২৭ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ২:২১

শ্রম অধিকার প্রশ্নে ইইউ জিএসপি এবার হুমকিতে!

বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন করতে বাধা দেওয়া, শ্রমিকদের ভয়-ভীতি এবং নানা রকম হয়রানির অভিযোগ ইইউর কাছে দিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য এবং ইউরোপভিত্তিক শ্রমিক সংস্থাগুলো। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে আজ সোমবার ঢাকায় আসছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চার সদস্যের এক প্রতিনিধিদল।


গত তিন মাসে ব্রাসেলস থেকে ঢাকায় পাঠানো কয়েক দফা বার্তায় বলা হয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে শ্রম অধিকার সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় জুনে পরিস্থিতি দেখতে আরেকটি মিশন পাঠাবে ইইউ। ওই মিশন ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) পাওয়ার বিষয়ে তদন্ত করবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চার সদস্য লিন্ডা ম্যাকাভেন, আর্নে লেইতজ্, নোবার্ট নুয়েসার ও অ্যাগনেস জনজেরিয়ুস আজ সোমবার ঢাকায় আসছেন। তিন দিনের এ সফরের সময় তাঁদের মূল আলোচনা হবে ট্রেড ইউনিয়ন, বিজিএমইএ, অ্যাকর্ড, আইএলওর প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তাঁরা শ্রম অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, শ্রমসচিব মিকাইল শিপার ও পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে কথা বলবেন। এ ছাড়া তাঁরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও আলোচনা করবেন। এবারের সফরের সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখবেন।
ব্রাসেলসে কূটনীতিক সূত্রে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গত নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শ্রম অধিকার সুরক্ষা ও দর-কষাকষির সুযোগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কখন কী করবে, তার একটি কর্মপরিকল্পনা আগামী মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের বৈঠক ও জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শ্রম সংস্থার (আইএলও)


সম্মেলনে তুলে ধরতে হবে। তা না হলে ইইউর বাজারে জিএসপি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ব্রাসেলসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সম্প্রতি শ্রমসচিব মিকাইল শিপারকে পাঠানো একটি চিঠিতে লিখেছেন, বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে ইইউ বেশ অসন্তুষ্ট। ওই চিঠিতে ইইউর বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালক স্যান্ড্রা গ্যালিনার সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনেছেন রাষ্ট্রদূত। ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে স্যান্ড্রা গ্যালিনা আইএলওর সর্বশেষ সম্মেলেনে বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষ অনুচ্ছেদ যুক্ত করার প্রসঙ্গটি টেনেছেন। গত জুনে যুক্ত হওয়া ওই অনুচ্ছেদে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা, ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্যের তদন্ত করা এবং ইউনিয়নের নিবন্ধন স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে করতে বলা হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধার বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। এ জন্য মার্চে বাংলাদেশে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের সফরের কথা জানান স্যান্ড্রা গ্যালিনা।


জানতে চাইলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গত রাতে বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর আমরা যেসব জায়গায় উন্নতি করেছি, সেসব প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরব।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি না, জিএসপি স্থগিতের মতো কোনো সিদ্ধান্ত ইইউ নেবে। সে রকম কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1121056