১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১০:০৫

যে কারণে বাড়ছে কিশোর গ্যাং

সারা দেশে সুনির্দিষ্ট ৮টি কারণে সৃষ্টি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। গত ৫ বছর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ কিশোর গ্যাং চক্র খুন, ছিনতাই, সাইবার ক্রাইমসহ জড়াচ্ছে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে। এসব কিশোরের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তারা ১০ থেকে ১৫ জন মিলে বিভিন্ন গ্যাং তৈরি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শন বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের অপরাধ করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকের এই কিশোর গ্যাং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বৈঠকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সদস্যরা। সভার কার্য বিবরণীতে জানা যায়, কিশোর গ্যাং দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। সমাজের শত্রু ও মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীরা কিশোরদের ফাঁদে ফেলে তাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পুলিশ সদর দপ্তরকে সতর্ক থাকতে বলেছে। কার্যবিবরণীর নথিটি প্রেরণ করা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার মানবজমিনকে জানান, ‘ঢাকা শহরে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। জননিরাপত্তার জন্য ঢাকায় ছোট গ্যাং হোক বা বড় গ্যাং হোক কোনো গ্যাং পার্টি থাকবে না।’

কার্যবিবরণীর ৯.৫ ধারায় ‘সারা দেশে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভাগকে অধিকতর সতর্ক থাকার জন্য গুরুত্ব আরোপ করে এ গ্যাং চক্রের ৮টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

তা হলো:- ১. পারিবারিক, সামাজিক, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যবোধ ও মূল্যবোধের অভাব, ২. বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার অপ্রতুলতা, ৩. অসুস্থ বিনোদন, ৪. পেশাদার অপরাধীদের কর্তৃক কিশোরদের মধ্যে হিরোইজম সৃষ্টির অপকৌশল, ৫. অভিভাবকদের উদাসীনতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা ৬. হাতে দামি মুঠোফোন থাকা, ৭. মোটরসাইকেল এবং ৮. টাকা তুলে দেয়া।

কার্যবিরণীতে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা প্রতিরোধে পাড়া-মহল্লায় তথা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সতর্ক ও সচেতনামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। থানার প্রতিটি টহল টিমকে কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিশোর গ্যাং-এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সারা দেশে বিভিন্ন বিটে বিট পুলিশের মাধ্যমে সমাবেশ করা হচ্ছে। যেসব কিশোরের আদালতে সাজা হয়েছে এবং বিজ্ঞ আদালত সংশোধন হওয়ার প্রয়োজন মনে করেছেন তাদের অপরাধ সংশোধনাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সারা দেশে কিশোর গ্যাং রোধে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট ৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। তা হলো- ছাত্র ও ঝরে পড়া সব কিশোর সন্তানের গতিবিধি সম্পর্কে পিতা-মাতা, অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়তি পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধিসহ মাদকসেবন, অপরাধ ও জঙ্গিবাদের মতো ভয়ানক কাজে জড়ানো রোধে এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা।

যে সব ছাত্র ৩ দিনের বেশি স্কুলে না আসে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বা কিশোর অপরাধীরা যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না পায় এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে প্রচেষ্টার মাধ্যমে উক্ত সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলসমূহের কর্তৃপক্ষকে একটি কঠোর নির্দেশনা দেয়া। বিভাগীয় প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে এ বিষয়টি মোকাবিলা করা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইন মাধ্যমে কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করা যেতে পারে। এ ছাড়াও কিশোর গ্যাংয়ের ক্ষতিকর কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় অডিও, ভিডিও এবং বিবৃতি প্রদান করা।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=263025