১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৯:৫৯

সেরামকে ১০ লাখ টিকা ফেরত দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা

জরুরি ব্যবহারে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে ১০ লাখ ডোজ করোনার টিকা ফেরত নিতে বলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্য ইকোনমিক টাইমস পত্রিকার খবরের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। একই খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১০ লাখ ডোজ করোনার টিকা পাঠায় সেরাম ইনস্টিটিউট। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে আরো পাঁচ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর কথা সেরামের; কিন্তু এখন সেরামকে টিকা ফেরত নিতে বলছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা ভারতে তৈরি করছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট। তাদের তৈরি টিকাটির নাম ‘কোভিশিল্ড’।

দক্ষিণ আফ্রিকা টিকা ফেরত নিতে বলার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাপারে সেরাম ইনস্টিটিউটের মন্তব্য জানতে চেয়েছিল রয়টার্স; কিন্তু এ ব্যাপারে সেরামের তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়নি। এক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ঘোষণা দেয়, তারা অক্সফোর্ডের টিকার ব্যবহার স্থগিত করতে যাচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে ছোট পরিসরে পরীক্ষা (ট্রায়াল) চালায়। পরীক্ষায় দেখা যায়, দেশটিতে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনে সৃষ্ট হালকা থেকে মাঝারি অসুস্থতার বিরুদ্ধে এই টিকা সুরক্ষা দেয় ন্যূনতম। পরীক্ষার ওই ফলাফলের পরই দক্ষিণ আফ্রিকা অক্সফোর্ডের টিকা প্রদান স্থগিত করে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার নতুন ধরন থেকে সৃষ্ট হালকা রোগের ক্ষেত্রেই শুধু তাদের টিকা সীমিত সুরক্ষা দেয় বলে দেখা গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এখনো করোনার কোনো টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশের সরকার অক্সফোর্ডের টিকা বিক্রি করে দিতে পারে।

অক্সফোর্ডের টিকা সেরামকে দক্ষিণ আফ্রিকার ফেরত নিতে বলার খবর এমন এক সময় এলো, যখন এই টিকা জরুরি ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গতকাল সোমবার ডব্লিউএইচও এই অনুমোদন দেয়।

ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার তৈরি টিকার তুলনায় অক্সফোর্ডের টিকা দেয়া ও তার সংরক্ষণ-পরিবহন অনেক সহজ। সাধারণ রেফ্রিজারেটরে অক্সফোর্ডের টিকা সংরক্ষণ করা যায়। তা ছাড়া অক্সফোর্ডের টিকা মূল্যের দিক থেকেও সাশ্রয়ী। ফলে গণহারে প্রয়োগ এবং দরিদ্র দেশগুলোয় ব্যবহারের দিক থেকে অক্সফোর্ডের টিকাকে সুবিধাজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

জরুরি ব্যবহারে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার : এবার জরুরি ব্যবহারের জন্য অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও। বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই টিকা ব্যবহারের বিষয়ে সুপারিশ করার কয়েক দিন পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এলো। খবর এনবিসি নিউজের। গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার এসকেবায়ো এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দেয়ার কথা জানানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রস আধানম গেব্রেয়েসুস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দ্রুত ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য আমাদের সব বন্দোবস্ত হয়ে গেছে। তবে এখনো আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, ধনী দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি তাদের কাছেও কোভিড-১৯ টিকার নথিপত্র জমা দিতে টিকা প্রস্তুতকারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ দলের প্যানেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার দু’টি ডোজ ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির অন্যান্য দেশেও যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য লাগাম টানতে টিকা প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন। বয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার প্রমাণ ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে।

এ দিকে সম্প্রতি শিশুদের দেহে এই ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর তা জানতে প্রথমবারের মতো ট্রায়াল শুরু করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের দেহে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা জানানো হয়েছে।

কানাডায় করোনার নতুন ধরন ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ : করোনা মহামারীর শুরু থেকেই কানাডার নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য এবং এ ভাইরাস প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে দেশটির সরকার। টিকা প্রদানের পাশাপাশি বিদেশ থেকে কানাডায় আসা যাত্রীদের সরকারনির্ধারিত হোটেলে তিন দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এ লক্ষ্যে ফেডারেল সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। চারটি বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল নির্দিষ্ট করা হয়েছে। করোনার তৃতীয় ওয়েভ এবং নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে কানাডা সরকার এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

নতুন পদক্ষেপের আওতায় টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ভ্যাঙ্কুভার এবং ক্যালগেরিÑ এই চারটি বিমানবন্দরেই কেবল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করবে। যাত্রীদের বিমানবন্দরে বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষার তিন দিন সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে অবস্থান করতে হবে। তিন দিনে প্রতি জনের জন্য ন্যূনতম দুই হাজার ডলার করে খরচ হবে বলে ফেডারেল সরকার জানিয়েছে। যাত্রীদের নিজেদের এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

ফাইজার ভ্যাকসিনের তথ্য হ্যাক করতে চেয়েছিল উত্তর কোরিয়া : ফাইজারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের তথ্য হ্যাক করতে চেয়েছিল উত্তর কোরিয়া। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির তথ্যভাণ্ডারে হানা দিয়েছে দেশটির হ্যাকাররা। টিকা ছাড়াও করোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল তারা। গতকাল এক ব্রিফিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা এ তথ্য জানান। দক্ষিণ কোরীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে ব্রিফিং পাওয়ার পরই বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন আইনপ্রণেতারা।

২০২০ সালের নভেম্বরে মাইক্রোসফট করপোরেশন জানায়, রাশিয়ার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররাও করোনা টিকা নিয়ে কাজ করছে এমন সাতটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছে। গত ডিসেম্বরে ফাইজারের জার্মান অংশীদার বায়োএনটেক জানায়, তাদের টিকা সংক্রান্ত নথিগুলোকে সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের গাজায় পাঠানো টিকা ঢুকতে দেয়নি ইসরাইল : ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজায় পাঠানো দুই হাজার ডোজ করোনা টিকা ঢুকতে বাধা দিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আলকাইলা গত সোমবার ইয়েনি সাফাককে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব কিছু দেখার দায়িত্ব ফিলিস্তিনের। আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিকে অবজ্ঞা করে ইসরাইল গাজাবাসীর মৌলিক অধিকার হরণ করেছে বলে মনে করেন তিনি। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গাজায় পাঠানো রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকার দুই হাজার ডোজের চালানটি আটকে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। অবরুদ্ধ গাজার করোনা হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে দেয়ার জন্য এগুলো পাঠানো হয়েছিল। ফিলিস্তিনে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ আট হাজার ৪৪৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন এক হাজার ৯৩৬ জন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/563278/