২৮ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:৫১

আতিয়া মহল সেনা নিয়ন্ত্রণে

চার উগ্রবাদী নিহত দুই লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর

টানা চার দিনের অভিযানের পর দণি সুরমার শিববাড়ির আতিয়া মহল এখন সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযান ‘টোয়াইলাইট’-এর চতুর্থ দিনে ভেতরে থাকা চার উগ্রবাদী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে উদ্ধার অভিযান শেষ না হওয়ায় অভিযান এখনি সমাপ্ত ঘোষণা করা হচ্ছে না। নিহত চারজনের মধ্যে একজন নারী ও বাকি তিনজন পুরুষ রয়েছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পাঠানপাড়া মসজিদের কাছে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনা সদর দফতরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘সর্বশেষ ঘটনায় চার উগ্রবাদী নিহত হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র থেকে আমরা জানতাম ভেতরে চারজন আছে। কাজেই ধরে নেয়া যায় ভেতরে আর কেউ জীবিত নেই। তবে কেউ যদি থেকেও থাকে সে কারণে সতর্ক আছি।’ আলোচিত অভিযান ‘টোয়াইলাইট’-এর নেতৃত্ব দেয়া এই সেনাকর্মকর্তা জানান, ‘দুই জঙ্গির লাশ ইতোমধ্যে বের করে আনা হয়েছে, পুলিশের কাছে আমরা সেগুলো হস্তান্তর করেছি। বাকি দু’জনের লাশ সুইসাইড ভেস্ট পরা। সেজন্য এগুলো এখনো এভাবেই পড়ে আছে।’
ব্রিগেডিয়ার ফখরুল আহসান আরো জানান, ‘অভিযানে সেনা কমান্ডোদের তরফে কোনো য়তি হয়নি। পরিস্থিতি পুরো সময়ই প্যারা-কমান্ডোদের অনুকূলে ছিল। এখনো অভিযান পুরোপুরি শেষ হয়নি। বর্তমানে সেখানে তল্লাশি চলছে। তল্লাশি শেষ হলে ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আসবে’।
এ দিকে দণি সুরমা থানার শিববাড়ি এলাকায় ‘আতিয়া মহল’র পাশে বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গত রোববার রাতে মোগলাবাজার থানার এসআই শিপু চৌধুরী বাদি হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক ধারায় এ মামলা করেন। মোগলাবাজার থানায় দায়ের করা ওই মামলায় আসামি রয়েছে অজ্ঞাত। মোগলাবাজার থানার ওসি খায়রুল ফজল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, শিববাড়িতে বোমায় নিহত এবং আহত সবাই রয়েছে পুলিশের ‘সন্দেহের’ খাতায়। বোমা হামলার ঘটনার সাথে এদের কেউ জড়িত কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নিহত দুইজন ও আহতদের সার্বিক পর্যবেণ করা হচ্ছে বলেও জানান ওসি খায়রুল ফজল।
গত শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের দণি সুরমার শিববাড়ি পাঠানপাড়া এলাকায় উগ্রবাদী আস্তানা আতিয়া মহলের সামান্য দূরে পরপর দু’টি বোমা বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। বাকিরা ওসমানী হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নিহতদের মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা হচ্ছেনÑ নগরীর জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও আদালতে পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো: আবু কায়সার। নিহতদের মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম অপু ও দণি সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহিম ছাড়াও নেত্রকোনার শহীদুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের ছাতকের দয়ারবাজার এলাকার কাদিম শাহ রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শহীদুল ইসলাম ও কাদিম শাহ সিলেট নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় প্রাইম লাইটিং অ্যান্ড ডেকোরেটর্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান চালাতেন। হামলায় নিহত ছয়জনের মধ্যে ওসমানী হাসপাতাল থেকে পুলিশের অনুমতি সাপেে চারজনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরো ২ লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর : সিলেটের দণি সুরমা উপজেলার শিববাড়িতে উগ্রবাদবিরোধী অভিযান চলাকালে বোমা বিস্ফোরণে নিহত অবশিষ্ট দু’জনের লাশ গতকাল সোমবার তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বেলা ২টায় লাশ দু’টি হাসপাতাল কর্তৃপরে কাছ থেকে গ্রহণ করেন মোগলাবাজার থানার এসআই আবদুস ছত্তার। পরে তিনি লাশ দু’টি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন। নিহত দু’জন হলেনÑ ছাতকের দয়ারবাজার এলাকার কাদিম শাহ ও নগরীর দাড়িয়াপাড়ার শহীদুল ইসলাম। তারা দু’জন পরস্পরের বন্ধু এবং দু’জনই নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় প্রাইম লাইটিং অ্যান্ড ডেকোরেটর্সে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
গ্যাস সংযোগ বন্ধ : সিলেটে শিববাড়ির আতিয়া মহলে জঙ্গি অভিযান শেষ হলেও এর আশপাশের এলাকায় গ্যাসসংযোগ বন্ধ রয়েছে। অভিযান শেষ হলেই আবার গ্যাস সংযোগ সচল হবে বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ গ্যাসের দণিাঞ্চলের ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, গ্যাসের আবাসিক সংযোগ ওপরের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। অভিযান শেষ হলে সংযোগ সচল করা হবে।
জালালাবাদ গ্যাস ভবনের সরবরাহ দফতর জানায়, আতিয়া মহল আশপাশের ছয়টি এলাকায় জালালাবাদ গ্যাসের আবাসিক সংযোগ রয়েছে আড়াই হাজারের মতো। এসব আবাসিক সংযোগ গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ রাখা হয়।
পুলিশ পরিদর্শক মনিরুলের নোয়াখলীতে দাফন
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, সিলেটে বোমা বিস্ফোরণে নিহত পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম সোহেলের গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় নোয়াখালী সদর উপজেলার মন্নাননগর মডেল অ্যাকাডেমি মাঠে তার শেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সশস্ত্র সালাম দেয়া হয়। এ সময় এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা হয়। জানাজায় নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমানডেন্ট মো: হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার মো: ইলিয়াছ শরীফসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের লোকজন অংশ নেন। পরে পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মনিরুল ইসলামের লাশ গত রোববার রাত সোয়া ১১টায় নোয়াখালীর সদর উপজেলার পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছে। সিলেটে দু’টি জানাজা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে পুলিশ তার লাশ নিয়ে আসে। এ সময় তার স্বজনেরা ছাড়াও এলাকার শত শত মানুষ প্রিয় মানুষটিকে শেষ বারের মতো দেখতে এসে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/207345