২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ৯:৩৩

যশোর কারাগার

কারারক্ষী নিয়োগে ভয়াবহ জালিয়াতি

প্রকৃত নাম কামাল হোসেন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনয়নের উজ্জলপুর গ্রামে বাড়ি তার। এই গ্রামের মতিয়ার রহমানের চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সে। লেখাপড়ার দৌড় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু গত সাত বছর মো. আরমান হোসেন সেজে কারারক্ষী হিসাবে চাকরি করছেন এই ব্যক্তি। বর্তমান কর্মস্থল কুষ্টিয়া জেলা কারাগার। এমন আরও অসংখ্য ব্যক্তি রয়েছে যারা তথ্য গোপন করে চাকরি করছেন। এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী মাফিয়া চক্র।

যশোর জেলা কারাগারকেন্দ্রিক শক্তিশালী চক্রটি জালিয়াতির জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে কারারক্ষী নিয়োগ দিয়ে আসছে। এরা একজনের নামে অন্যকে চাকরি দিচ্ছে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের ৪২৭১৯ নং কারারক্ষী হিসাবে কর্মরত আছে আরমান হোসেন। তার বাবার নাম সিদ্দিকুর রহমান। ঠিকানা শংকুরপুর বাসটার্মিনাল, চাচড়া, যশোর। তবে তার প্রকৃত নাম কামাল হোসেন। বাবার নাম মতিয়ার রহমান। চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সে। ঝিনাইদহ জেলা মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের উজ্জলপুর গ্রামে তার বাড়ি।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, কামাল হোসেন পেশায় একজন কৃষক। মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের উজ্জলপুর গ্রামের ২৫৩ নাম্বার ভোটার সে। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ৫৫২২৩২৯৩৫৭। পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ আরমান হোসেন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট থেকে কারারক্ষী হিসাবে চাকরি করে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৭ বছরে কেউ তার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারেনি।

কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক তায়েছ উদ্দীন মিয়া ছবি দেখে জানান, আরমান হোসেনই প্রকৃতপক্ষে কামাল হোসেন। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে বদলি হয়ে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে যোগদান করে সে। দুই সন্তান স্ত্রীসহ চারজনের সরকারি রেশন দেওয়া হয় তাকে। সরকারি খাতায় সন্তানদের শিশু হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তার স্ত্রী মহেশপুর উপজেলার উজ্জলপুর গ্রামের মজিবর রহমানের মেয়ে রুমানা বেগম। চাকরির আগেই বিয়ে করে তারা। তিনি আরও জানান, জালিয়াতির বিষয়টি টের পেয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে কঠোর নজরে রাখা হয়েছে তাকে। প্রকৃত আরমান হোসেন জীবিত না মৃত তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

টেলিফোনে স্ত্রী রুমানা বেগম জানান, চাকরির শুরুতেই কামাল হোসেন কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে যোগ দেয়। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে রাতুল মহেশপুর উপজেলা শহরের কাছে বিয়ে করেছে। মেয়ে জিনিয়া (১৩) স্কুলে পড়ে।

সুত্র জানায়, ২০০৫ সালের দিকে জেলপুলিশ পদবি পরিবর্তন করে কারারক্ষী করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিবাহিতদের আবেদন করার সুযোগই নেই। কিন্তু কামাল হোসেন বিবাহিত এবং এক ছেলের বাবা হয়েও চাকরি পেয়েছে। কারাগারকেন্দ্রিক নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের হাত এত লম্বা যে, আরমান হোসেনের কাগজপত্র দিয়ে কামাল হোসেনকে চাকরি দিয়েছে।

প্রথম দিকে কথোপকথনের সময় কামাল হোসেন (আরমান হোসেন) জালিয়াতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শেষে নিজেই ঘটনা স্বীকার করে এবং ঘটনাটি চেপে যাওয়ার জন্য আবদার জানায়। জাতীয় পরিচয়পত্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালের মে মাসের ৪ তারিখ জন্ম তার। এখানেও ঘাপলা ধরা পড়েছে। স্ত্রী রুমানার দেওয়া তথ্যমতে, বড় ছেলে রাতুল এক বছর আগে বিয়ে করেছে। বাপ-বেটার বিয়ের বয়সের পার্থক্য রীতিমতো হাস্যকর।

সূত্র জানায়, নাম-পরিচয় গোপন করে বছরের পর বছর চাকরি করছেন চক্রটির একাধিক সদস্য। যশোর জেলা কারাগারকেন্দ্রিক চিহ্নিত চক্রটি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। শুধু কারারক্ষী নয়, পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তারা। চক্রটি নিয়োগ বাণিজ্য করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/396918