৬ মার্চ ২০২১, শনিবার, ১১:১৫

বেসামাল বাজার

রাজধানীর বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো চাল, তেল, মুরগিসহ অর্ধডজন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র হিসাবেই চলতি সপ্তাহে দাম বেড়েছে চাল, তেজপাতা, জিরা, দারুচিনি, আদা, আলু ও পিয়াজের। এর মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে মুরগির দাম। এ সপ্তাহে কেজিতে আরো ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। আর পাকিস্তানি কক মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত। ফলে মানবদেহে আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস মুরগির দাম নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু, খাসির মাংস ও সবজির দাম। রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। সাধারণ ভোক্তারা মুরগির বিকল্প হিসেবে সবজি খাচ্ছেন।

বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি এই সপ্তাহের বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতো। এছাড়া গত সপ্তাহে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগির দাম বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর কয়েক সপ্তাহ আগে এই মুরগির দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালী মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা এবং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১২০ টাকা।

টিসিবি’র হিসাবে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৭.৪১ শতাংশ। কাওরান বাজারের মুরগি বিক্রেতারা জানান, একমাস ধরেই মুরগির দাম ঊর্ধ্বমুখী। কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগি এখন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো বাজারে ৩৮০ পর্যন্ত দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। টিসিবি’র বাজার দরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকায়।

কাওরান বাজারের মুরগি বিক্রেতা সোহেল বলেন, এক মাস ধরেই মুরগির দাম বাড়ছে। এরমধ্যে সোনালী মুরগির দাম বেশি বেড়েছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের অনেক ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এখন বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। তারা মাল ছাড়ছেন না বলে বাজারে মুরগি সরবারহও কম এবং সেজন্য দামও বেড়েছে। তিনি বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দাম বাড়ায় তাহলে আমাদেরতো কিছু করার নেই। বরং দাম বাড়লে আমাদের ব্যবসা করতে আরো সমস্যা হয়। পুুঁজি বেশি লাগে। আবার এখন ক্রেতাও কম আসছেন। যারা অল্প আয়ের মানুষ তাদের অনেকে মুরগি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।

মোহাম্মদপুর বাজারে মুরগি কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, ক্রমেই মুরগির দাম বেড়েই চলছে। এতে আমাদের বাজার করতে সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বাজার করতে এসে। দাম বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ মুরগি কিনি নাই। আবার মাছের বাজারতো আগের থেকেই গরম। এভাবে সবকিছুর দাম বেড়ে গেলে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ কি করে জীবন চালাবে? জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমাদের আয়-রোজগার তো বাড়ে না। তিনি বলেন, আমি এমনও দেখেছি আমার পরিচিত লোকজন; যাদের মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। সবজির দাম কমায় তাই তারা শুধু সবজি কিনে ভাত খাচ্ছে। আবার চালের দামও বাড়তি। তেলের দামও এখন অতিরিক্ত। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, নিত্য-পণ্যের দাম যেন কমানো হয়।

মুরগির দাম বাড়ায় এখন প্রভাব পড়েছে ডিমের দামে। সপ্তাহ খানেক আগে দাম কমলেও আবারো চড়া হচ্ছে ডিমের দাম। বর্তমানে লাল ডিম ডজনে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিম ডজনে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। পাকিস্তানি মুরগির ডিম ডজনে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হাঁসের ডিমের ডজন ১৫০-১৫৫ টাকা।

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার রূপচাঁদা তেল ১৩৫-১৪০ টাকা, দুই লিটার ২৪০ টাকা, তিন লিটার ৩৭০ টাকা এবং ৫ লিটার ৬২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তীর মার্কা তেল ১৩২ টাকা, বসুন্ধরা ১৩০-১৩৫ টাকা, চাঁন তেল ১৩০ টাকা ও পুষ্টি তেল ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাদেক স্টোরের মালিক আরাফাত বলেন, আমরা তেলের দাম নিয়ে শঙ্কিত। কয়েক সপ্তাহ ধরে তেলের দাম বাড়ছে।

বাজারে চালের দাম কমেনি। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। প্রতিকেজি নাজিরশাইল চাল ৬৮ টাকা, কাটারিভোগ ৯০ টাকা, চিনিগুঁড়া পোলাও চাল ৯৫ টাকা, পাইজাম ৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬৮ টাকা ও জিরা নাজির ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী, এখন বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। মাঝারি মানের চাল ৫২ থেকে ৫৮ টাকা ও সরু চাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের শাক পাইকারি ও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় সরিষা শাক ১০ টাকা, পালংশাক ৮-১০ টাকা, ডাঁটা প্রতি হালি ১৫ টাকা, লালশাক ১০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস পাতাকপি ও ফুলকপি ২০ টাকা, আকারভেদে লাউ প্রতিপিস ২০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ও ধনিয়া ২০-৫০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, শিম ৩০ টাকা ও বেগুন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা কমলে-বাড়লেও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই আছে মাছের দাম। প্রতিকেজি পোয়া মাছ ৪৫০ টাকা, পুঁটি ৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৫০ টাকা, শোল মাছ ২০০-৪০০ টাকা, আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায়। মৃগেল মাছ ১৭০-১৮০ টাকা, আকারভেদে প্রতিকেজি তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, আকারভেদে সিলভার কার্প মাছ প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, সরপুঁটি মাছ ১৫০-১৭০ টাকা, বোয়াল মাছ ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে দেশি মসুর ডাল ১০০ টাকা ও ক্যাঙ্গারু মসুর ডাল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আলু ২০ টাকা, পিয়াজ ৩০-৫০ টাকা, রসুন ১১০ টাকা ও আদা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=265127&cat=2