২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:০৪

ভেজালে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ক্রেতা

অভিজাত সুপারশপগুলো নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করায় জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ ছাড়া পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে আছে ঢিলেমি। কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতেও অহেতুক অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, ছলচাতুরীর আড়ালে বাড়তি মুনাফা আদায় করাই সুপারশপগুলোর একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতেও শেলফ ভাড়া নেওয়া হয়। এর সঙ্গে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্যও ভাড়া আদায় করা হয়। এ ছাড়া সুপারশপে থাকা নিজস্ব টিভিতে থার্ড পার্টি দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রদানে বাধ্য করা হচ্ছে। পণ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ ফি নামেও অহেতুক বাড়তি অর্থ আদায় করা হয়। আবার নতুন পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে একটি পণ্যের সঙ্গে আরেকটি ফ্রি দেওয়ার নামেও অধিক মুনাফা করছে সুপারশপগুলো। এক ছাদের নিচে সবকিছু। মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূল থেকে শুরু করে কী নেই? আছে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র। ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য, ঝাড়ু বা হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-পেয়ালা, পোশাক-পরিচ্ছদ, স্টেশনারি জিনিসপত্র যা-ই হোক না কেন। শুধু উচ্চবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তরাও আসছে সুপারশপে কেনাকাটা করতে। তবে সন্তুষ্টির পরিবর্তে বেশির ভাগ ক্রেতার হতাশার অভিজ্ঞতাই বেশি। সীমিত আয়ের মানুষদের মাথাব্যথার কারণ সুপারশপগুলোর পণ্যের অতিরিক্ত দাম। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ভেজালবিরোধী অভিযানে দেখা গেছে, মানুষ সুপারশপের চকচকে বিশাল ভবনে ঢুকে ‘মানসম্মত পণ্য’ মনে করে অন্ধ বিশ্বাসে যা কিনছে তা আসলেই অনেক ক্ষেত্রে ভেজালযুক্ত কিংবা নিম্নমানের। এসব কারণে আস্থা হারাচ্ছে এ শপগুলো। আর মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে অনেক সুপারশপকে। এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নকল পণ্য ও ভেজালবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। এ নিয়ে সুপারশপগুলোতে নির্দেশনাও দিয়েছি। এককথায় বলতে পারি নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির বিরুদ্ধে অ্যাকশনে রয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তবে বাংলাদেশ কনজ্যুমার রাইট সোসাইটির পরিচালক ফিরোজ আলম সুমন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুপারশপগুলোর অধিকাংশ পণ্য ভেজাল ও নিম্নমানের। পণ্যের ভুয়া উৎপাদন তারিখ লিখে দেখানো হয়। এমনটা ভেজাল সুপারশপগুলোর কাছ থেকে কেউ আশা করে না। ভোক্তাদের অভিযোগ রয়েছে, সুপারশপে পণ্যের দাম বেশি নেওয়া হয়। টাটকা, কীটনাশকমুক্ত শাক-সবজির কথা বলা হলেও অনেক সুপারশপেই সাধারণ মানের শাক-সবজি বিক্রি করা হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্যের কম মূল্যের কথা প্রচার করা হয়, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য তালিকায় লিখে সেখান থেকে কমিশন দেওয়া হলেও বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্য আদায় করা হয়। আবার কোনো কোনো পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতারা কিনতে এলেই দেওয়া হয় জটিল শর্ত। রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি সুপারশপের ক্রেতা সুবর্ণা রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানে মানসম্মত পণ্য বিক্রি করা হয়, এমন বিশ্বাস থেকেই আসি। তাছাড়া চাকরিজীবী পরিবার, খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। এক জায়গাতেই সবকিছু পাওয়া যায় বলে মূলত এখানে আসা হয়। কিন্তু দাম বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। আবার ভালো মনে করে পণ্য কিনে বাসায় গিয়ে দেখা গেছে তা নিম্নমানের। এটা ক্রেতা হিসেবে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ। ধানমন্ডির একটি সুপারশপের ক্রেতা শানে বিনতে সিফাত গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাছ কিনে বাসায় গিয়ে দেখি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আমরা পণ্যের গায়ে লেখা মূল্য দেখে কিনি। একসঙ্গে অনেক পণ্য কেনায় কোনটার কোন দাম রাখছে সবসময় লক্ষ্য করা হয় না। বাসায় গিয়ে যখন মেলানোর চেষ্টা করি তখন অনেকবারই বেশি মূল্য নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এটা ভুল নয়, প্রতারণা। মগবাজারের একটি সুপারশপের ক্রেতা আনোয়ার হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেনার পর বাসায় গিয়ে দেখেছি অনেক পণ্যের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে।

https://www.bd-pratidin.com/first-page/2021/02/25/622128