৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১১:০৭

ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে আতঙ্কে ক্রেতা

ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতার মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মৌসুমে সব সময়ই পেঁয়াজের দাম ২০-২৫ টাকা থাকে। কিন্তু এবার কোন কারণ ছাড়াই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকায়। ভোক্তারা বলছেন,মৌসুম শেষ হলে এবার পেঁয়াজের দাম কত দাঁড়ায় তা আল্লাহ ভালো জানেন। বাজারে এখন যে পেঁয়াজ রয়েছে তা বেশি পরিমানে কেনাও যায় না। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিম্মমুখী হলেও বাংলাদেশে উল্টো।

দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ভারত পেঁয়াজ রফতানির ন্যূনতম মূল্য (এমইপি) তুলে নেওয়ার পরও বাংলাদেশের খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। এখনও দেশে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা কেজি দরে। এলাকা ও বাজার ভেদে কখনও ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। অথচ গত (২০১৯) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পেঁয়াজের মূল্য ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা। বছরের শেষ দিকে ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের মূল্য সর্বোচ্চ দাঁড়িয়েছিল ১৩০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে এ বছরের পেঁয়াজের মৌসুমে ক্রেতারা বাড়তি দামের অভিযোগ করলেও তা মানতে নারাজ সরকার। সরকারের দাবি, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। রাজধানীর কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভরা মৌসুমেও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো ও ফরিদপুরের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার বাড়তি উৎপাদনের পেঁয়াজ কৃষক ঘরে তুলতে পারেনি। তাই এবছর দাম তেমন একটা কমবে না।

হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানা নেই কারো। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজ (ভালো মানের) বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। আর নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। হঠাৎ করে পেয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
যাত্রাবাড়িতে কাঁচা বাজার করতে আসা ক্ষুদ্র দোকানদার আমিনুল দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, প্রতি সপ্তাহে তার সংসারে পেঁয়াজ লাগে ২ কেজি। তিনি গত সপ্তাহে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ৫৫ টাকায়। আজ(শনিবার) প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩৮ টাকা। তিনি জানান,এই দাম বৃদ্ধির কারণ জানেনা বিক্রেতা। তিনি জানান,যাত্রাবাড়ির সাথে লোকাল বাজারের দামের পার্থক্য থাকে ৫ টাকা। বাইরে দাম আরও বেশি। তাহলে এ বছর মৌসুম শেষ হলে পেঁয়াজের দাম কত দাঁড়াবে।
এদিকে রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, একটি সিন্ডিকেট যেকোনও অজুহাতে পেঁয়াজের বাজারকে অস্থির করার চেষ্টায় থাকে। তারাই আগে বলেছে, ভারতে দাম বেশি হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের দাম কমবে না। কিন্তু এখন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশে দাম কমছে না। এই ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৮-৩০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

এদিকে ব্যবসায়ীরা যে দামে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনবেন, সেই দামেই রফতানি করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছে ভারতের রফতানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া। ফলে এখন পেঁয়াজে ভারতের আর কোনও ন্যূনতম রফতানি মূল্য থাকলো না।

কারণ জানতে চাইলে কাওরানবাজারের পাইকারি ব্যাবসায়ী আতিকুর রহমান বলেন, ভারত সরকার যখন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়ায়, তখন বাংলাদেশেও বাড়ে। কিন্তু ভারত কমালে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়ে না। ফেব্রুয়ারিতেও যদি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার নিচে না নামে, তাহলে আর নামবে কবে? উল্লেখ্য, গত দুই মাসে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় টন প্রতি ৮৫০ ডলার। সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশে রফতানিকৃত পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানিমূল্য পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কমতে থাকে পেঁয়াজের দাম।

জানা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় আড়ত লাসাগাঁও এবং নাসিকে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকে। প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) পেঁয়াজের দাম কমে ৯শ’ রুপিতে নেমে যায়। অর্থাৎ আড়তে প্রতি কেজির দাম ৯ রুপি, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ টাকা। নাসিক ছাড়া অন্য আড়তেও পেঁয়াজের দাম কমেছে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় ভারতের মহারাষ্ট্রের লাসাগাঁও ও নাসিক থেকে। ভারতের বাজারে দামে ধস নামলেও দেশের আড়তে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। অথচ ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে দেশের বাজারে হু হু করে বাড়ে। কিন্তু ভারতে কমলেও দেশে কমার কোনও লক্ষণ নেই। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।

গত বছর জুলাইয়ের শেষভাগে হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকার ওপরে ওঠে। এর মধ্যে পরিস্থিতি সামলাতে ভারতের বিকল্প হিসেবে মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

এরপর অতিবৃষ্টির ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হলে দেশটির সরকার রফতানি মূল্য (এমইপি) বাড়িয়ে দেয়। ফলে আরেক দফা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। তা ১৭০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২২ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাতকরণ ঘাটতি বাদে প্রায় ১৭ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে। দেশে বাৎসরিক চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উৎপাদন ঘাটতি প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন। এই ঘাটতি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

https://dailysangram.com/post/443117