১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১০:০৬

কমলাপুর রেলস্টেশনের ভবিষ্যৎ কী

কমলাপুর রেলস্টেশন ও শাহজাহানপুর রেলওয়ে আবাসিক এলাকাকে কেন্দ্র করে বিশাল যে নির্মাণযজ্ঞের পরিকল্পনা চলছে তাতে ঐতিহ্যবাহী স্টেশনটি ভাঙা হবে কি না, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। ‘মাল্টিমোডাল হাব’ নামে রেল মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় পাঁচতারা হোটেল, শপিং মল, বহুতল আবাসিক ভবনসহ থাকবে অফিস কমপ্লেক্স। সেই সঙ্গে মেট্রো রেল (লাইন ৬) প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকলেও এখন তা কমলাপুর পর্যন্ত যাচ্ছে। দেশের প্রথম পাতাল রেলও এয়ারপোর্ট থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে কমলাপুর পর্যন্ত। আরেক মেগাপ্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কমলাপুর হয়ে যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এত কিছুর ভিড়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ভাঙা পড়বে বলা হচ্ছিল। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, নিজ জায়গায়ই থাকবে কমলাপুর রেলস্টেশন। অবকাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

রেল ভবন সূত্র স্টেশনটি সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে বলছে, ঢাকা স্টেশনটি শুরু থেকে কমলাপুরে ছিল না। সময়ের প্রয়োজনে এটিকে এখানে সরিয়ে আনা হয়েছিল। প্রয়োজনে আবার সরানো হলেই ক্ষতি কী? সার্বিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে অনেক কিছুই করা হয়ে থাকে।

অনিন্দ্য স্থাপত্যের স্টেশনটি ভাঙার আশঙ্কার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে চারদিক থেকে সমালোচনা শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে রেল সূত্র বলছে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমলাপুর রেলস্টেশন ভাঙা না-ভাঙা নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে কমলাপুর স্টেশন অক্ষত রেখেই যদি সব হয়, তাহলে তো কোনো কিছু ভাঙার দরকার নেই। এই মুহূর্তে স্টেশনটি ভাঙা না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

রেলওয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মূল স্টেশন সরানো বা ভাঙা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয় নাই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কবে নাগাদ হতে পারে, তা-ও এখনই বলা যাচ্ছে না। এখানে অনেক মেজর ট্রান্সপোর্ট আসবে, সে ক্ষেত্রে ইন্টারনাল কিছু অ্যারেজমেন্ট চেঞ্জ হতে পারে। তবে কমলাপুর স্টেশন বলতে যা বোঝায়, তা এখানেই থাকবে। আপনি ভাঙা বলতে কী বের করতে চাচ্ছেন, তা আমার কাছে পরিস্কার নয়। স্টেশনের কিছু ইনজেনারেল স্ট্রাকচার তো চেঞ্জ হতেই পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যে জিনিস এখনো চূড়ান্ত হয় নাই...কমলাপুর স্টেশনে ধরেন এখন এক নম্বর লাইন আছে, দুই নম্বর লাইন আছে, তিন নম্বর লাইন আছে; এই লাইনগুলো তো ওই জায়গায় থাকবে না। এটা তো চেঞ্জ হতে পারে; তবে কী হবে, সেটা কি এই মুহূর্তে বলা যাবে? যতক্ষণ পর্যন্ত পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’

মাল্টিমোডাল হাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু একটা কনসেপচুয়াল প্ল্যান। এটা ডিজাইন নয়। ডিজাইন কি এত সহজ! এ রকম আমরা করতে পারি, সে আলোচনা হয়েছে। ডিজাইনের কিছুই হয় নাই। মাল্টিহাবও এখনো চূড়ান্ত নয়। এটা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।’

তবে মেট্রো রেলের জন্য কমলাপুর স্টেশনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, সে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন মেট্রো রেলের (লাইন ৬) অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল বাকী মিয়া। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কমলাপুর রেলস্টেশনের ছাদ থেকে পশ্চিম পাশে মেট্রো রেলের লাইন ৩০ মিটার (প্রায় ১০০ ফুট) দূরে, সুতরাং মেট্রো রেলের কারণে কমলাপুর স্টেশন ভাঙা পড়বে না। মেট্রো রেল হবে মূল সড়কে। সেখানে মেট্রো রেলের জন্য সড়কের পশ্চিম পাশে আমরা জমি অধিগ্রহণ করব। এমনকি বর্তমান স্টেশনের পার্কিংয়েরও কোনো ক্ষতি হবে না। এখানে আমরা রাস্তা আরো বড় করে দেব, সামনে আরো অনেক সুন্দর হবে।’

এই অঞ্চলে অন্য প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগাইয়া গেছি। মাল্টিহাব পরে আসছে। তবে মাল্টিহাবের সঙ্গে আমাদের কোনো কনফ্লিক্ট করে না। আমরা তো রাস্তার মধ্যেই আছি। বর্তমান স্টেশন এই জায়গাতেই থাকবে। ভাঙার প্রয়োজন হবে না বরং এই স্ট্রাকচারের সঙ্গে পুরোপুরি মিল রেখেই মেট্রো রেলের স্টেশনটি করা হবে। দুটি পাশাপাশি থাকলে দেখতে আরো সুন্দর দেখাবে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মো. হাদীউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কমলাপুরের বর্তমান স্টেশনের অবকাঠামো না ভেঙেই সব কিছু করা সম্ভব এবং এটাকে না ভেঙেই সব প্রকল্প করতে হবে। এর সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। আরেকটা কথা হলো, এত প্রকল্প এক জায়গায় কিভাবে হয়? প্রতিটি প্রকল্পের আলাদাভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে, এটা আরেকটি সমস্যা। ফলে বোঝা যাচ্ছে না; সব একসঙ্গে মিলিত হলে পরিস্থিতি কেমন ভয়ংকর হতে পারে। এখানে বিআরটি হবে, এমআরটি হবে; মাল্টিমোডাল হাব, পাতাল রেল ও উড়াল সড়ক সব চালু হলে এই জায়গা হিউম্যান জেনারেটরে পরিণত হবে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2021/02/17/1005715