৭ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১১:৪১

আমদানিতেও কমছে না চালের দাম

এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ

বাজারে এখন কমবেশি আমদানির চাল মিলছে প্রায় সব দোকানেই। তার পরও দাম কমছে না, উল্টো আরো বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দু-এক টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। ট্রেডিং করপোরেশনের হিসাবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম বেশি রয়েছে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত। রমজান মাস সামনে রেখে চালের বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ভোক্তারা। চালের দাম বাড়লেও সবজিতে এখনো স্বস্তি রয়েছে। যদিও কিছু কিছু সবজির দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুম শেষ হওয়ায় সরবরাহ কমে আসছে। তাই কয়েকটি সবজির দাম বাড়তি।

টিসিবির বাজার তথ্যে দেখা যায়, মিনিকেট ও নাজিরশাইলসহ সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। ঠিক এক সপ্তাহ আগে এ মানের চাল পাওয়া গেছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে। গত বছর এই সময় এ মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। সে হিসাবে সরু চালের দাম বেশি রয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। আটাশ, পাইজামসহ মাঝারি মানের চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজি। গত বছর এ সময় এই মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ মাঝারি মানের চালের দাম ১৭ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। স্বর্ণা, লতাসহ মোটা চালের কেজি এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, যা সপ্তাহখানেক আগেও ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় পাওয়া যেত। টিসিবির হিসাবে গত বছর এ সময় মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৪১.৭৯ শতাংশ।

রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচাসহ সব খুচরা বাজারেই দেশি চালের পাশাপাশি আমদানি করা চালও বিক্রি হচ্ছে কমবেশি। প্লাস্টিকের বস্তায় প্যাক করা আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সরু ও মাঝারি চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। মোটা চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে।

জানতে চাইলে মুগদা বাজারের মরিয়ম স্টোরের চাল বিক্রেতা আলমগীর বলেন, ‘আমরাও মনে করেছিলাম আমদানি বাড়লে দাম কমবে, কিন্তু দেশি চালের দাম কমেনি। আমদানির চাল দেশি চালের তুলনায় কিছুটা কম। কিন্তু নতুন চালে অনেক ক্রেতাই আস্থা পাচ্ছে না, তাই বিক্রিও কম।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এখন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে দেশে তিন লাখ টন চাল এসেছে। সরকারি পর্যায়ে এসেছে দুই লাখ টন। সব মিলিয়ে দেশে পাঁচ লাখ টন চাল এসেছে। প্রতিদিন দেশে চার হাজার টন চাল আসছে। সরকারিভাবে দেশে চাল ও গম আসবে ১২ লাখ টন আর বেসরকারিভাবে চাল আসবে ১০ লাখ টন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিদিনিই চুক্তি করা হচ্ছে। আমদানির অনুমোদন নেওয়া ব্যবসায়ীদের আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে আমদানির এলসি খুলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানির ক্ষেত্রে খুলনায় কোনো সমস্যা নেই। চট্টগ্রামে কিছু সমস্যা ছিল, এখন তা-ও কেটে গেছে। শিগগিরই চালের দাম আরো কমে যাবে। এদিকে বাজারে চালের দাম কমাতে সরকার ওএমএসে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করছে। সরকারিভাবে আমদানি করা চাল যাচ্ছে সেখানে।

চালের দাম বাড়লেও এখনো স্বস্তি রয়েছে সবজিতে, তবে শীত শেষ হওয়ায় তা কত দিন থাকবে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। এরই মধ্যে কয়েক ধরনের সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা গেট কাঁচাবাজারে শসা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি, গাজর ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। এসব সবজির দর দু-এক সপ্তাহ আগে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম ছিল। ছোট আকারের লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। মহাখালী বাজারের সবজি বিক্রেতা নোমান বলেন, সবজির দাম এখনো অনেক কম। তবে কত দিন থাকে, তা বলা যাচ্ছে না। মৌসুম শেষ হওয়ায় অনেক সবজির দাম বাড়ছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/03/07/1011555/