১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১১:৪১

সাগর-রুনি হত্যার ৯ বছর

রহস্যের জট খুলবে কি?

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড ৯ বছরে পা দিলেও রহস্যের জট খোলেনি আজো। সময়ের বিপরীতে একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হলেও বদলায়নি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের অবস্থা। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। যদিও র্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতো এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি। উল্টো ৭৮ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। ফলে, নিহতদের স্বজনরা বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে বলছেন, ৯ বছরেও রহস্যের জট খোলেনি, আর খুলবে কবে।

মামলার বাদি ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখন পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা কোনো অগ্রগতির তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। অথচ ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। অবশ্যই তিনি কনক্রিট কিছুর ওপর ভিত্তি করে ওই সময় নিয়েছিলেন, যা ধামাচাপা পড়ে গেছে। যার ফল তদন্ত কর্মকর্তা যিনিই আসছেন আদালত থেকে বারবার সময় নিচ্ছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে রোমান আরো বলেন, আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সাথেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ প্রতি বছর তারা নিয়ম মাফিকভাবে বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতও যেখানে বারবার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কী বলার আছে! তবে, জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম। তবে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড একটি স্পর্শকাতর ঘটনা। আমরা আমাদের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটির তদন্ত করিয়ে আসছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে, যা যথাসময়ে যথাযথ উপায়ে উপস্থাপন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, পুরো বিষয়টি বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে। এ অবস্থায় অগ্রগতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে, র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, অতীতের মতোই তেমন কোনো অগ্রগতিই হয়নি আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরের দিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদি হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের পরিদর্শক মো: রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় র্যাবকে। সেই থেকে ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।

বিএফইউজে-ডিইউজের বিক্ষোভ সমাবেশ আজ : সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে নিজেদের বেডরুমে নৃশংসভাবে হত্যার ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বুধবার ১০ ফেব্রুয়ারি । এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের উদ্যোগে বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিএফইউজে, ডিইউজে, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ডিআরইউ, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ শীর্ষ সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সফল করার জন্য সর্বস্তারের সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো: শহীদুল ইসলাম।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/561672/