২৭ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ২:২৯

চালের বাজারে অস্থিরতা

দেশ বিদেশ

কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে সেই সুফল পাচ্ছে না ভোক্তাসাধারণ। গত কয়েক মাসে প্রতিকেজিতে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৮-১০ টাকা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাইকারিতে চালের দাম বাড়তে থাকায় খুচরা বাজারে এর অতিরিক্ত প্রভাব পড়েছে। শহরে সবচেয়ে প্রচলিত মিনিকেট চাল খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৮ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের এই খুচরা মূল্য সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাদের মতে, পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজার ব্যবস্থাপনায় অনিয়মিত বাজার মনিটরিং, সিন্ডিকেট ও কারসাজির কারণে ভোক্তারা পণ্যমূল্যের ন্যায্য সুফল পাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় দিন দিন ভোগ্যপণ্যের বাজারে সংকট তৈরি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে যেসব আইন-কানুন রয়েছে তাও কার্যকর হচ্ছে না। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসাবে গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এছাড়া রাজধানীর বাজার ভেদে বিভিন্ন দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেসব জিনিসের দাম সবেচেয়ে বেশি বেড়েছে তা হলো মোটা চাল। পাইজম, স্বর্ণা, লতা ও ইরি জাতীয় প্রতিকেজি মোটা চাল এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। অথচ এক বছর আগে এসব চাল ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে বাজার বিশ্লেষণে টিসিবি’র হিসাবের কয়েকগুণ বেশি দরে চাল বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতারা জানান। তারা বলেন, বাজারে কোনো নজরদারি নেই। গত কয়েক মাসের আমদানি পরিস্থিতি ও এলসি খোলার পরিসংখ্যান বলছে দেশে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, তিন-চার মাস ধরে মোটা চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আর এ মোটা চালের ভোক্তা দেশের বৃহত্তর সাধারণ জনগোষ্ঠী। সরকারি গুদাম, মোকাম ও পাইকারি বাজারে বিপুল পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে মোটা চালের দাম কোনোভাবেই বাড়ার কথা নয়। গুটিকয়েক মিল মালিকের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে- এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, প্রতিকেজি সরু চাল ৪৬-৫৬, মাঝারি মানের ৪৪-৪৬ এবং মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা। গত বছরের পুরো সময় দেশের মানুষকে চড়া দামেই চাল কিনে খেতে হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। মাঝে আমন ধান ওঠার সময় চালের দাম কিছুটা কমলেও আবারও বেড়েছে। এখন একেবারে চালকল বা খামার পর্যায়ে থেকে শুরু করে পাইকারি-খুচরা সব পর্যায়েই বেড়েছে চালের দাম। মিল পর্যায়ে বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ১০০ টাকা, আর খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত। এভাবে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে চালের দাম বাড়ার সঠিক কারণ কেউ বলতে পারছেন না।

খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল কলকাঠি নাড়েন চালকল মালিকরা। কারণ, কৃষকের ঘর থেকে ধান ফড়িয়াদের মাধ্যমে যায় মিল মালিকদের হাতে। পরে মিল মালিকরা সেগুলো গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। এতে ধানের দাম বেড়ে যায়। আর ধানের দাম বাড়ার পর তারা চালের দামও বাড়ায়। মিল পর্যায়ে দাম বাড়ার পর পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে আসতে যত হাত বদল হয় ততবার দাম বাড়ে। মূলত এভাবেই চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
কাওরান বাজারের চাল বিক্রেতা জলিল জানান, পাইকারিতে বেশি হওয়ার কারণে খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে নিম্নমানের নাজিরশাইল চালের বস্তা ২৪৫০ টাকার বদলে ২৫৫০ টাকা হয়েছে। আর খুচরা বাজারে ৫০ টাকার নিম্নমানের নাজিরশাইল ৫৩ টাকা হয়েছে। এছাড়া খুচরা বাজারে স্বর্ণা চাল ৪৩-৪৪ টাকা, পারিজা চাল ৪৪-৪৫ টাকা, উন্নতমানের মিনিকেট ৫৪-৫৬ টাকা, বিআর আটাশ চাল ৪২-৪৪ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল চাল ৫৫-৫৬ টাকা, বাসমতি চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ রাজধানীর পাইকারি বাজারে গত এক মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি গড়ে চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা।