২ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:০৭

একদিকে বিপুল মূলধন ঘাটতি : অন্যদিকে উদ্বৃত্ত তহবিল বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না

ব্যাংক খাতে সঙ্কট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। এক দিকে বড় বড় ব্যাংকের বিপুল মূলধন ঘাটতি অন্য দিকে উদ্বৃত্ত তহবিল বিনিয়োগ করতে পারছে না বলে অনেক ব্যাংকের অলস তহবিল বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভর্তুকি দেয়া প্রণোদনার অর্থ বিনিয়োগেও অনেক ব্যাংক সাড়া দিচ্ছে না। আর এক বছর স্থগিত রাখার পর খেলাপি ঋণ হিসাব করতে গেলে অনিয়মিত ঋণের উল্লম্ফন ঘটার আশঙ্কা অনেক ব্যাংকের। ফলে নানা ধরনের অজানা আতঙ্ক বিনিয়োগ কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। একধরনের স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে খেলাপি ঋণ আদায়ে উচ্চতর আদালতের কড়া হুঁশিয়ারি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রের তথ্যে দেখা যায়, ঋণ আদায়ের শিথিলতায় ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ কমলেও বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১০ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাতটি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে আলোচ্য ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জনগণের অর্থে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় মূলধনের জোগান দেয়ার পরেও সরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতির চক্র থেকে বের হতে পারছে না। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির কারণে সামগ্রিক ঝুঁকির মুখে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। অপর দিকে ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা দেখা দেয়ায় ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমলেও কিছু ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিপরীতে আমানতকারীদের আমানত সুরক্ষা করতে বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। বিশাল অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতিতে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে পুরো ব্যাংকিং খাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ায় ও খেলাপি ঋণের আধিক্যের কারণে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে গেছে। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় এর বিপরীতে কাক্সিক্ষত হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি এ ১০টি ব্যাংক।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি জনতা ব্যাংকের। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, আগের বছরে যা ছিল দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের তিন হাজার ৬৩ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের তিন হাজার দুই কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের এক হাজার ৪৯২ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ৬৭১ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি হয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এক হাজার ৩৫ কোটি টাকা, নতুন প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংকের ৩০৯ কোটি টাকা এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের এক হাজার ৬২২ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি হয়েছে। অপর দিকে সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১০ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এক হাজার ৪৫৮ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি হয়েছে গত ডিসেম্বর শেষে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ডিসেম্বর শেষে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণের কথা থাকলেও ব্যাংকগুলো তা অর্জন করতে পারেনি। বরং এ সময়ে ১০ ব্যাংকের বিশাল মূলধন ঘাটতির কারণে ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিক মূলধন সংরক্ষণের হার আলোচ্য সময়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

জানা গেছে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বছরের পর বছর কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি থাকতে পারবে না। আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত মেনে নেবে। দুই বছরের পর মূলধন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংককে হয় মার্জার অর্থাৎ অন্য কোনো ব্যাংকের সাথে একীভূত হয়ে যেতে হবে, অথবা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হলে, তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কিভাবে মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে তার পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে তা মনিটরিং করবে। এভাবে দুই বছর পর আইন অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বছরের পর বছর ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দেখা দিলেও এর বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বছরের পর বছর মূলধন ঘাটতি ও ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করা যেন ‘কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদবাক্যের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ মূলধন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকিং খাতের রেটিং খারাপ হবে। ফলে পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। ফলে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হবে। এতে ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাবে। পরিস্থিতি উন্নতি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্কতার সাথে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, অনেক ব্যাংকে তারল্যের জোয়ার বইলেও ঋণের চাহিদা নেই। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, নতুন বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদেরকে গুটিয়ে রেখেছে। প্রণোদনার অর্থ বিতরণের পরও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে কাক্সিক্ষত মাত্রার প্রায় অর্ধেকে। ব্যাংক খাত থেকে ঘোষণা অনুযায়ী ঋণ নিচ্ছে না সরকারও। এ পরিস্থিতিতে অনেক ব্যাংকে অলস তারল্যে জোয়ারে ভাসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষে দেশের ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল দুই লাখ চার হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৯৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। এই সময়ে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৮৩ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। আর ২২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে বিদেশী ব্যাংকগুলোতে।
শীর্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপকরা বলছেন, অতিরিক্ত তারল্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে অন্তত ৩০টি বেসরকারি ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বৃত্ত তারল্য খাটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ব্যাংক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা আরো বলছেন, তারা এত দিন অতিরিক্ত তারল্যের অর্থ বিনিয়োগ করতেন সরকারি বিল-বন্ড বা কলমানি বাজারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে ট্রেজারি বিলের সুদহার নেমে এসেছে ১ শতাংশের নিচে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ইল্ডরেট ছিল মাত্র ৪৫ পয়সা। যদিও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৯১ দিন মেয়াদি বিলের ইল্ডরেট ৬ শতাংশের বেশি ছিল। ট্রেজারি বিলের মতোই সুদহার কমেছে বন্ডেও। ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আর চাহিদা না থাকায় কলমানি বাজারের সুদহার নেমেছে ১ শতাংশে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ ব্যাংকেরই ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা নেমে এসেছে।

প্রভিশন ঘাটতিতে ঝুঁকি : ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর অন্যতম হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। কোনো ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে ঋণের শ্রেণিভেদে ২০ শতাংশ থেকে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। অর্থাৎ ব্যাংকটি যে পরিমাণ আয় করে তা দিয়ে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারায় ঘাটতি দেখা দেয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংকের রিটেইন আর্নিং কমে যায়। এভাবে পরবর্তীতে সমন্বয় করতে না পারলে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। আর সেই সাথে ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয়ও (ইপিএস) কমে যায়। আয় কমে গেলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

সুদ আয় স্থগিত হওয়ায় কমছে আয় : ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার সুদ স্থগিত করা হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের মুনাফায়। আর মুনাফা কমে যাওয়ায় শেয়ারহোল্ডাররা বছর শেষে প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে এক দিকে ব্যাংকগুলোর মুনাফার পরিমাণ কমে যাচ্ছে পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডাররাও বছর শেষে প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি টাকা আটকে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর নিট আয় কমে গেছে। শুধু ব্যাংকগুলোর নিট লোকসানই বাড়েনি, ডজনখানেক ব্যাংকের ইতোমধ্যে মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৩১ ডিসেম্বর শেষে ৮৮ হাজার ২৮২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৭৬ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। এ হিসাবে ১০০ টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৯৩ টাকাই মন্দ ঋণ, যা আদায় অযোগ্য বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এ মন্দ ঋণের বিপরীতে সুদ আয় স্থগিত করে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী মন্দ ঋণের বিপরীতে ধার্যকৃত সুদ ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে আলাদা করে রাখা হয়। অন্য দিকে এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে টাকা এনে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। জানা গেছে, মন্দ ঋণ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ হিসাবে ধরা হয়। আর এ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর জরিমানা বা তিরস্কার গুণতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিরস্কার বা জরিমানার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যাংকের আয় খাত থেকে টাকা এনে প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করে থাকে।

পাশাপাশি মন্দ ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ ব্যাংকগুলোর আয় খাতে স্থানান্তর করা হয় না। অর্জিত সুদ ব্যাংকের আলাদা হিসেবে স্থগিত করে রাখা হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাতের ৭৬ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার সুদ আয় খাতে আনা যায়নি। এটি ব্যাংকের আলাদা হিসেবে রাখা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

খেলাপি ঋণের অপেক্ষায় প্রায় অর্ধলাখ কোটি টাকা : ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা থাকায় বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর শেষে আগের বছরের চেয়ে খেলাপি ঋণ কমে গেলেও প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ খেলাপি ঋণের অপেক্ষায় রয়েছে। এ অর্থ খেলাপি ঋণের ঘরে পৌঁছানোর আগের ধাপে অবস্থান করছে। আগামী জুনের মধ্যে আদায় না হলেই সংশ্লিষ্ট ঋণ খেলাপি ঋণের নিম্নস্তর অর্থাৎ নিম্নমানের (এসএস) খেলাপি ঋণের ঘরে চলে যাবে। এতে আগামী জুন শেষে খেলাপি ঋণের সামগ্রিক চিত্র বদলে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দেখানো হয়েছে ৮৮ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণ শ্রেণীকরণের স্থগিত হওয়ার সময় এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে। এখন ওই সব ঋণের কিস্তি পরিশোধ না হলে তা ধীরে ধীরে অর্থাৎ ৬ মাসের মধ্যেই তা খেলাপি ঋণ পরিণত হবে। যেমনÑ কোনো ঋণের কিস্তি ৩ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। জানুয়ারি থেকে ওই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না হলে এবং তা তিন মাস অতিবাহিত হলেই আগামী মার্চের পর থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ঋণ খেলাপিতে পরিণত হবে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আগামী মার্চের পর থেকে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ব্যাংকের সামনে বের হয়ে আসবে। খেলাপি ঋণ এক লাফে জাম করতে থাকলে ব্যাংকগুলোর বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করা কষ্ট কর হয়ে পড়বে। এ নিয়ে অনেক ব্যাংকই চিন্তিত রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/566187/