১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১২:৪০

সরকারের মজুত দুর্বলতায় বেড়েই চলেছে চালের দাম

সরকারের মজুত দুর্বলতার সুযোগে বাজারে চালের দাম বেড়েই চলছে। ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল কিনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে করোনার কারণে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। যারা উপার্জন করছেন তাদের মধ্যেও অনেকের আয় আগের তুলনায় কমেছে। সেখানে চালের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ। সরকারের মজুত না থাকায় চালের দাম বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এর সত্যতাও মিলেছে। সংশ্লিষ্টরাও তা স্বীকার করছেন। আবার অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ব্যর্থতার পরও সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চাহিদা অনুযায়ী চাল আমদানি করতে পারেনি। বারবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কেন পূরণ হচ্ছে না সে বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি খাদ্য অধিদফতরের কাছ থেকে। তারা বলছেন, মিলমালিকদের চুক্তি ভঙ্গ করায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ফলে সরকার আর ব্যবসায়ীদের সমন্বয়হীনতার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
খাদ্যমন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, খাদ্যশস্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৭ ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে চাল আমদানি জন্য বৈধ আমদানিকারকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ১০ জানুয়ারির মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি পর্যায়ে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৩২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এই অনুমতির চিঠি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

বাস্তবতা হলো সরকারের গুদামে এখন চালের মজুত রয়েছে ৫ লাখ ২৭ হাজার টন। যেখানে গত বছর একই সময়ে চাল মজুত ছিল ১৩ লাখ ৮ হাজার টন। অর্থাৎ মজুত কমেছে অর্ধেকেরও অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতি দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ন্যূনতম ৮ লাখ টন চালের মজুতকে সরকারের স্থিতিশীল মজুত বলে বিবেচনা করা হয়। এমন পরিস্থিতির পরও গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। গত বছর বোরো ধান ওঠার পরপরই (গত বছরের এপ্রিল) সরকার নতুন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঘোষণা করে। ওই সময় ৩৬ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার কথা জানানো হয়। কিন্তু ২৬ এপ্রিল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোরো ধান কেনার ৮ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কিনতে পেরেছিল মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।

এর থেকেও খারাপ পরিস্থিতি আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের। ২ লাখ টন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ১১৬ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ শতাংশ। এ মৌসুমের সংগ্রহ চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ সময় শেষে লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ পূরণও অসম্ভব। সরকারের এ মজুত দুর্বলতার সুযোগে বাজারে চালের দাম বেড়েই চলছে। ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল কিনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে করোনার কারণে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। যারা উপার্জন করছেন তাদের মধ্যেও অনেকের আয় আগের তুলনায় কমেছে। সেখানে চালের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ। চাল সংগ্রহে সরকারের ব্যর্থতার কারণে বাজারে চালের দাম বেড়ে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্বেগের বিষয় হলো চালের এ চড়া দাম স্থিতিশীল নয়, ক্রমেই তা আরও বাড়ছে। মনে রাখা প্রয়োজন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন, সবারই আয় কমেছে, কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। আর কোভিডের পাশাপাশি গতবছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত ছিল। প্রধান খাদ্য এবং খাদ্যনিরাপত্তা বলতে সব মানুষের জন্য প্রধান চালের সহজ প্রাপ্যতাই বোঝানো হয়ে থাকে সরকারের উচিত এ বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। চালের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে কোভিডের কারণে আর্থিকভাবে বিপন্ন জনগোষ্ঠীর বিপন্নতা আরও বাড়বে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সরকারের মজুত না থাকায় চালের দাম বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরাও তা স্বীকার করছেন। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত মাসের শেষে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় মিল মালিক ও পাইকাররা সুযোগ নিয়েছেন, চালের দাম বেড়েছে। কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ‘বাংলাদেশে চাল, আলু ও পেঁয়াজের প্রাপ্যতা : একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার পেছনে সরকারের সংগ্রহ ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়।

বারবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কেন পূরণ হচ্ছে না সে বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি খাদ্য অধিদফতরের কাছ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নতুন কোনো কার্যকরি উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সংগ্রহ কার্যক্রমে যুক্ত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বারবার মিলমালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ না করায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধানের দাম বেশি থাকায় তারা সরকারকে চাল দিচ্ছেন না। অন্যদিকে ধান সংগ্রহে নানা নিয়মকানুনের কারণে কৃষকরা সরকারকে ধান দিতে পারেন না। চাল সংগ্রহের জন্য অধিদফতরের বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। মিলমালিকদের চুক্তি ভঙ্গ করায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। চালের দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও সে অনুযায়ী চাল সরবরাহে গড়িমসি করছেন বলে জানান কয়েকজন কর্মকর্তা।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ গত বছরের সেপ্টম্বরে বলেছিলেন, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল ছাড়াও অন্যান্য কর্মসূচিতে আরও দেড় লাখ মেট্রিক টনসহ মোট সাড়ে চার লাখ টন চালের প্রয়োজন হবে। আর এই সময়ে চাল ও গম মিলিয়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সরকারি গোডাউনে মজুদ থাকবে। এবার বন্যা হওয়ার আর কোনো সম্ভবনা না থাকা এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে কর্মহীন ও দরিদ্রদের চাল দেয়া হলেও এখন তা আর বিতরণের প্রয়োজন না থাকায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক খাদ্যশস্য সংগৃহীত হলেও খুব বেশি সমস্যা হবে না। যেসব মিল এবার সরকারকে কোনো চাল দেয়নি তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে জানিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, যারা এই দুঃসময়ে সরকারকে চাল দিয়েছে তারা জনগণের বন্ধু। আর যারা চাল দেয়নি তাদের কাছে ব্যবসাটাই বড়। যারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা অবশ্যই ভালো অবস্থানে থাকবে। সরকারকে চাল না দিয়ে মিলগুলো নিজেরাই সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে।

এদিকে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ব্যর্থতার পরও সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চাহিদা মতো আমদানি করতে পারেনি। গত বছরের শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ২ লাখ টন চাল কেনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পুরোটা দেশে আসেনি। চালের দাম দুর্ভোগে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে। এই পরিস্থিতিতে চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। বেসরকারি পর্যায়ে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারিভাবে চাল আমদানি জন্য বৈধ আমদানিকারকদের প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ ১০ জানুয়ারির মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়। বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে সোয়া ১০ লাখ টনের মতো চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ভারত থেকে এক লাখ ১১ হাজার ৫২০ টন চাল দেশে এসে পৌঁছেছে। চাল আমদানি শুরু হলেও বাজারে চালের দামে তা খুব একটা প্রভাবে ফেলেনি। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ভোমরা, দর্শনা, বেনাপোল, সোনা মসজিদ, হিলি, বুড়িমারি, বাংলাবান্ধা, শেওলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বেসরকারিভাবে মোট ৫৬ হাজার ৩৯১ টন চাল দেশে পৌঁছায়। এছাড়া সরকারিভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় চাল এসেছে ৫৫ হাজার ১২৯ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি পর্যায়ে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৩২০ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। পরে অনুমতির চিঠি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য গত ৩ জানুয়ারি ১০ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ পাঁচ হাজার টন, ৪ জানুয়ারি ১২ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ৬০ হাজার টন এবং ৫ জানুয়ারি সাত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৬৫ হাজার টন, ৬ জানুয়ারি ৪৯ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টন, ১০ জানুয়ারি ৬৪ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৭২ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ৪১ হাজার টন চাল, ১৩ জানুয়ারি ৪৩ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ছয় হাজার ৫০০ টন চাল এবং ১৭ জানুয়ারি ৬৩ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৯১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়।

এদিকে চাল আমদানিতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিতে সংশোধন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বুধবার অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৫ম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৬ষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য ৩টি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য ৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও দুটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চাল আমদানির বিষয়গুলো অনুমোদন দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানি হবে। ওই প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে নিয়ে আসবে। আইনি সক্ষমতার কিছু ঘাটতি ছিল। সেখানে এগুলো আইনে বলা আছে যে টেন্ডারের বাইরে কম সময় দিয়ে কোনো জিনিস কিনতে পারবো না। এটা ছিল অভ্যন্তরীণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে, এটা আসবে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানিতে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) তাদের বিধিতে সংশোধনী আনতে বলেছি। বিধিতে সংশোধনী আসলে আমরা এই কাজটি করতে পারবো।

মুস্তফা কামাল বলেন, আইএমইডি আমাদের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধি সময় সংক্রান্ত বিষয়টি সংশোধন করবে। অন্যকিছু না। অন্য কোনো জিনিস আমরা স্পর্শ করিনি। আন্তর্জাতিক টেন্ডার করার পরে ৪০ থেকে ৪২ দিন অপেক্ষা করার কথা বলা ছিল। কিন্তু কিছু পণ্য আছে যেমন পেঁয়াজ, চাল, তেল এ জাতীয় জিনিস আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিনই বাড়ে কমে। সেখানে এতো লম্বা সময় কোনো টেন্ডার অপেক্ষা করে না। প্রাইস অ্যাকটিভ রাখার জন্য যে সময়টা যথাযথ মনে করি তা হচ্ছে ম্যাক্সিমাম ওয়ান উইক (কমপক্ষে এক সপ্তাহ)। উইদিন দিস টাইম (এই সময়ের মধ্যে) তারা প্রাইস জানাবে। আমরা আমাদের দিক থেকে প্রকিউরমেন্টের যেসব নিয়মকানুন আছে সেগুলো ফলো করবো। এলসি খুলবো, আরও যা যা করার দরকার সেগুলো করবো। যাতে তারা যেন এগুলো দেখে হাতে নিয়ে তারপর শিপমেন্ট করতে পারে। তিনি বলেন, আইএমইডির আইন ও বিধি সংশোধন সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনে আছে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ মার্কেট থেকে কিছু কিনলে প্রয়োজনে সময় কমানো যাবে। আন্তর্জাতিক প্রকিউরমেন্ট সম্পর্কে কিছু বলা ছিল না। আমরা বুঝতে পারলাম আন্তর্জাতিক বাজার অত্যন্ত ভলাটাইল। চাল, তেল, গমসহ এসব জিনিসের দাম ওঠানামা করে খুব দ্রুত। সেজন্য কম সময় দরকার এখানে। বেশি সময় দিলে পরে আমরা কমপিটিটিভ প্রাইস পাবো না। আন্তর্জাতিক বিডাররা বিড করবে না। সেজন্য আমরা আইনটা সংশোধন করছি।

এর আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে দুটি প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮(১) ধারা এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ১ লাখ মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল ভারতের এনসিসিএফ (ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কনজুমার্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড) থেকে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে চাল ও গম আমদানির লক্ষ্যে ক্রয় প্রক্রিয়ার সময় হ্রাস করার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এদিকে স্থলবন্দর দিয়ে দেশে নির্বিঘ্নে প্রবেশে আমদানির চালবাহী ট্রাককে অগ্রাধিকার দেয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সীমান্ত দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চালের ট্রাক নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে প্রবেশে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেই বৈঠক থেকেই তিনি এই নির্দেশ দেন। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠককালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবির মহাপরিচালককে টেলিফোনে এ বিষয়ে ভোমরা, হিলি, বুড়িমারী বাংলাবান্ধা, শেওলাসহ যে সব স্থলবন্দর দিয়ে চাল দেশে আসছে সেসব বন্দর দিয়ে চালের ট্রাক যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।

https://dailysangram.com/post/443657