৮ মার্চ ২০২১, সোমবার, ১১:৫০

একদিনেই কেজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ল ১০ টাকা

এইচ এম আকতার : পেঁয়াজের ভরা মওসুম চলছে। তারপরেও হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। কি কারণে দাম বেড়েছে তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। খুচরা বাজারে একদিনেই কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর পাইকারি বাজারে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯ টাকা পর্যন্ত। ভোক্তারা বলছেন, সামনে রমযান তাই সিন্ডিকেট মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে।

হঠাৎ পেঁয়াজের এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন দেশি যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা মুড়ি কাটা। এই পেঁয়াজের সরবরাহ আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। মওসুমি পেঁয়াজ এখনও বাজারে আসেনি। তাই দাম বেড়েছে। কিন্তু কৃষকরা বলছেন, মওসুমি পেঁয়াজ বাজারে আসছে। এখন দাম কমার কথা। কিন্তু কি কারনে দাম বাড়ছে তা জানা নেই।

অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কমার পাশাপাশি রোজার সময় এগিয়ে আসায় পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ। তাদের অভিমত, মাসখানেক পরেই রোজা শুরু। এই রোজাকে কেন্দ্র করেই আগেভাগে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। যাতে রোজার সময় কেউ অভিযোগ করতে না পারে রোজায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে বলেছেন রমজানে কোন পণ্যের দাম বাড়বে না। ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীকে দেয়া কথা রাখতেই রমজানের দেড় মাস আগেই দাম বাড়িয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ ভোক্তাদের। রমজান এলেই চাহিদা বেড়ে যায় আর এ সুবিধা নেয় ব্যবসায়ীদের একটি কুচক্রী মহল।

রমজান এলে সারা দেশে ভেজাল বিরোধী অভিযান চালালেও তাতে তেমন ফল পায় না সাধারন মানুষ। কিন্তু রমজানের আগে তেমন বাজার মনিটরিং না থাকাতে এ সুযোগ নিচ্ছে সিন্ডিকেট।

রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৮ টাকা। যা গত শুক্রবারও ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু শনিবার হঠাৎ করেই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।

মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর পেঁয়াজের দামের বিষয়ে বলেন, এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়বে কল্পনাও করতে পারিনি। আগে যদি জানতাম পেঁয়াজের এমন দাম বাড়বে, তাহলে যা টাকা ছিল সব দিয়ে পেঁয়াজ কিনে রাখতাম।

তিনি বলেন, সাধারণত কোনো কিছুর দাম বাড়ে শুক্রবার অথবা বৃহস্পতিবার। কিন্তু এবার চুপিচুপি শনিবার পেঁয়াজের দাম বাড়ল। আমাদের ধারণা রোজার সময় এগিয়ে আসায় পেঁয়াজের এই দাম বেড়েছে। এখন দাম বাড়ায় রোজার ভেতর নতুন করে আর পেঁয়াজের দাম নাও বাড়তে পারে।

বাড্ডায় ৪৮ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা জামিল বলেন, আগে পাইকারি বাজার থেকে ২৭ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছি। শনিবার সেই পেঁয়াজ ৩৯ টাকা কেজি কেনা পড়েছে। এই দামে পেঁয়াজ কিনে অন্যান্য খরচ যোগ করে ৪৮ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না।

খুচরা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার তথ্য দিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রাজ ট্রেডার্সের মালিক হাজী মোহাম্মদ মাজেদ এ বিষয়ে বলেন, আগে আমরা পেঁয়াজের কেজি ২৭-২৮ টাকা বিক্রি করেছি। এখন ৩৬-৩৭ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামালের দাম কখন বাড়ে কখন কমে বলা মুশকিল।

এদিকে যাত্রাবাড়িতে কাঁচা বাজার করতে আসা এডভোকেট শাহ আলম সরকার বলেন,গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ টাকা। আর আজ পেঁয়াজ কিনলাম ৪৫ টাকায়। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এখন পেঁয়াজের ভরা মওসুম চলছে। তাহলে কেন পেঁয়াজের দাম বাড়বে আমার বুঝে আসে না।

রোজা কাছাকাছি আসায় এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কি এবং রোজার ভেতরে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে কি- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রোজায় দাম বাড়বে না। ব্যবসাদারদের তো ব্যবসা করে খেতে হবে।

কাওরানবাজারের খান এন্ড সন্স বাণিজ্যালয়ের গৌতম বাবু পেঁয়াজের দামের বিষয়ে বলেন, এখন পেঁয়াজের দাম একটু বেশি। দুদিন আগে আমরা দেশি পেঁয়াজের কেজি ৩০-৩২ টাকা বিক্রি করেছি। এখন ৩৮-৩৯ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন বাজারে যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তা মুড়িকাটা। বাজারে এই পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে, এ কারণে দাম বেড়েছে। তবে ১৫-২০ দিন পর হালি পেঁয়াজ (ভালো মানের) ওঠা শুরু হবে। তখন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। সে হিসাবে আমাদের ধারণা এবার রোজায় পেঁয়াজের দাম না বেড়ে উল্টো কমতে পারে।

তবে ভোক্তারা বলছেন হালি ওেপঁয়াজে বাজারে আসছে। তারপরেও মুড়ি কাটা পেঁয়াজের অযুহাত দাড় করিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকার যদি কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে পারতো তাহলে কোনভাবেই ভরা মওসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে সাহস পেতো না সিন্ডিকেট।

রমজানে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করে তাই রমজানে আগেই দাম বাড়নো সহজ। আর সেটাই করলো সিন্ডিকেট। ইতিমধ্যে তারা দাম বাড়িয়েছে চালের,ডালে,তেল এবং চিনির। বর্ধিত সে দাম এখনও অব্যাহত রয়েছে।

https://dailysangram.com/post/445965