৩ মার্চ ২০২১, বুধবার, ১০:২৪

চালের দাম আরো বাড়লো

ঢাকার বাজারে চালের দাম আরো বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় নাজিরশাইল ও মিনিকেট দুই ধরনের চিকন চালের দামই বেড়েছে। গত সপ্তাহে চাল আমদানি ও বাজারদর নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পর নতুন করে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। যে চালের দাম ছিল ৬৪ টাকা কেজি, সেই চাল ৬৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা কেজি। গতকাল সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। এদিকে আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের আমদানি কম হওয়ার কারণে বাজারে সরবরাহও কম। স্বাভাবিক হলেই চালের দাম কমবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

জানা গেছে, চাল সংকট সমাধানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ৪ লাখ টন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১০ লাখ ১৮ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়ার কথা ছিল। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এসব চাল দেশে প্রবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে দুই মাসে মাত্র ৬ ভাগের একভাগ চাল আমদানি হয়েছে। আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতিমধ্যে আড়াই লাখ টন আমদানির অনুমোদন বাতিল করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আশানুরূপ আমদানি না হওয়ায় বাজারে চালের দামে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সরু চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যে সরু চালের মধ্যে মিনিকেট এখন ৬২ থেকে ৬৬ টাকা ও নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৭০ টাকা। মৌসুমের শেষ সময়ে গত দু’সপ্তাহ ধরে নাজিরশাইল চাল কেজিতে ৪ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৬ ও মোটা চাল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ।

কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী আবদুল মতিন বলেন, চালের মোকামেই বাড়তি দাম। তাই খুচরা বাজারেও চালের দাম বাড়তি। মোকামে প্রতি কেজিতে ২০-৩০ পয়সা লাভে চাল বিক্রি করছেন।

বাজার করতে আসা রামপুরার বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে লাগামহীনভাবে বাড়ছে চালের দাম। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে মানুষ ভাত খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষদের চরম কষ্ট হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত ২২শে ফেব্রুয়ারির তথ্য অনুযায়ী ২ লাখ ৪৮ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়েছে ৮৩ হাজার টন এবং বেসরকরি পর্যায়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার টন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সরকারি গুদামে ৬ লাখ ৫৬ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এরমধ্যে ৫ লাখ ৪৩ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ১৩ হাজার টন গম রয়েছে।

চালের পাশাপাশি ভোজ্যতেল সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। কিছু দোকানে নির্ধারিত দরে খোলা তেল বিক্রি হলেও বেশিরভাগ দোকানে বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারিত দরে বিক্রিতে ফিরছেন ব্যবসায়ীরা। এখন সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার খুচরায় সর্বোচ্চ খোলা সয়াবিন ১১৫ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন ১৩৫ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন খুচরা ৬৩০ টাকা। তা ছাড়া খোলা পাম সুপার প্রতি লিটার খুচরায় সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা নির্ধারিত হয়।

রাজধানীর বাজারে বেশিরভাগ দোকানে এখন খোলা সয়াবিন ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বোলতজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৩৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর ৫ লিটার বোতল ৫৯০ থেকে ৬৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খোলা পাম তেলের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় হেরফের নেই। প্রতি লিটার খোলা পাম সুপার তেল ১০৬ থেকে ১০৮ টাকা ও পাম তেল ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্যেও এখন খোলা তেল নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাম সুপার তেল লিটারে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে। আর মাসখানেক আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১২৫-১৩০ টাকা। এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। টিসিবির তথ্যে, এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ বা কেজিপ্রতি ২০ টাকা। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে দেশি মুরগি এখন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা হয়েছে।

মধুবাগ বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী ফয়সাল ইসলাম বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়েছে গেছে। বিশেষ করে এখন পিকনিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ব্যাপক হারে বেড়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এ কারণেই দাম বেড়েছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=264742