে মানুষ আর ভোটের প্রতি উৎসাহ দেখাবে না।

https://dailysangram.com/post/446064