২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১:১৫

মশায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী

রাজধানীতে মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সিটি করপোরেশন থেকে ফগিং কার্যক্রম বাড়ালেও তা কোনো কাজে আসছে না। ফগার মেশিনে শুধু উচ্চ শব্দই হচ্ছে কিন্তু মশা আশানুরূপ মরছে না। বরং মশার উৎপাত আগের চেয়েও বেশি বেড়েছে। সন্ধ্যা হলেই ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। দিনের বেলাও বাসা-অফিস সর্বত্র মশার অত্যাচার চলছে।

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শেষ হয়ে গরম পড়তে শুরু করেছে। রাতে হালকা শীত থাকলেও দিনের বেলা গরম বেড়েছে। আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের সময়ে রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়েছে ব্যাপকহারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় খাল, নালা রয়েছে সেসব এলাকায় মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বর্তমানে শ্যামপুর, মাণ্ডা, জিরানিসহ বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করছে। এসব খালের আশপাশের এলাকায় মশার উপদ্রব ব্যাপক বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিরানি খালের কদমতলা অংশে কয়েক দিন ধরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছে ডিএসসিসি। এ জন্য ওই এলাকায় মশার অত্যাচার বেড়েছে। এলাকার বাসিন্দা শিমুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, সন্ধ্যা হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘরে ঢোকে। দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও লাভ হয় না। মশা এত বেশি যে অ্যারোসল, ইলেকট্রিক ব্যাট, মশারি ব্যবহার করেও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের লোকজন কয়েক দিন পরপর মেশিন দিয়ে উচ্চ শব্দে ধোঁয়া দিয়ে যায়। আগের থেকে বেশি ওষুধ দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাতে মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বরং আরো বেড়ে গেছে। বিষয়টি সিটি করপোরেশনের দেখা উচিত।

মধুবাগ এলাকার গৃহবধূ সামিনা হক বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই বাসায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। রাতের বেলা মশারি তো টানাতে হয়ই দিনের বেলাও শিশুদের জন্য মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, বাসাবো, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, মীরহাজিরবাগসহ রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকাতেই মশার উপদ্রব রয়েছে।

জানা যায়, মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই। নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগও করছে তারা। এ ছাড়া নতুন নতুন উন্নত যন্ত্রপাতির সংযোজনও করা হয়েছে। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গত শনিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গুলশানের ফজলে রাব্বী পার্ক থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এদিন মোট ছয় হাজার ৬৯৫টি নালা-নর্দমা জলাশয়, নির্মাণাধীন ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩০টিতে মশার লার্ভা পায় ডিএনসিসির টিম। লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৯টি মামলায় দুই লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় মোট চার হাজার ৫৩৯টি স্থাপনায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়।

সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান উদ্বোধনকালে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সেলিম রেজা বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির মেয়র-কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগরবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নগরজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ডিএনসিসি মেয়র ওয়াদাবদ্ধ। ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে এ অভিযান পরিচালিত হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলররা এ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কার্যকারিতা নিশ্চিত হয়েই মশার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। খালগুলো মশার প্রজননস্থল। ডিএনসিসির উদ্যোগে খালগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। ডিএনসিসি মেয়রের একটিই নির্দেশনা, যেকোনো মূল্যে মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/564410