১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১২:৫১

ভ্যাকসিন আসছে নতুন করোনার

আক্রান্ত : ১০,৮৩,৯৫,৪৮৫ মৃত্যু : ২৩,৮০,৯৯০
এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধেই করোনাভাইরাসের নতুন ধরন মোকাবেলায় সক্ষম ভ্যাকসিন বাজারে আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ব্রিটিশ-সুইডিশ ওই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, নতুন ধরন শনাক্তের পরপরই তারা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছিল। ছয় থেকে ৯ মাসের মধ্যেই এর সুফল পাওয়া যেতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ভাইরাসটির স্বাভাবিক ধরনের বিরুদ্ধে ইতিবাচক কার্যকারিতা দেখানোয় বৈশ্বিক মহামারী নির্মূলে ভ্যাকসিনটি নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠে বিশ্ব। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার একটি ধরনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পেরে প্রশ্নের মুখে পড়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ঘটনার পর ভ্যাকসিনটি ব্যবহার স্থগিতও করে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার।
আফ্রিকার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত আরেকটি ধরন পুরনোগুলোর চেয়ে বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন ধরনগুলো মোকাবেলায় সক্ষম ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বায়োফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণার প্রধান মেনি প্যাঙ্গালোস গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পরিবর্তিত ধরনগুলো নিয়ে কাজ আজকে শুরু হয়নি, এটি শুরু হয়েছে কয়েক সপ্তাহ বা মাস আগে। নতুন ধরনগুলোর জন্য পরবর্তী প্রজন্মের ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা আগামী বসন্তেই (মার্চ থেকে মে) ক্লিনিকে থাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। প্যাঙ্গালোস জানান, তিনি আশা করছেন, আগামী শরতেই (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) নতুন ধরনরোধী ভ্যাকসিন জনসাধারণের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হতে পারে।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের বিপরীতে মাত্র ১০ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। দেশটিতে পরিচালিত ছোট পরিসরের ট্রায়ালে এমন ‘হতাশাজনক’ ফলাফল এসেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

আমাজনে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ৩ গুণ বেশি সংক্রামক : ব্রাজিলের আমাজনে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট তিন গুণ বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এডুয়ার্দো পাজুয়েল্লো। গতকাল রয়টার্স জানিয়েছে, আমাজনের শহর মানাউসে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মকভাবে ছড়িয়েছে। চাপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এডুয়ার্দো আইনপ্রণেতাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। গত বৃহস্পতিবার এডুয়ার্দো জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনগুলো নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে তিনি এর কোনো প্রমাণ উল্লেখ করেননি। তিনি আরো জানিয়েছেন, এই সংক্রমণ অপ্রত্যাশিত। কিন্তু তা এখন নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। গত তিন সপ্তাহ আগে চীনের সিনোভ্যাক ও যুক্তরাজ্যের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ব্রাজিল।
বিশ্বে আক্রান্ত ১০ কোটি ৮৪ লাখ, সুস্থ ৮ কোটির বেশি : এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বে তা-ব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। চীন থেকে প্রাদুর্ভাব হওয়া এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা যাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ কোটি ৮৪ লাক্ষাধিক। তাদের মধ্যে মারা গেছে ২৩ লাখ ৮১ হাজার। তবে আশার কথা হচ্ছে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ কোটি চার লাখ। সে হিসাবে এখনো অসুস্থ আছে আড়াই কোটি।

এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত দুই কোটি ৮০ লাখ দুই হাজার ২৪০। এর মধ্যে মারা গেছে চার লাখ ৮৬ হাজার ৯২২ জন। দেশটিতে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে এক কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার ৮১৯ জন।সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের পরই রয়েছে ভারত। এরপরে রয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালি।

এ ছাড়া ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের অবস্থান তালিকায় ৮৩তম স্থানে। দেশটিতে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ হাজার ৭৪৮ জন। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সেখানে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয় গত বছরের ৯ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। এরপর গত ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে চায় না ছত্তিশগড় : ভারতের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ রাখতে কেন্দ্র সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে দেশটির ছত্তিশগড় রাজ্য। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিএস সিং দেও জানিয়েছেন, তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়া এবং ভায়ালের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকায় ভ্যাকসিনটি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তাদের। এসব ইস্যু নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত ভ্যাকসিনটি ছত্তিশগড়ে সরবরাহ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে এসব উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হর্ষ বর্ধন। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/562466/