১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১২:৫৮

পায়রায় কয়লা খালাসের দরপত্র নিয়ে বিতর্ক

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মাসে শতকোটি টাকার কয়লা আমদানি হয় এই বন্দর দিয়ে

পায়রা সমুদ্রবন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। দরপত্রে স্থলভাগে কয়লা খালাসে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদেরও অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। সমুদ্রবন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করছে, নিয়ম লঙ্ঘন করে স্থলবন্দরে কয়লা খালাসকারী প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এদের সমুদ্রবন্দরে পণ্য খালাসের অভিজ্ঞতা নেই। এতে বন্দরের ক্ষতি হতে পারে। অন্যপক্ষ বলছে, কয়লা খালাসের অভিজ্ঞতা একমাত্র আমাদেরই আছে। স্থলভাগে বহুকাল ধরেই কয়লা খালাস ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করে আসছি। ফলে বন্দরের জাহাজ থেকে কাজ করতে কোনো সমস্যা হবে না। বিসিপিসিএল বলছে, দরপত্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও নতুনদের সুযোগ দিতেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় উদার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি মাসে শতকোটি টাকার কয়লা আমদানি করে এই কোম্পানি। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সমুদ্রবন্দরে কয়লা খালাসে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোম্পানির কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করে এই কোম্পানি।

দরপত্রের শর্তে স্থলবন্দরে কাজ করা প্রতিষ্ঠানকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু স্থলবন্দরে কাজ করা প্রতিষ্ঠান জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এদিকে সমুদ্রে পণ্য খালাসের অভিজ্ঞতা থাকলেও বহু প্রতিষ্ঠানের কয়লা খালাসের অভিজ্ঞতা নেই বলে দাবি করা হচ্ছে। বিসিপিসিএল কোম্পানি বাংলাদেশ ও চায়না সরকারের যৌথ মালিকানায় পরিচালিত। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা পায়রা বন্দরে খালাস করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, 'জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই প্রতিটি সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চহারে জামানত রেখে স্টিভিডোর বা শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরদের তালিকাভুক্ত করে। কাজ করার লাইসেন্স দেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৬ জন শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর আছে। বহির্নোঙরে নিরাপদে পণ্য খালাসের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এরাই। অভিজ্ঞ এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে কেউ কাজ করতে পারবে না। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরদের এভাবে তালিকাভুক্ত করেছি আমরা।'

একইভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে তালিকাভুক্ত অপারেটর জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার অপারেটরদের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা ও সাধারণ বার্থ অপারেটরদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা জামানত রাখা হয়। পায়রা সমুদ্রবন্দরে এমন জামানতের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা। এখানে তালিকাভুক্ত অপারেটর আছেন ৩০ জন।

জানতে চাইলে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (পরিবহন) আজিজুর রহমান বলেন, 'পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সীমার মধ্যে কাজ করতে হলে আমাদের নির্দেশনা মানতে হবে। অদক্ষ কোনো প্রতিষ্ঠান এখানে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করলে ঝুঁকি তৈরি হবে। আমরা বিষয়টি বিসিপিসিএলকে জানিয়েছি। গত সপ্তাহে তাদের চিঠি দিয়ে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে।'

২০২০ সালের ২১ জুলাই বিসিপিসিএলের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মওলা স্বাক্ষরিত টেন্ডার নোটিশে উল্লেখ করা হয় স্টিভিডোরিং সার্ভিসের জন্য আগ্রহীদের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা, যে কোনো বন্দরে সংশ্নিষ্ট কাজের তিন বছরের অভিজ্ঞতা, ৫০ লাখ টাকার সমপরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে আগ্রহীদের ১০ বছরের সাধারণ অভিজ্ঞতা, পাঁচ বছর সংশ্নিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা ও ১০ লাখ টাকার সম্পদ থাকতে হবে। ড্রাফট সার্ভের জন্য পাঁচ বছরের সাধারণ অভিজ্ঞতা, তিন বছর সংশ্নিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা ও ১০ লাখ টাকার সম্পদ থাকার বিষয়টিকে টেন্ডারের শর্তে যুক্ত করেছে বিসিপিসিএল।

তবে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট সংশোধিত আরেক টেন্ডার নোটিশে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের জন্য 'যে কোনো বন্দর' বাদ দিয়ে কেবল পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করে তারা। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি সংশোধিত আরেক টেন্ডারে স্টিভিডোরদের অংশগ্রহণে নতুন শর্ত যুক্ত করা হয়। এবার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সর্বশেষ তিন বছরে এক লাখ টন পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের যোগ্যতা নতুন করে যুক্ত করা হয়। কিন্তু স্থলবন্দরসহ যে কোনো বন্দরে কাজ করা ব্যক্তির অংশগ্রহণের সুযোগ বহাল রাখা হয়। এ কারণে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে স্থলবন্দরে কাজ করা ব্যক্তিদের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে এখনও।

তবে বিসিপিসিএলের প্রকল্প পরিচালক আমিনুল ইসলাম মাওলা বলেন, 'প্রতিযোগিতা বাড়াতে যা করা দরকার আমরা সেটিই করেছি। টেন্ডারের শর্তাবলি কয়েক দফা সংশোধনও করা হয়েছে।' একই প্রসঙ্গে বিসিপিসিএলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাশেদ মোরশেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। বিসিপিসিএলের কমার্শিয়াল ম্যানেজার মিজানুর রহমান বিষয়টি এড়িয়ে যান।

বর্তমানে বিসিপিসিএল প্রতি মাসে গড়ে ৭০ কোটি ৮৮ লাখ মূল্যের প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার টন কয়লা আমদানি করছে। এসব কয়লার বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে রাজস্ব পায় গড়ে প্রায় পাঁচ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষের তালিকাভুক্ত লাইসেন্সধারী স্টিভিডোর জাহাজ থেকে মালপত্র খালাসের এই কাজ করছে। এসব বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ সুপারভাইজার, ফোরম্যান, উইন্‌চম্যান দিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে।

https://samakal.com/bangladesh/article/210252639/