১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১২:৫৬

শিক্ষক সংকটের মাসুল গুনবে শিক্ষার্থীরা!

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৭ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য - স্কুল-কলেজ খোলার আগেই পদ পূরণের পরামর্শ

২০১৮ সাল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক ও সমপর্যায়ের পদগুলোতে নিয়োগের সুপারিশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবে মামলাসংক্রান্ত জটিলতা ও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দুই বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ। এতে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৭ হাজার শিক্ষকের পদ খালি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে এসব শূন্যপদ পূরণ করতে না পারলে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদের চাহিদা চাওয়া হয়। এতে ৫৭ হাজার ৩৬০টি শূন্যপদের তালিকা পাঠানো হয়। গত এক বছরে পদ শূন্য হয়েছে আরো প্রায় ২০ হাজার। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৭ হাজার শিক্ষকের পদ খালি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে শিক্ষক সংকটের ব্যাপারটি তেমনভাবে বোঝা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিতে বলেছে সরকার। খোলার আগে শিক্ষক নিয়োগ শেষ করা না গেলে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হবে।

গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণদের আবেদনের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।

এখন পর্যন্ত দুটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তারা। তৃতীয়টি প্রকাশের অপেক্ষায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণদের নিয়ে একটি মেধাতালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে এমপিও নীতিমালা ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৩তম নিবন্ধিত প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেন। এ অবস্থায় শূন্যপদের তালিকা চূড়ান্ত হলেও নিয়োগ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা প্রায় ৪০০টি মামলা করেছেন। এতে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, বর্তমানে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মে মাসের মধ্যে এর ফল প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে প্রথম থেকে ১৫তম নিবন্ধনের মেধাতালিকায় ছয় লাখ ৩৪ হাজার ১২৭ জন রয়েছেন। তবে এদের বেশির ভাগের বয়স ৩৫ বছর পার হয়ে গেছে। ফলে দেড় লাখের বেশি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না।

শিক্ষক নিয়োগের জন্য দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়ে এরই মধ্যে আন্দোলন শুরু করেছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা। হাবিবুল্লাহ রাজু নামে একজন নিয়োগপ্রত্যাশী বলেন, বর্তমানে সব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। অথচ এনটিআরসিএর নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেকেরই চাকরির বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। করোনার সময়ে অনেকে ভয়াবহ কষ্টে আছেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর জোর দাবি জানাচ্ছি।’

মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় এত দিন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছিল না বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তবে তিনি বলেন, ‘ভিন্ন কৌশলে আমরা বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছি। মামলার পদগুলো বাদ দিয়ে বাকি পদগুলোতে নিয়োগ দিতে এনটিআরসিএকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে কাজও শুরু করেছে। আশা করছি শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’

এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শের পর এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/02/13/1004461