২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:০৯

গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগী

শহর অঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেও ব্যাপকহারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামের মানুষজন এখন শহর অঞ্চলের মানুষের মতো প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের খাদ্যাভ্যাসেও আসছে পরিবর্তন। যা বাড়াচ্ছে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। অবস্থা উত্তরণের জন্য সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের মধ্যে যেখানে শহরে ১৪ শতাংশ নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সেখানে গ্রামে এই সংখ্যা ৮ শতাংশ। একইসঙ্গে এই বয়সসীমায় গ্রামে ১০ শতাংশ পুরুষ ডায়াবেটিসে ভুগলেও শহরে ১৩ শতাংশ পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত।

আশির দশকেও যেখানে গ্রামাঞ্চলে মোট ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র দুই শতাংশ, সেখানে গ্রামে আট শতাংশ নারী ও ১০ শতাংশ পুরুষের আক্রান্তের হার অনেক বেশি। প্রাথমিক পর্যায়েই এসব রোগীদের সেবার আওতায় আনার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে বলে অভিমত তাদের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের খাদ্যাভাসে ভাত কিংবা শর্করা নির্ভর খাওয়ার আধিক্য রয়েছে। এছাড়াও আজকাল গ্রামেও কিন্তু ফার্স্ট ফুড কিংবা জাঙ্ক ফুডের আধিক্য দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আজকাল শহুরে জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্রামাঞ্চলেও মানুষের জীবনাচরণ পাল্টাচ্ছে। আগে আমরা দেখতাম গ্রামের মানুষ নানাভাবে শারীরিক চর্চার মধ্যে থাকতো। কিন্তু শহরের মতো করেই গ্রাম অঞ্চলের মানুষেরাও আজকাল শারীরিক শ্রমের চেয়ে বিভিন্ন ডিভাইসের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। আজকাল গ্রামের মাঠেও কিন্তু সেভাবে খেলাধূলা হয় না; যেমনটা একসময় দেখা যেত। একদিকে মাঠে খেলাধূলার হার কমছে, আর অন্যদিকে বাড়ছে নানা রকম ডিভাইসের প্রতি আসক্তি। ফলে কমে যাচ্ছে শরীর চর্চার অভ্যাস। আর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শহরে দেখা যায় উচ্চবিত্তদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার বাড়ছে বেশকিছু কারণে। প্রথমত হচ্ছে- টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেশি হচ্ছে শহর এলাকায়। যাদের ওজন বেশি তাদের মাঝে এই প্রবণতা বেশি পাওয়া যায়। শহর অঞ্চলে দেখা যায় বাচ্চাদের খাদ্যাভাস অতটা স্বাস্থ্য সম্মত না। ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুডের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডেও দেখা যায় তারা এগুলো খাচ্ছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের বাচ্চাদের ঘরেও দেখা যাবে তাদের বাবা অথবা মা’র মাঝে কেউ না কেউ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আক্রান্ত। যদি পরিবারের রক্তের সম্পর্কের মাঝে কারও টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকে তবে দেখা যায় বাচ্চাদের মাঝেও সেটা ছড়িয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে যদি বাচ্চার ওজন বেশি থাকে ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে অভ্যস্থ হওয়ার পাশাপাশি খেলাধূলার পরিমাণ তথা শারীরিক চর্চার ঘাটতি থাকে তবে ডায়াবেটিস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ডা. একে আজাদ খান মনে করেন, অপর্যাপ্ত শরীর চর্চা এবং ফাস্টফুড নির্ভর খাদ্যাভ্যাসসহ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং জিনগত কারণসহ অনেকগুলো কারণ ডায়াবেটিস রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করি তাহলে আমরা ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারি। ২৫ শতাংশ রোগী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ৭১ লাখের বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়। সারাবিশ্বে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণা করছে। প্রতিবছরেই বাড়ছে একলাখ রোগী, যা আগামী ২০ বছরে এক কোটি ২০ লাখে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বছরে প্রায় এক লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৩ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যাচ্ছেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম ছিল। ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে এই সংখ্যা বাড়ার কারণে নবম স্থানে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের।

https://dailysangram.com/post/444669