৫ মার্চ ২০২১, শুক্রবার, ১০:৩৮

গণপরিবহনে চরম নৈরাজ্য

যত্রতত্র ওঠা-নামা, প্রতিযোগিতা করে ওভারটেকের ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা

ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে বাড়ছে রাজধানীর যানজট, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ


সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের নামে চলছে বাড়তি ভাড়া আদায়


ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে : বিআরটিএ উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক


সরকারের নিয়ন্ত্রণে উন্নতমানের বাসসেবা চালু করলে ফিরবে শৃঙ্খলা : অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন

রাজধানীর গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য চলছেই। কোনোভাবেই এ নৈরাজ্য থামানো যাচ্ছে না। যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো, প্রতিযোগিতা করে ওভারটেক করার কারণে প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলছে বিভিন্ন রাস্তায়। এতে বাড়ছে যানজট এবং দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। সিটিং সার্ভিসের নাম দিয়ে বেশি ভাড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। রাজধানীর বেশিরভাগ গণপরিবহনই এই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক পরিবহনে ‘ওয়েবিল’ (বাস কন্ডাক্টরের ভাষায় ও’বিল)- এর নামে নতুনভাবে যাত্রীদের পকেট কাটা হচ্ছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নির্ধারিত চার্টের তোয়াক্কা না করে বাসগুলো চলছে তাদের নিজেদের আবিষ্কৃত এক বিশেষ পদ্ধতিতে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট দ‚রত্বের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থায় যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ-তিন গুণ পর্যন্ত ভাড়া। প্রতি মুহ‚র্তেই সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত হলেও ভ্রƒক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের।

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রায় আড়াই বছর আগে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ কমিটি গঠন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি এই কমিটি। কবে নাগাদ শৃঙ্খলা ফিরবে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টদের কেউ। ফলে নগরবাসীর ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। নগরের প্রতিটি রাস্তায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ যাচ্ছে পথচারীর। আবার অঙ্গহানি হয়ে জীবনের তরে চলার ক্ষমতা হারাচ্ছেন অনেকে।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে তারা সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে ২১৯টি রুটের পরিবর্তে ৪২টি রুটে ২২ কোম্পানির মাধ্যমে গণপরিবহন পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। নগরীতে চলাচল করা দুই হাজার ৫০০ কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার বাসের পরিবর্তে নয় হাজার ২৭টি গণপরিবহন পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিরুলিয়ার বাটুলিয়া, সাভারের হেমায়েতপুর, কেরানীগঞ্জের বাঘাইর ও কাঁচপুরে পৃথক চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই চারটি জায়গায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল স্থাপন করলে ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমবে। সায়েদাবাদ, গাবতলী এবং মহাখালী বাস টার্মিনালগুলো তখন সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে যে গতিতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি কাজ করছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই-তিন বছরেও ঢাকা শহরে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে না।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। এসব গাড়িই রাজধানীর গলার কাঁটার মতো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে চলেছে। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলাচলের অযোগ্য এসব গাড়ি দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে একশ্রেণির পরিবহন মালিক। সেবা তো তো দূরের কথা যাত্রীরা সামান্যতম নিরাপদ নয় এসব ঝুঁকিপ‚র্ণ যানবাহনে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সাথে ভোগান্তি তো আছেই। এ রকমের ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় চলাচলের কারণে শুধু দুর্ভোগই নয়, ক্ষতির মুখে পড়ছে ঢাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্যও। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই অবাধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চললেও নেয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা।

বিআরটিএ-এর উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ইনকিলাবকে বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। সাপ্তাহিক ছুৃটি বাদে প্রতিদিনই অভিযান চলছে। ফিটনেসবিহীন ত্রæটিপূর্ণ গাড়ি ধরা হচ্ছে। ডাম্পিং করা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিস বা ওয়েবিলের নামে বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তাদের জানা নেই। কেউ যদি বেশি ভাড়া আদায় করে তাহলে মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটকে বললে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।

রাজধানীতে চলাচলরত এরকম লক্কড়ঝক্কড় মার্কা যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব বিআরটিএ-তে নেই। তবে এ সংখ্যা কয়েক হাজার হবে বলে অনেকে মনে করেন। হাইকোর্ট ফিটনেসবিহীন মোটরযান চলাচল বন্ধের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়ার পর ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। মাসখানেক সেই অভিযানে গতি থাকলেও পরবর্তীতে তা ঝিমিয়ে পড়ে। অভিযান শুরু হলে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ি চলাচল আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। সে ধাক্কা সামলিয়ে এখন সেগুলো আবার রাজপথে যথারীতি চলছে।

পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব মতে, ঢাকায় ১৯৩টি বাস রুটে প্রায় ৪ হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এর মধ্যে সহ¯্রাধিক বাস ১৫ বছরের পুরনো। সেগুলোকে রাজধানীতে চলাচলের জন্য আর অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুট পারমিট ছাড়াই নির্দ্দিষ্ট রুটে যাত্রী বহন করে চলেছে।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লক্কড়ঝক্কড় মার্কা ফিটনেসবিহীন বাসের কারণে রাজধানীতে যে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে সেজন্য প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এতে বছরে আর্থিক ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজটের কারণে মানসিক চাপসহ নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় নগরবাসীকে।

এসব সমস্যা সমাধানে ঢাকা শহরের যানবাহন ব্যবস্থাপনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উন্নতমানের অপারেশন ও ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করার কথা বলেন এআরআই’র পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন। ড. মোয়াজ্জেম ইনকিলাবকে জানান, বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা ও নিম্নমানের বাসসেবা ফেলে সরকারি অর্থায়নে পরিকল্পিত মানসম্মত বাসসেবা চালু করতে হবে। মানসম্মত বাসসেবা চালুতে কোনো অবস্থায়ই বেসরকারি কোম্পানিকে যুক্ত করা যাবে না, তাহলে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। লেগুনা, সিএনজি, রিকশা এ জাতীয় যান বন্ধ করতে হবে। তাহলেই কেবল রাজধানীর বিদ্যমান যানজট ও আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

আইনগত বৈধতা না থাকলেও ‘সিটিং সার্ভিস’ পরিচালনা করছেন বাস মালিকরা। সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে বাস মালিকরা মূলত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। কারণ সরকার যে গাড়ির ভাড়া নির্ধারণ করে তা গাড়ির সিট অনুযায়ীই করা হয়। দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন আইনগতভাবে অবৈধ। কিন্তু দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়া এবং বসিয়ে নেয়ার নাম করে সিটিং সার্ভিস বলে বেশি ভাড়া নির্ধারণ করে বাস চলছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। সিটিং সার্ভিস মালিকদের একটি অপকৌশল বা চিটিং (প্রতারণা) এবং এর মাধ্যমে তারা যাত্রীদের পকেট কাটছেন বলে মনে করেন যাত্রী ও যাত্রী কল্যাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এ পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মিরপুর থেকে ফার্মগেট গেলেও ১৫ টাকা ভাড়া আবার তার অনেক আগে শেওড়াপাড়া বা তালতলা নেমে গেলেও ১৫ টাকা ভাড়া।

বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট বেশিরভাগ বাসেই নেই। এ নিয়ে চালক, শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়তই যাত্রীদের বচসা, হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঢাকার বাস ও মিনিবাসের নির্ধারিত ভাড়া ছিল কিলোমিটারপ্রতি এক টাকা ৭০ পয়সা। তবে সেই নিয়মের তোয়াক্কা করছে না কোনো বাসই। মিরপুর-১২ থেকে গুলিস্তান রুটে চলাচল করে বিহঙ্গ, শিকড় ও বিকল্প পরিবহন নামে তিনটি বাস। এগুলোর প্রত্যেকটিতেই দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা হলেও ভাড়া রাখা হয় কথিত সিটিং সার্ভিসের মতোই।

সিটিং সার্ভিসের মতো ভাড়া বেশি নেয়ার নতুন অপকৌশল হচ্ছে ‘ওয়েবিল’ (ও’বিল)। কথিত এই সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোতে নির্ধারিত দূরত্বের পরপর কতজন যাত্রী উঠেছেন, তা গণনা করে যে খাতায় লেখা হয় সেটাই ও’বিল। কয়েকটি স্টপেজ পরপর এই কাজটি করেন একজন লাইনম্যান। একজন লাইনম্যান নির্ধারিত দ‚রত্বে ও’বিলে যাত্রীর সংখ্যা লিখে দেন। এক ও’বিলের স্টপেজ থেকে পরবর্তী স্টপেজের মধ্যে যেখানেই নামুন না কেন, যাত্রীকে গুনতে হয় পুরো পথের ভাড়া। এখানে কিলোমিটারপ্রতি সরকারি হিসাবের কোনো বালাই নেই। এসব গাড়িতে যাত্রী দাঁড়িয়ে নেয়া হয়। যাত্রীরা কিছু বললেই পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, ‘এইটা ও’বিলের গাড়ি। ভাড়া বেশিই দিতে অইব।

মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর বা মহাখালী হয়ে আসা বাসগুলো ও’বিল চেকপয়েন্ট বসিয়েছে ফার্মগেটের পর। দেখা গেছে, ফার্মগেট থেকে হোটেল সোনারগাঁও (শাহবাগের আগের মোড়) পর্যন্ত ও’বিলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। এর মধ্যে যে কোনো জায়গায় যেতে চাইলে পুরো টাকাটাই দিতে হয় যাত্রীদের। কেউ শাহবাগে গেলে নেয়া হয় ২৫ টাকা। অথচ ২৫ টাকা ভাড়া ফুলবাড়িয়া বা গুলিস্তান পর্যন্ত।

গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের বাসযাত্রী শারমিন জানান, রামপুরা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুটে চলাচলকারী স্বাধীন, রমজান, রাজধানী পরিবহনে স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রামপুরা পর্যন্ত ভাড়া নেয় ২০ টাকা। মাঝপথে যেখানেই নামা হোক না কেন, ওয়েবিলের কথা বলে ১০ টাকার নিচে ভাড়া নেয় না।

মিরপুরের কালশী হয়ে উত্তরা, বনানী, গুলশান, রামপুরা রুটের বাসগুলোতেও একইভাবে যাত্রীদের জিম্মি করে চলছে হয়রানি। প্রজাপতি, পরীস্থান, তুর, রবরব, আছিম পরিবহনসহ বিভিন্ন রুটের গাড়িতে উঠলেই যাত্রীদের দিতে হচ্ছে পুরো ভাড়া। ব্যবসায়ী নওশাদের মতে, এই রুটে হরিলুট চলছে। যেখান থেকে ওঠেন যেখানেই নামবেন, আপনাকে দিতে হবে পুরো ভাড়া। বাসভেদে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। একইভাবে যাত্রাবাড়ী বা সদরঘাট থেকে গাজীপুর বা আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী আকাশ (সুপ্রভাত), ভিক্টর ক্ল্যাসিক, রাইদাও কাটছে যাত্রীর পকেট। এসব বাসে উঠলেই ১০ টাকা গুনতে হয়, যাত্রী যত কম দূরত্বের গন্তব্যেই নামেন না কেন। লাব্বাইক পরিবহন সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলাচল করে। কিন্তু এই বাসটি সবসময়ই দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করে। কেন দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করছেন জানতে চাইলে লাব্বাইক পরিবহনের কন্ডাক্টর মো. আব্দুল কাদের বলেন, সকালবেলা যাত্রীর চাপ বেশি থাকে, তখন দু-একজন দাঁড়িয়ে যান। এছাড়া আমাদের ভাড়াও খুব বেশি না, অন্যান্য লোকাল বাসের মতোই প্রায়।

বাসচালক ও হেলপাররা জানান, বাসগুলো দিনভিত্তিক চুক্তিতে চলে যাওয়ায় ও’বিল সিস্টেমে চলে গেছেন মালিকরা। এতে মালিক, চালক, হেলপার সবার পকেটেই ভালো টাকা আসছে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ভাড়া নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে বিআরটিএ সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। আমরা দেখি ভাড়া নির্ধারিত হয় কিলোমিটার হিসেবে। কিন্তু রাস্তায় ভাড়া আদায় হয় বাসমালিকদের ইচ্ছামতো। কথিত সিটিং সার্ভিস ও ও’বিল হিসেবে। শেষ গন্তব্য পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সব যাত্রীকেই দিতে হয়। সিটিং সার্ভিস বা ও’বিলে ভাড়া আদায় নিয়ে বিআরটিএ নীরব। তাদের মোবাইল কোর্টকেও মাঠে দেখি না। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আমরা মনে করি বিআরটিএ জনগণের প্রতিষ্ঠান হলেও তারা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করছে। ফলে জনগণ নানা নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে।

তবে যাত্রীদের এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি ইনকিলাকে বলেন, সিটিং সার্ভিসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার কোনো অভিযোগ পেলে আমরা নিজেরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি, তাদের সতর্ক করি। এছাড়া এই বিষয়গুলো মনিটরিং করার জন্য বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেটরা রয়েছেন, তারা শাস্তি দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, অনেক সময় মানানো যায়, অনেক সময় মানানো যায় না। অফিস টাইমে যখন লোকজন বেশি থাকে তখন উঠে যায়, মানুষ মানতে চায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চালকরাও ওঠায়, তবে মালিকদের পক্ষ থেকে সিটিং সার্ভিসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার কোনো নির্দেশনা নেই।

https://www.dailyinqilab.com/article/362720