২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১২:২৫

বেঁধে দেওয়া সময়ে দাবি পূরণ হয়নি

আবার উত্তপ্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবিতে শুক্রবার বিকাল ৫টায় মশাল মিছিল শেষে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এতে ৩ জেলার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ভোলা-পটুয়াখালী-বরগুনা ও কুয়াকাটাগামী যাত্রীরা। প্রশাসনের অনুরোধে দুই ঘণ্টা অবরোধ শেষে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে উঠে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আজ সকাল ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় পুলিশ রহস্যজনক কারণে এখনও কাউকে আটক করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হামলাকারীদের নামের তালিকা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা না করে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এটা অগ্রহণযোগ্য। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা মামলায় কারও নামোল্লেখ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার জন্য অবরোধ স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোনো সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়নি। লিখিত আকারে দোষীদের নাম দেয়া হয়েছিল প্রশাসনের হাতে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটি মামলায় যুক্ত করেনি। তিনি বলেন, মামলায় তারা ?উল্লেখ করেছেন, মারধর করে জখম করা হয়েছে। মূলত মারধর নয়, শিক্ষার্থীদের হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া ৪৬ শিক্ষার্থীর মানিব্যাগ, মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করেছে সন্ত্রাসীরা।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলার পর পুলিশ কাজ শুরু করে দিয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিআরটিসি বাস কন্ডাকটরের বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত ও অপর এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ২ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ শেষে আবাসস্থলে ফিরে যান। ওইদিন গভীর রাতে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন শিক্ষার্থীদের মেসগুলোতে হামলা চালায় পরিবহণ শ্রমিকরা। মারধর করা হয় শিক্ষার্থীদের। এ সময় ১১ শিক্ষার্থী আহত হন। পরে তাদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। যা উপাচার্যের আশ্বাসে হামলাকারীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকালে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবার মাঠে নেমেছেন।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টায় ইয়াং বাংলা ছাত্রফ্রন্ট নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে শহরের কলেজ রোড থেকে মৌন মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মৌন মিছিলের পরে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন হয়। এতে বক্তব্য দেন, সংগঠনের সভাপতি আসিফ আল ইমরান, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দাশ শুভ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন, ঝালকাঠি সরকারি কলেজের ছাত্র মেসকাত উন নূর, ইয়াসিন জনি ও সৈয়দ আলী হাসান।

পটুয়াখালী ও দক্ষিণ প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পটুয়াখালী প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। সকালে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন, সুমাইয়া আহমেদ শান্তা, আদনান হাবিব খান, হাফিজ আর রহমান, বাহাউদ্দিন আবির প্রমুখ।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/394895/