১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১২:৫২

দুই দশকের পুরনো মেশিনেই চলছে জরিপের ম্যাপ মুদ্রণ

বছরে চাহিদা এখন ২০ লাখ

ডিজিটাল যুগে এসেও যুক্ত হয়নি নতুন আধুনিক মেশিন। ফলে দুই দশকের পুরনো মেশিন দিয়েই চলছে বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতরের বিভিন্ন ম্যাপ ও চার্ট মুদ্রণ। ম্যাপ, চার্ট ও ফরমের চাহিদা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পুরনো মেশিন দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী যথাসময়ে মুদ্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি নিখুঁত ফলাফলও পাওয়া যায় না। ফলে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ম্যাপের কালার কম্বিনেশন নিখুঁত ও সঠিক মানের পাওয়া যাচ্ছে না। বছরে এখন ২০ লাখ ম্যাপ মুদ্রণের চাহিদা রয়েছে। সে তুলনায় যন্ত্রপাতির সংখ্যা অপ্রতুল বলে জরিপ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর জাতীয় মানচিত্র প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান। আকাশ আলোকচিত্র ও স্যাটেলাইট ইমেজের সাহায্যে বিভিন্ন স্কেলের টপোগ্রাফিক ও থিমেটিক মানচিত্র প্রণয়ন করছে প্রতিষ্ঠানটি। লিথু মুদ্রণ অফিস বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও রি-প্রোডাকশন ইউনিট যা ম্যাপ মুদ্রণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিভিন্ন স্কেলের ম্যাপ, চার্ট ও ফরম মুদ্রণ করা হয়। অন্য দিকে মাল্টিকালার ম্যাপ মুদ্রণের জন্য দুই কালার অফসেট প্রিন্টিং প্রেস ব্যবহারের ফলে ম্যাপ রি-প্রডাক্টশন নিখুঁতভাবে হচ্ছে না। বারবার ট্রায়াল অ্যান্ড ইরোর পদ্ধতিতে রেজিস্ট্র্রেশন করে মাল্টিকালার ম্যাপ মুদ্রণ করতে হয়। ফলে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ম্যাপের রেজিস্ট্রেশন বা কালার নিখুঁত ও সঠিক মানে পাওয়া যায় না। স্টেকহোল্ডার বা ম্যাপ ব্যবহারকারীদের ম্যাপ বাস্তব ব্যবহারে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। আর এ জন্যই নতুন যন্ত্রপাতি ও মেশিন কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদামাফিক ম্যাপ সরবরাহ করা হয়। এর আগে জরিপ অধিদফতরের বিভিন্ন ধরন ও স্কেলের প্রণীত ম্যাপের মোট সংখ্যা ৩৭৬টি। ১:৫০ হাজার স্কেলের ২৬৭টি, ১:আড়াই লাখ স্কেলের ২৭টি-২৭টি শিটের, ১:৫ লাখ স্কেলের ৬টি, যা ৬ শিটের, ১:১০ লাখ স্কেলের ৪টি। ৬৪টি জেলার জেলা ম্যাপ, বিভাগীয় ম্যাপ ৮টি। আর আইডিএমএস প্রকল্পের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ১:৫০০০ স্কেলের ২৫২টি, যা শুধুমাত্র ৫টি বিভাগীয় শহরে। ১:২৫০০০ স্কেলের ৯৮০টি, ৯৮০টি শিটের সমগ্র বাংলাদেশের। এই হলো ১ হাজার ২৩২টি। ফলে সব মিলে এখন ম্যাপের সংখ্যা এক হাজার ৬০৮টি, যা আগের তুলনায় চার গুণ। ফলে বছরে আনুমানিক ২০ লাখ ম্যাপ মুদ্রণ করতে হবে। সে তুলনায় মুদ্রণ যন্ত্রপাতি অপ্রতুল। এ ছাড়া কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রায়ই স্বাভাবিক কাজ কর্ম বিঘিœত হচ্ছে।

জরিপ অধিদফতর বলছে, প্রিন্টিং প্রেস স্বল্পতার কারণে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার তুলনায় ম্যাপ তৈরি করে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারের কোষাগারে রাজস্ব আয় জমা হয়েছে এক কোটি ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা। পরের অর্থবছর তিন কোটি ৬৫ লাখ এক হাজার ২৭০ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জমা হয়েছে ছয় কোটি ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

জরিপ অধিদফতরের এই কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে দেড় বছর। প্রকল্পের মাধ্যমে একটি চার কালার অফসেট প্রিন্টিং প্রেস, একটি থার্মাল প্লেট রেকর্ডার উইথ প্রসেসর এবং একটি গুলেটাইন মেশিন পেপার কাটিং মেশিন) কেনা হবে। তা ম্যাপ মুদ্রণের কাজে ব্যবহার করে ম্যাপ রিপ্রোডাকশন কার্যক্রমের সক্ষমতা অর্জন বাড়ানো হবে। সশস্ত্রবাহিনীর অপারেশনাল এবং প্রশিক্ষণ কাজে প্রয়োজনীয় নিখুঁত সঠিক মানের মানচিত্র সরবরাহ করা, সশস্ত্রবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে যথাসময়ে ম্যাপ সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া ম্যাপ উৎপাদনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণও প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে দেশের সার্বিক উন্নয়নের সাথে ওৎপ্রতভাবে জড়িত।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/562451