১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১১:৩৮

কালো টাকার অর্থনীতি

অবৈধভাবে উপার্জিত বা সংরক্ষিত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। তাই আমাদের দেশের অর্থনীতিকে কালো টাকার অর্থনীতি বলে বিদ্রুপ করে থাকেন কেউ কেউ। কারণ, বিশে^র অন্যকোন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেয়া হয় বলে জানা যায় না। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই অশুভ বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসার যখন তাগিদ অনুভূত হচ্ছে তখন এর আওতা বৃদ্ধি আত্মসচেতন মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। বিদায়ী অর্থবছরে বাজেটে শুধু জমি ও ফ্লাট তথা গৃহায়ণ খাতে কালো টাকার কথিত বর্ণবিন্যাসের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এর আওতা আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে।

কালো টাকা সাদাকরণের অবাধ সুযোগ দেয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি মোটেই আমলে নেয়নি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল করা, রাজস্ব আয় ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির নামে চলতি বাজেটে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা সাদা করা ও অর্থপাচারকে সুকৌশলে বৈধতা দিয়ে দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে। যা রাষ্ট্রচারের বড় ধরনের বিচ্যুতি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

‘অবৈধ আয়ের দুষ্টচক্র না ভেঙ্গে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া অর্থনীতির জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। এই অশুভবৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে অর্থনীতির জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি’-সম্প্রতি এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছে বেসরকারি সংগঠন ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম’ আয়োজিত ‘কালো টাকা সাদা হচ্ছে : অর্থনীতির লাভ না ক্ষতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে। যা বাস্তবতার সাথে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সংলাপে বক্তারা বলেছেন, কালো টাকা সাদা করার মতো অনৈতিক কর্মকান্ডকে বৈধতা দেয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন’ করা। সে ক্ষেত্রে দুর্নীতিজাত অনুপার্জিত আয়ের উৎস, উপায় ও উপলক্ষ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ তথা বন্ধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দুর্নীতিজাত কালো টাকা লালন থেকে সরে না এলে আয় ও সম্পদ বণ্টনের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য থেকে আমাদের মুক্তি মোটেই সহজসাধ্য হবে না।

সংলাপে আরও বলা হয়, সৎ ও নিয়মিত করদাতারা ১৫-২৫ শতাংশ কর দেবেন, আর অবৈধভাবে উপার্জিত কালো টাকার মালিকরা ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ পাবেন, তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন অশুভচর্চা অব্যাহত থাকলে কর রাজস্ব আহরণের নৈতিক দাবি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতির ওপর। বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে পড়ে থাকার অনেক কারণের মধ্যে অনৈতিক নীতির পরিপোষণও একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। এমতাবস্থায় ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র প্রবণতায় কালো টাকা সৃষ্টির প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের নীতি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

আমাদের দেশে অনেক দিন ধরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অবারিত রাখা হলেও চলতি অর্থবছরে এ সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ি, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১০ হাজার ২শ ২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করেছেন ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন। কারো কারো মতে, চলতি অর্থ বছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় সম্পর্কিত আইনে পরিবর্তন আসায় করদাতারা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে উৎসাহিত হয়েছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে দুর্নীতিই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার অনেকখানি বিঘ্নিত ও শ্লথ হয়ে পড়ায় কালো টাকার মালিকরা তাদের অবৈধ অর্থের একটা অংশ ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করে দেশের রিয়েল এস্টেট, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, শেয়ারবাজার সহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে। একই সাথে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্স প্রবাহের ঢল প্রমাণ করছে যে, হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজি পাচার শ্লথ হয়ে পড়েছে।

কালো টাকা নিয়ে বাজারে অনেক কথা চালু থাকলেও এই কদর্য অর্থ নিয়ে মানুষের ধারণা স্বচ্ছ ও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি একেক জন একেক মত ব্যাখ্যা করেন। রয়েছে সুবিধাবাদী ব্যাখ্যাও। সাধারণভাবে কালো টাকা বলতে বুঝানো হয় যার উৎস অবৈধ বা আইনসম্মত নয়। ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, চোরাকারবার, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসা কিংবা কোনো অন্যায় অপরাধের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ হচ্ছে কালো টাকা। আয়কর আইন অনুসারে বৈধ উৎস থেকে অর্জিত অর্থও ‘কালো’ হতে পারে যদি টাকার মালিক তার আয়কর বিবরণীতে তার উল্লেখ না করেন।

কেউ কেউ কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থের মধ্যে একটা স্পষ্ট সীমারেখা টানার চেষ্টা করেছেন। তাদের মতে, ‘অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস বৈধ হতে পারে, অবৈধও হতে পারে। কিন্তু কালো টাকার উৎস নিশ্চিতভাবেই অবৈধ। তাই বৈধ অপ্রদর্শিত অর্থের সাথে কালো টাকাকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।’ তবে নৈতিক মানদন্ডে অসৎ উদ্দেশ্যে অপ্রদর্শিত বৈধ অর্থও অবৈধ হতে বাধ্য। কারণ, কর ফাঁকি দেয়াকে আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আর যে কাজ শাস্তিযোগ্য, তা কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে না। তাই কালো টাকার উৎস যা-ই হোক তা কোনোভাবেই বৈধ হওয়ার সুযোগ নেই।

যত কথায় বলা হোক না কেন কালো টাকা বিভিন্ন কারণে সমাজ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এ অর্থ অপ্রদর্শিত থেকে যায় বলে সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ এবং অপরাধে ব্যবহারের অনেক বেশি আশঙ্কা থাকে এবং হয়ও। কালো টাকা আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত করা হয় না বলে রাষ্ট্র তা থেকে কোনো কর পায় না। অন্যদিকে, এ ধরনের অর্থ দুর্নীতিকে শুধু উৎসাহিত করে না বরং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিও দেয়।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে কালো টাকা ছিল মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ। এই হার বেড়ে ২০০৭ সালে দাঁড়িয়েছিল ৩৭ শতাংশ এবং বর্তমানে এর পরিসর আরো বৃদ্ধি পেয়ে তা ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জানা গেছে, বিশ্বের ১৫১টি দেশের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বা ছায়া অর্থ তথা কালো টাকার পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা জর্জিয়ায়-সাড়ে ৭২ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম সুইজারল্যান্ডে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সার্বিকভাবে সারা বিশ্বে কালো টাকার হার গড়ে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ। গোটা বিশ্বে কী পরিমাণ কালো টাকা আছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। অস্ট্রিয়ায় জোহানস কেপলার ইউনিভার্সিটি অব লিনজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফ্রেডারিক স্নেইডার ২০ বছর ধরে কালো টাকা নিয়ে কাজ করছেন। তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে কালো টাকার এ হিসাব পাওয়া যায়।

সব দেশকে নিয়ে এ সংক্রান্ত কাজটি শুরু হয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহায়তায়। এই সমীক্ষা প্রতিবেদনটি ছিল অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরযোগ্য সমীক্ষা। এটি করা হয়েছিল বিশ্বব্যাংকেরই ‘ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করার ব্যয়’ নামের প্রকল্পের অংশ হিসেবে। এতে জাতীয় উৎপাদনে (জিএনপি) একটি দেশের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির হার এতে তুলে ধরা হয়।

মূলত, কালো টাকার পরিমাণ বের করার কাজটি শুরু হয়েছিল ১১২টি দেশ নিয়ে। তথ্য দেয়া হয়েছিল ১৬২টি দেশের। সমীক্ষা অনুযায়ী, গড়ে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা আছে লাতিন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে, যার পরিমাণ ৪২ দশমিক ১ শতাংশ। সাব-সাহারান আফ্রিকায় এ হার ৪১ দশমিক ৩ এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় সাড়ে ৪০ শতাংশ। এর বাইরে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা আছে দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৪ শতাংশ এবং পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিকে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় এই হার সাড়ে ২৮ শতাংশ। তবে ধনী দেশগুলোতে কালো টাকার হার তুলনামূলকভাবে কম। ৩২টি ধনী দেশের সমন্বয়ে তৈরি করা ওইসিডির কালো টাকা ১৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং এর বাইরের উচ্চ আয়ের দেশের কালো টাকা ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের কালো টাকা ছিল ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০০ সালে কালো টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ৩৫ দশমিক ৭, ২০০২ সালে ৩৫ দশমিক ৫, ২০০৩ সালে ৩৫ দশমিক ৬, ২০০৪ সালে ৩৫ দশমিক ৭, ২০০৫ সালে ৩৬, ২০০৬ সালে ৩৬ দশমিক ৭ এবং ২০০৭ সালে আরো বেড়ে হয় ৩৭ শতাংশ। ক্রমবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে কালো টাকার পরিমাণ জিডিপি ৪০ শতাংশেরও ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা।

একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ছে। মানুষ নানাভাবে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রতি ঝুঁকছে। মূলত কর ও সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাবেই এমনটি ঘটছে। আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে, ধনী দেশগুলোতে অনানুষ্ঠানিক অর্থের পরিমাণ কম, দরিদ্র দেশগুলোতে বেশি। যা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে গোদের ওপর বিষফোঁরা হয়ে দেখা দিয়েছে।

ফ্রেডরিক স্নেইডার ২০ বছর ধরে ছায়া বা অনানুষ্ঠানিক অর্থ নিয়ে কাজ করছেন। তা সত্ত্বেও তিনি মনে করেন, এখনো ছায়া অর্থনীতি, এর পরিমাণ, কারণ এবং এর প্রভাব সম্বন্ধে নির্ভুল তথ্য পাওয়া সহজ নয়। এ জন্য প্রয়োজন আরো বেশি গবেষণা। আর তাহলে বিশ্বব্যাপী কালো টাকা নিয়ে আরো নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশেও কালো টাকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা থাকলেও এর পরিমাণ ও কারণ নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। আশির দশকে ভারতে এ নিয়ে বড় ধরনের গবেষণা হয়েছিল। আমাদের দেশে তা মোটেই হয়নি। ফলে এদেশে আসলে কালো টাকার পরিমাণ কত, তা জানার এখন পর্যন্ত একমাত্র উপায় অধ্যাপক ফ্রেডারিক স্নেইডারের গবেষণা। কিন্তু দেশের মধ্যেই কালো টাকার পরিমাণ, উৎস এবং প্রভাব নিয়ে বড় আকারের সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

টিআইবির দাবি মতে, বর্তমানে দেশে কালো টাকার পরিমাণ মোট জিডিপির শতকরা ২৪.১ শতাংশ। কালো টাকা নিয়ে টিআইবির জরিপে দু’টি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। একটিতে কালো টাকার পরিমাণ জিডিপির ১০.১ এবং আরেকটিতে ৩৮.১ শতাংশ দেখান হয়েছে। দু’টির গড় করে জিডিপির ২৪.১ শতাংশ কালো টাকা নিরূপণ করা হয়। অর্থনীতিবিদেরা এ তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন-এই হার ৪০ শতাংশেরও বেশি।

সব ধরনের কালো টাকার প্রধান উৎস দুর্নীতি। কালো টাকা যেমন আয় বৈষম্য বাড়ায়, তেমনি কালো টাকা প্রশ্নহীন থেকে গেলে দুর্নীতিও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। আর কর ফাঁকিসহ নানা কারণে বৈধ আয়ও অনেক সময় কালো টাকায় পরিণত হয়। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশে সাত লাখ কোটি টাকার বেশি কালো টাকা আছে যা সরকারের দু’টি অর্থবছরের বাজেটের প্রায় সমান। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।

মূলত, কালো টাকা সাদা করার অবারিত সুযোগ অন্যায্য বোধকে প্রশ্রয় দেয় এবং মানুষকে অনৈতিক কাজে উদ্বুদ্ধ করে। সীমিত আকারে ও স্বল্প সময়ের জন্য এই সুযোগ অর্থনীতির জন্য সহায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান কালো টাকা সাদা করার সুযোগের চেয়ে সৎভাবে কর দেয়া বেশি ব্যয় বহুল। তাই করদাতারা টাকা কালো করতেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

এমতাবস্থায় মানুষ সৎভাবে কর দিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে কোন ভাবেই শৃঙ্খলা ফিরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরকে অবশ্যই এই অশুভ বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। টাকার বর্ণবিন্যাসের সুযোগ না রেখে কালো টাকাকে কালো হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায় কালো টাকার নেতিবাচক অর্থনীতি থেকে জাতি মুক্তি পাবে না।

https://dailysangram.com/post/443374