২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১২:২৭

সুরক্ষার আগেই ভেঙে পড়ছে স্বাস্থ্যবিধি

দেশে করোনার টিকা নিচ্ছেন মানুষ। চেষ্টা করছেন করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ সুরক্ষার আগেই স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে ঘরের বাইরে আসছেন। মাস্ক পরছেন না। নিয়ম মেনে হাত ধোয়াও কমিয়ে দিয়েছেন। সামাজিক দূরত্বেরও বালাই নেই কোথাও কোথাও। গণপরিবহনে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ যাত্রী ব্যবহার করছেন না মাস্ক।

দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ করা হলেও তা মানছেন না কেউ। সরকারের নির্দেশনায় কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না গণপরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা। স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা ঝুঁকি নিয়ে বাস-মিনিবাসে চলাচল করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষদের। লঞ্চ পরিবহন ব্যবস্থায়ও একই চিত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললেও বিভিন্ন চাকরিদাতা সংস্থাগুলো চাকরি প্রার্থীদের পরীক্ষাও নিচ্ছেন দলে দলে। এমনকি সরকারি দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে। এতে ভিড় করছেন হাজারো প্রার্থী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নেয়ার পর পাশাপাশি মাস্ক পরা, ঘনঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো আগের মতোই মানতে হবে। সংক্রমণ কমে এসেছে তা স্বস্তির খবর। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। মৃত্যুর মিছিল উঠা-নামা করছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, দেশে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কম। আমরা স্বস্তির একটি পরিবেশে আছি। এর মানে এই নয় যে, সংক্রমণ কমে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণের হার কমার পরে পুনরায় তা বেড়েছে। তাই আমাদের ঢিলেমি দিলে চলবে না। টিকা নেয়ার পাশাপাশি মাস্ক পরা, ঘন ঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো আমাদের মানতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে টিকা মৃত্যু কমাবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা একটি অন্যতম পন্থা। একমাত্র পন্থা নয়। স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, সংক্রমণ কমলেও ঝুঁকিমুক্ত হইনি। ভবিষ্যতে ঝুঁকির আশঙ্কা আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন জনসমাবেশ হচ্ছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকতে এই জনসমাবেশ বন্ধের বিষয়ে সরকারের মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, মাস্ক ব্যবহার করতে যত বেশি নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, তত বেশি তা লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়ছে। সরকার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনেরা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ও গণমাধ্যমও মানুষের কাছে নানাভাবে বলছে। কিন্তু অবস্থাটা হচ্ছে এমন- কে শোনে, কার কথা? মাস্কের ব্যবহার নিয়ে সরকার এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারিও করেছে। ঢাকাসহ বেশকিছু স্থানে আদালত অভিযান চালিয়েছেন এবং জরিমানাও করছেন। এত কিছুর পরও মাস্ক ব্যবহারে অনীহা বরং বেড়েছে বলেই মনে হয়। রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে মানুষের চলাফেরা অনেকটাই করোনা পূর্বের স্বাভাবিক সময়ের মতোই। জনগণ কথা শুনছে না বা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, এটা বলে কিন্তু দায়িত্ব শেষ করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্বটা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের। এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোরতা ও আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ একান্তই কাম্য বলে তারা মনে করেন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=263415