৪ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৫২

ভোজ্য তেলের দাম আরো বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা

ভোজ্য তেলের দাম আরো বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির উল্লেখ করে লিটারে পাঁচ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে দাম নির্ধারণের পদ্ধতি, প্যাকেজিংয়ের খরচ পুনর্মূল্যায়ন ও মুনাফার সীমা বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যবসায়ীরা এমন প্রস্তাব দিয়েছেন।

ট্যারিফ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রস্তাব পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি আরো এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে এই প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। আমদানিকারকরা যাতে লোকসানের শঙ্কায় না পড়েন এবং ভোক্তারাও যাতে না ঠকে সে জন্য দাম সমন্বয় করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।

দেশে ভোজ্য তেলের বাজার এমনিতেই আকাশ ছুঁয়ে আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে মিল, পাইকারি ও খুচরা তিন পর্যায়ে ভোজ্য তেলের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রতি ১৫ দিন অন্তর বাজার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই দর পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। নির্ধারিত পর্যবেক্ষণ বৈঠকটি গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। দেশের আমদানিকারক ও রিফাইনারি কম্পানির প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।

বর্তমানে খোলা সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম মিল পর্যায়ে ১০৭, পাইকারি পর্যায়ে ১১০ এবং খুচরায় ১১৫ টাকা লিটার নির্ধারিত রয়েছে। বোতলজাত বা প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের দর নির্ধারণ করা আছে মিল পর্যায়ে ১২৩, পরিবেশক পর্যায়ে ১২৭ এবং খুচরায় ১৩৫ টাকা লিটার। সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল ৫৯০, ৬১০ ও ৬৩০ টাকা সর্বোচ্চ মূল্য। এর ওপর লিটারে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান পদ্ধতি অনুসারে মিল মালিকরা ২ শতাংশ, পরিবেশক পর্যায়ে প্রতি লিটারে চার টাকা এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের লিটারপ্রতি আট টাকা মুনাফা হিসাব করা হয়। এ ছাড়া পরিবেশক পর্যায়ে পাঁচ লিটারে ১৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ২০ টাকা মুনাফা ধরা হয়। পাম তেল লিটারে মিল পর্যায়ে দুই, পরিবেশক পর্যায়ে তিন এবং খুচরায় ছয় টাকা ধরা হয়। বোতলজাতকরণে লিটারে খরচ হিসাব করা হয় ১৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারে ৫০ টাকা।

বৈঠকে মিল মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কয়েক দিন ধরে সয়াবিন তেল আমদানি করতে তাঁরা প্রতি টন এক হাজার ১৯০ ডলারে ঋণপত্র খুলছেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি যখন দাম নির্ধারণ করা হয় তখন এটা ছিল এক হাজার ৯০ ডলারের মধ্যে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তে থাকায় দেশের বাজারেও তা সমন্বয় করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বোতলজাতকরণের খরচ পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। কেননা ২০১১ সালের পর আর এটি করা হয়নি।

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলীম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। এখন জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটি তা বিবেচনা করবে।’

ট্যারিফ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘মার্চে ভোজ্য তেলের মৌসুম শুরু হবে। সে হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম কমতে পারে। অবশ্য চীনসহ কয়েকটি দেশের অতিরিক্ত আমদানির কারণে এবার মৌসুমের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। দাম বেঁধে দেওয়ার পর বেশ কয়েক দিন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে এক হাজার ২০০ ডলারে উঠে গিয়েছিল। এখন আবার কিছুটা কমছে। ফলে তেলের মূল্য পুনর্মূল্যায়নে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। আগামী সপ্তাহে আরো একবার বসব আমরা। এই মুহূর্তে শুধু দামের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করছি আমরা। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো রমজানে যাতে তেলের বাজার অস্থিতিশীল না হয়। এ জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের দাম, আমদানিকারকদের সুবিধা ও ভোক্তার লাভ—সব দিক বিবেচনায় নিয়ে দামের বিষয়টি মূল্যায়ন করা হবে।’

ট্যারিফ কশিনের সহকারী প্রধান মাহমুদুল হাসান (অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও মনিটরিং সেল) বলেন, ‘আমদানির যে ধারা আমরা দেখছি তাতে রমজানে ভোজ্য তেলের সরবরাহে তেমন সমস্যা হবে না। ব্যবসায়ীরা লোকসানের শঙ্কায় না থাকলে আমদানিও স্বাভাবিক থাকবে।’

বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের হেড অব ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাহিদামতো আমদানি করছি। সরবরাহে তেমন সমস্যা হবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরে তিন লাখ দুই হাজার টন ভোজ্য তেল আমদানির ক্রয়াদেশ দেন ব্যবসায়ীরা। জানুয়ারিতে তা ছিল দুই লাখ ৭১ হাজার টন। ডিসেম্বরে প্রায় ১২৩ মিলিয়ন ডলারের তেলবীজও আমদানি করা হয়। দেশে গড়ে দুই লাখ টনের নিচে তেলের চাহিদা থাকলেও রোজায় তা বেড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টনে দাঁড়ায়।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/03/04/1010618