২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ২:০৭

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

মে মাসে নয় এখনই পরীক্ষা চান শিক্ষার্থীরা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সিলেট, নেত্রকোনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে বিক্ষোভ হয়েছে। আগামী রবিবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীতে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল। তবে তাঁদের বিকেলে ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানার পুলিশ। শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই শিক্ষার্থীদের তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের এবং ২০১৮ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রফেশনাল কোর্সের পরীক্ষা চলছিল। হঠাৎ গত সোমবার এসব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা মার্চের মধ্যেই পরীক্ষাগুলো শেষ করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থগিত পরীক্ষা আগামী ২৪ মে থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিতে অনড়।

রাজধানীর শাহবাগ থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ১০ শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যায় শাহবাগ থানা পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেন। দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুলিশের ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ফের ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের উল্টো দিকের রাস্তা ও ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখান থেকে আরো অন্তত পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে এসেছেন। কিন্তু পুলিশ দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। ছাত্রীদের গায়েও হাত তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের কাছে দাবি মানতে তিন দিনের আলটিমেটামের কথা জানান। তাঁদের দাবি দুটি। চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিন প্রকাশ এবং আন্দোলন থেকে পুলিশের হাতে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের আজকের (গতকালের) মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি। আগামী রবিবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। বিকেলে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

মোতাহার হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী রবিবার সারা দেশে আন্দোলন শুরু হবে। এটি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়; আমাদের জীবনের ব্যাপার। এমনিতেই আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। শিক্ষা নিয়ে এমন তালবাহানার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না।’

এর আগের দিন বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করে বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখায়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের পরীক্ষা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়। একই দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করে দাবি জানান।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষা ফের চালু করার দাবিতে সিলেটে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষা দ্রুত সময়ের মধ্যে নেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে গতকাল দুপুরে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এতে এক সাংবাদিকসহ অন্তত সাতজন আহত হন। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সাব-ইন্সপেক্টর সাদেকুজ্জামান ভুইয়া ও কনস্টেবল ওমর ফারুক।

বরিশালে গতকাল সকাল ১০টা থেকে ব্রজমোহন কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। চার ঘণ্টা পর কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়ার আশ্বাসে সড়ক কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পরীক্ষা স্থগিতাদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধন করেন তাঁরা। পরে বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সোমবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা চলে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। হল খোলা না থাকায় চট্টগ্রাম শহরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ গতকাল সকালে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা।

পরীক্ষা স্থগিতের ব্যাপারে চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা পরীক্ষা নিতে রাজি নই।’

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নেত্রকোনা প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অফিস]

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2021/02/26/1008672