৭ মার্চ ২০২১, রবিবার, ১১:৩৯

সতর্কতার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

করোনার ঝুঁকি কমেনি

শনাক্তের হার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও দেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমেনি। তাই স্বাস্থ্যবিধিতে অবহেলা করলে যেকোনো সময় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। এই অবস্থায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশে গত কয়েকদিন ধরে একই হারে করোনা পরীক্ষা হলেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বেড়েছে শনাক্তের হার। এ অবস্থায় সংক্রমণ বাড়ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। করোনার ঝুঁকির বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা টেস্টের সংখ্যা মোটামুটি একই আছে। সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের হার শতকরা তিন থেকে বেড়ে চার হচ্ছে।

আমাদের দেশে অন্যান্য সেক্টরে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরিস্থিতি একই রকম আছে। কিন্তু গরমের সময় আমাদের দেশে যেটা হয় বদ্ধ বা অল্প স্থানে বেশি লোক থাকলে আমরা ফ্যান চালিয়ে দেই। অথবা এসি চালানো হয়। সেক্ষেত্রে কারো যদি করোনা সংক্রমণ থাকে সেটা ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, বাতাসটি কক্ষের ভেতরে ঘুরতে থাকে। শীতপ্রধান দেশে এটা হয় শীতের সময় ছোট ঘরে বেশি লোক থাকায়। সেখানে এয়ার হিটিং করে। এর ফলে গরম বাতাস কক্ষের ভেতরে ঘুরতে থাকে। তখন এটা একজনের কাছ থেকে আরেকজন সংক্রমিত হয়। আমাদের এই গ্রীষ্ম প্রধান দেশে যত বেশি বদ্ধ ঘরে বায়ু চলাচল কম সেখানে মানুষ থাকলে, হাঁচি-কাশি দিলে, কথা বললে, মাস্ক ব্যবহার না করলে সেক্ষেত্রে সংক্রমণটা বাড়ে।

তিনি বলেন, খোলা জায়গা বিশেষ করে বাজারে যত লোক সংক্রমণ ছড়াবে তার চেয়ে বেশি ছড়াবে ছোট একটা রেস্টুরেন্টে যদি কোনো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা না থাকে। এবং সেখানে খাওয়া-দাওয়ার সময় মাস্ক খুলতে হবে। সেখানে ফ্যান অথবা এয়ারকন্ডিশন চলবে। ফলে সেখানে বেশি আক্রান্ত হবে। কাজেই বদ্ধ স্থানে যেখানে ভেন্টিলেশন নেই সেটা বিপজ্জনক। সেখানে যদি কাউকে প্রবেশ করতেই হয় তাহলে খুবই দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। বলা আছে ১৫ মিনিট অবস্থান করলে সংক্রমণ হয়। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আরো তাড়াতাড়ি হয়। অর্থাৎ ওখানে চুপচাপ থাকলে ১৫ মিনিট কিন্তু কথা-বার্তা ও হাঁচি-কাশি দিলে সেখানে আরো তাড়াতাড়ি সংক্রমণ হয়। ডা. মুশতাক বলেন, বস্তি এলাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। কিন্তু তাদের ওখানে এক কক্ষে অনেক মানুষ থাকলেও সেখানে তারা দরজা-জানালা বন্ধ করে ফ্যান চালিয়ে দিচ্ছে না। তাদের বাসার দরজা-জানালা খোলা থাকে এবং ভেন্টিলেশন ভালো হয়। এ কারণে ঝুঁকি কম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি এবং ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, শীতকালে আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের এখানে বাড়েনি। এটা কেন হয়েছে সে বিষয়ে আমরা কিন্তু ওভাবে গবেষণা করিনি। তবে আমাদের একটি হাইপোথিসিস (ধারণা) হচ্ছে শীতকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ-ভাইরাস, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনোসহ মোট চারটি ভাইরাস বিপুলভাবে সংক্রমিত হয়। এ সময় সাধারণ মানুষ, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়। ভাইরোলজিতে একটি কথা আছে দেহে যদি একটি ভাইরাস আগে প্রবেশ করে তাহলে পরবর্তীতে অন্য ভাইরাসও প্রবেশ করে। যেটাকে ভাইরাল ইন্টারফেয়ার বলে। যখন আশঙ্কা করেছিলাম করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ আসেনি। কমে যেতে শুরু করে। এবং শীতকালে প্রচণ্ড শীত থাকলেও তখন করোনাভাইরাসটি কমে গেল। এখন যেহেতু আমাদের দেশীয় ভাইরাস শীতের জন্য গ্রো (জন্মানো) করেছিল সেটা এখন কমে গেছে। সর্দি-কাশি সবকিছুই কমে গেছে। এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো কিছুটা বাড়তেও পারে। মার্চ মাস থেকে সংক্রমণটা বেড়েছে। স্যালো একটি ওয়েভ আমাদের এখানে হয়তো আসছে। কারণ, আমাদের এখানে ভাইরাল ইন্টারফেয়ারেন্সটা কমে গেছে। তাই সংক্রমণ এড়াতে অবশ্যই নিয়মিত মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, প্রথমত আমাদের এখানে সংক্রমণের হার যেভাবে কমে এসেছিল সেটা নিয়ে আমরা আশাবাদী হচ্ছিলাম। কিন্তু এখন আবার যেহেতু সংখ্যাটা বাড়ছে সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে দুটো বিষয়ে। প্রথমটি, হলো যাদের সংক্রমণ হচ্ছে তাদেরকে সঠিকভাবে শনাক্ত করে তাদের সংস্পর্শে যারা আসছে তাদেরকে পুনরায় আইসোলেট করে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। সরকারিভাবে এই কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। বাসায় কোয়ারেন্টিন করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, যাদেরকে কোভিড ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে তাদেরকে সরকারিভাবে ফলোআপ করতে হবে। কারণ, আমাদের সম্পূর্ণভাবে চিহ্নিত করতে হবে কারা এখনো টিকা নেয়নি। এবং টিকা নেয়ার পরেও তারা যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এটাও মাথায় রাখতে হবে। টিকা নেয়ার পরেও এটার ইমিউনিটি তৈরি হতে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে। সুতারং তারা সংক্রমণ ছড়াতে পারে। টিকা নেয়ার পরেও প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হবে, হাতকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এই তিনটি বিষয় টিকা নেয়ার পরেও সবাইকে মেনে চলতে হবে। আর সরকারের জন্য যেটা করণীয়, সেটা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানাতে জনগণকে সম্পৃক্ত এবং বাধ্য করতে হবে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=265240&cat=2