৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১১:০৪

কারাগারে গুরুতর অনিয়ম

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকসহ ২৬টি ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির সাথে জড়িত ও আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত, হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদের সাথে গত ৬ জানুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে কারা কর্মকর্তার কক্ষে ৪৬ মিনিটের নারীসঙ্গের ভিডিওফুটেজ ও সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই কারাগারের পাঁচজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরা হলেনÑ গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১ এর জেল সুপার রতœা রায়, জেলার নূর মোহাম্মদ, ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন, সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর মো: আবদুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী মো: খলিলুর রহমান। এ ঘটনায় দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। কারাগারে নারীর ‘অন্তরঙ্গ’ সময় কাটানোর ঘটনাকে ‘জঘন্যতম অপরাধ ও ‘নিষিদ্ধ কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। ২০১২ সাল থেকে কারাগারে অবস্থানকারী তুষার আহমদ অর্থের বিনিময়ে কারাগারে নারীসঙ্গ উপভোগ করেছেন। ওই নারী তার ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বেআইনি সম্পর্ক স্থাপনে সহযোগিতা করে জেলার এক লাখ, ডেপুটি জেলার ২৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর ও গেট সহকারী প্রধান কারারক্ষী পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। কারাগারে এ ধরনের ঘটনা কি এটিই প্রথম? সূত্র বলছে, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে এবং ব্যাপক হারে এখনো ঘটছে। সবাইকে ম্যানেজ করেই প্রভাবশালী আসামিরা করেছেন এর ব্যবস্থা। কোনো কোনো ঘটনা জানাজানি হলে গঠন করা হয় নামকাওয়াস্তে কমিটি। কিন্তু কারো শাস্তির নজির নেই। সিসি ক্যামেরা লাগানোর পর থেকেই বিষয়গুলো জানাজানি হচ্ছে। তবে সিসি ক্যামেরাকে ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন উপায়ে চলছে এই ‘বাণিজ্য’।
অর্থের বিনিময়ে কারাগারে নারীসঙ্গ, মাদক, অস্ত্রব্যবসা, স্বজনের সাক্ষাৎ, মোবাইল ব্যবহার, চাঁদাবাজি, খাবার নিয়ে অনিয়ম, মাসের পর মাস হাসপাতালে অবস্থান করে রাজসিক সুবিধালাভ প্রভৃতি ওপেন সিক্রেট। জেলখানায় ‘পয়সা ঢাললে বাঘের চোখও পাওয়া যায়’ এমন কথা কয়েদিরা বলে থাকেন। অথচ সাধারণ ও দরিদ্র কয়েদিদের সুযোগ সুবিধা সীমিত; যা তাদের পাওয়ার কথা তাও তারা পান না। বাংলাদেশের ৬৮টি কারাগার ‘টাকার খনি’। এসব কারাগারে কয়েদি ও হাজতি মিলে ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার ৯৪৪ জন হলেও আছেন ৮৮ হাজার ৮৪ জন। এসব কারাগারে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। ২০১৯ সালে ৮০ লাখ টাকাসহ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক দুদকের হাতে গ্রেফতার হন। আজিজুর রহমান নামে কাশিমপুর কারাগার-২-এর এক কারারক্ষী ৬০০ ইয়াবাসহ ধরা পড়েন। কারা অভ্যন্তরের কোয়ার্টারে অবস্থান করেই তিনি ইয়াবা ব্যবসা চালাতেন। মাদারীপুরের র্যাব-৮-এর একটি দল বিদেশী পিস্তল, গুলি ও ম্যাগজিনসহ ফরিদপুর জেলা কারাগারের দু’জন কারারক্ষীকে গ্রেফতার করেছে। ২০১৮ সালে ভৈরবে মাদক ও বিপুল অঙ্কের টাকাসহ গ্রেফতার হন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। ভৈরব রেলওয়ে থানা-পুলিশ ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ১২ বোতল ফেনসিডিল মাদক এবং স্ত্রী, শ্যালক ও নিজের নামে করা আড়াই কোটি টাকার এফডিআরের কাগজপত্র এবং এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেকসহ তাকে গ্রেফতার করেছিল। তিনি ‘বিজয় এক্সপ্রেসে’ চড়ে চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। কারাগার সূত্র জানায়, প্রতি মাসে গড়ে দুই কোটি টাকা ‘ভাগবাটোয়ারা হতো’ জেলারের নেতৃত্বে। মাসোহারা পৌঁছে দেয়া হতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতে। ওই সূত্রমতে, মাসে ৭৫ লাখ টাকা আসে সাক্ষাৎ বাণিজ্য থেকে। এ ছাড়া বন্দীর ৮০ লাখ টাকা, হাসপাতালে ভর্তি থেকে ২০ লাখ, অন্যান্য খাত থেকে আসে আরো ২৫ লাখ টাকা। ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারের পর সোহেল জানিয়েছেন, এসব টাকা চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহা-কারাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিক ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) প্রশান্ত কুমার বণিককে মাসোহারা দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর কাশিমপুর কারাগারে জেলার সম্মেলনে তাদের টাকাগুলো হস্তান্তরের কথা। তবে ওই দুই কর্মকর্তা সোহেলের কাছ থেকে মাসোহারা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন (প্রথম আলো ২৯ অক্টোবর ২০১৮)।

আদালতে হাজিরা শেষে বাসায় যাওয়ার সুযোগও প্রভাবশালী কয়েদিদের করে দেয় কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য। বাসার বাইরে চলে পুলিশ প্রহরা। যানজটের অজুহাতে রাতের কোনো একসময়ে কারাগারে পৌঁছে যায় তারা। সংবাদপত্রের সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সাল থেকে প্রায় ১৮ বছর ধরে কারাগারে আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসীন খান পলাশ ওরফে কাইল্যা পলাশ। অথচ আট বছর আগে তার একটি মেয়ে সন্তান হয়েছে। তার স্ত্রী মাহমুদা খানমের দাবি, ওই সন্তানের বাবা কারাগারে থাকা পলাশ। ঢাকার আদালতে যখন সে হাজিরা দিতে আসত তখন রামপুরার বাসায় ঢুকত। কখনো দুই চার ঘণ্টা, কখনো পুরো দিন কাটাত। একই ঘটনা ঘটেছে ঢাকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত এবং ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম কিলার আব্বাস। প্রায় ১৬ বছর ধরে কারাবন্দী সে। অথচ চার বছর আগে ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছে। আব্বাসের স্ত্রী হামিদা বেগমের দাবি, তার ছেলের বাবা কারাগারে থাকা আব্বাস।’ তিনি পুলিশকে ম্যানেজ করে মিরপুরের বাসায় আসতেন। দীর্ঘ সময় সেখানে কাটাতেন। এসব ঘটনা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। নিয়ম ভেঙে কারাগারে কয়েদির বিয়ে এবং স্ত্রীর সাথে একান্তে সময় কাটানোর ঘটনা অতীতেও হয়েছে সঙ্গোপনে।
আমাদের দেশে কারা অভ্যন্তরে স্ত্রী বা স্বামীর সাথে কয়েদির একান্তে সময় কাটানোর আইনত সুযোগ নেই, প্রথাও নেই। তাই ব্যাপারটি অনিয়ম ও অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটা ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইনত সে সুযোগ রয়েছে। পরিবেশ, পরিস্থিতি, রাজনীতি, প্রতিহিংসা, সঙ্গদোষ, দাম্পত্য কলহ, স্বার্থের দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ বিপথগামী হতে পারে এবং অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে। সব কয়েদি অপরাধী নয়। অনেক কয়েদি বিচারাধীন আসামি। অনেকে বছরের পর বছর জেল খেটে নির্দোষরূপে খালাস পান। আদালত কর্তৃক দোষীসাব্যস্ত ও দণ্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে ‘অপরাধী’ বলার সুযোগ নেই। উপযুক্ত আদালতের মাধ্যমে অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি তাকে কৃত ভুল বুঝতে সহায়তা করা এবং সংশোধন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব কারাকর্তৃপক্ষের। কারাগার আধুনিক সভ্যতায় বন্দীদের সংশোধন ও সুপ্রশিক্ষিত করে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে সমাজে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ব্রিটিশ আমল থেকে কারাগার সংশোধনের স্থান না হয়ে নিবর্তনের কেন্দ্রে পরিগণিত। ছোট অপরাধী কারাগার থেকে ঘুরে এলে দাগী আসামিতে পরিণত হয় অনেক সময়। দীর্ঘ দিন ধরে কোনো বিবাহিত নারী বা পুরুষ কারাগারে বন্দী থাকলে হতাশা, বিষণœœতা ও নিঃসঙ্গতা তাকে গ্রাস করে। তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই মাস দুই মাস পরপর একান্তে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করলে ইতিবাচক ফল পাওয়ার আশা করা যায়। কয়েদিকে ভাত-পানি, বস্ত্র ও চিকিৎসা দেয়া যেমন জরুরি, তেমনি তার জৈবিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করাও উচিত। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আইন সংশোধন করা যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কারাগারে বন্দী কোনো নারী বা পুরুষ তার নিবন্ধিত ও বৈধ জীবনসঙ্গিনীর সাথে নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট সময়ে একান্তে সময় কাটানোর নাম ঈড়হলঁমধষ ারংরঃ নামে পরিচিত। এটা একটি আধুনিক ধারণা। সুইডেন, কানাডা, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, রাশিয়া, স্পেন, বেলজিয়াম, সৌদি আরব, ডেনমার্ক, উত্তর আয়ারল্যান্ড, চিলি, পেরু, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোতে এ নিয়ম চালু রয়েছে। ৩০ মিনিট থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত একান্তে স্ত্রী বা স্বামীর সাথে নিবিড় সম্পর্কে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়া হয়। এ ছাড়া স্কটল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড, চিলি, ডেনমার্কসহ বহু দেশে কয়েদিদের ৮ থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য নিজের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সাথে একান্তে সময় অতিবাহিত করার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর তারা আবার কারাগারে ফিরে আসে। সুইডেনে ১৯৫২ ও ১৯৫৪ সালে পাঁচ হাজার ৬১২ জন এবং ১৯৫৬ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে ১৫৯ কয়েদিকে প্যারোল মঞ্জুর করা হয়েছিল (চৎড়ভ. জঁঃয ঝযড়হষব ঈধাধহ ধহফ গৎ. ঊঁমবহব ঝ. তবসধহং, ‘গধৎরঃধষ জবষধঃরড়হংযরঢ় ড়ভ চৎরংড়হবৎং রহ ঞবিহঃু-ঊরমযঃ ঈড়ঁহঃৎরবং.’ ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঈৎরসরহধষ খধি ধহফ ঈৎরসরহড়ষড়মু, াড়ষ. ৪৯, রংংঁব ২, ১৯৫৮, ঢ়ঢ়. ১৩৩-১৩৯)।

১৯৯৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, কানেকটিকাট, মিসিসিপি, নিউ মেক্সিকো, নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে ঈড়হলঁমধষ ারংরঃ নিয়ম চালু রয়েছে। ভারতে এটি নেই। তবে ২০১৮ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি বিমলা দেবী ও বিচারপতি কৃষ্ণ ভালির একটি বেঞ্চ বংশধারা বজায় রাখার স্বার্থে ছিদ্দিক আলী (৪০) নামে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে দুই সপ্তাহের জন্য ‘স্ত্রীসঙ্গ’ অনুমোদন করেন। ভারতীয় বিচারপতি কৃষ্ণ লিয়ের বলেন, ওসঢ়ৎরংড়হসবহঃ ফড়বং হড়ঃ সবধহ ভধৎববিষষ ঃড় ভঁহফধসবহঃধষ ৎরমযঃং ধং ষধরফ ফড়হি ঁহফবৎ ঃযব ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ, অর্থাৎ ‘সংবিধানের ধারা অনুযায়ী কারাবাস মানে, মৌলিক অধিকারের বিদায় নয়’। পাকিস্তান ফেডারেল শরিয়াহ কোর্ট ১৯৯২ সালে একজন কয়েদির আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে নারী কয়েদিদের ‘স্বামীসঙ্গ’ ও পুরুষ কয়েদিদের ‘স্ত্রীসঙ্গ’ দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে একান্ত ও ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করার জন্য পৃথক ডরমিটরি নির্মাণের নির্দেশ জারি করা হয়। আবেদনকারী তার আর্জিতে উল্লেখ করেন, বছরের পর বছর স্ত্রী থেকে দূরে থাকায় তার মধ্যে সমকামিতা ও মাদক গ্রহণের প্রবণতা চাঙ্গা হচ্ছে। কারাবাসী বিবাহিত নারী-পুরুষের নির্ধারিত বিরতিতে একান্তে সাক্ষাৎ (জৈবিক চাহিদা পূরণ) তাদের অধিকার। তবে এতে পারস্পরিক সম্মতি প্রয়োজন। স্বামীর অপরাধের কারণে স্ত্রীকে যেমন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়, তেমনি স্ত্রীর অপরাধের কারণে স্বামীকে তার অধিকার থেকেও বঞ্চিত রাখা সঙ্গত হবে না। স্ত্রী বা স্বামীর সাথে নির্ধারিত সময়ের জন্য বন্দীদের একান্তে সময় কাটানোর ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি উদার। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী রা: তার শাসনামলে কয়েদিদের তাদের স্ত্রী বা স্বামীর সাথে নির্দিষ্ট সময়ে সাক্ষাৎ ও একান্তে সঙ্গ দেয়ার অধিকার দিয়েছেন (অষ-ঔধ’ভধৎরুধঃ, ঢ়.১০৮, ওসধস গঁযধসসধফ ঝযরৎধুর, ঞযব ৎরমযঃ ড়ভ চৎরংড়হবৎং অপপড়ৎফরহম ঃড় ওংষধসরপ ঞবধপযরহমং (২০০২) ঞৎধহংষধঃবফ নু ত. ঙষুধনবশ, ঋড়ঁহঃধরহ ইড়ড়শং, খড়হফড়হ ডঈ ১ঘ ৩ ঢঢঢ, টক.)।
বিশ^খ্যাত ইসলামী আইনের ভাষ্যকার আল্লামা শামি বলেন, কারাগারের নিরাপদ স্থানে কয়েদির সাথে তার স্ত্রী বা স্বামী একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ বা অধিকার ইসলামে স্বীকৃত (ইবনে আবিদিন, রাদ্দুল মুহতার, পঞ্চম খণ্ড, করাচি, পৃষ্ঠা-৩৭৭)। হাম্বলি মযহাবের ইমামদের মতে, কারাগারে যদি নিভৃত স্থান থাকে, যা বাইরে থেকে কারো দেখার সম্ভাবনা থাকে না, তা হলে কারাবন্দীকে মাঝে মধ্যে স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গমের সুযোগ দেয়া উচিত। কোনো কোনো হানাফি ও শাফেয়ি ইমামও এই মত পোষণ করে থাকেন। তবে মালেকি ইমামদের মতে, যেহেতু কারাগারের উদ্দেশ্য হলো কয়েদিদের মানসিক যন্ত্রণা দেয়া; স্ত্রীর সাথে কারাবন্দীর যৌন মিলনের যদি সুযোগ দেয়া হয়, তা হলে কারাবাসের উদ্দেশই সফল হবে না। তাই স্ত্রীর সাথে কারাবন্দীর যৌন মিলনের সুযোগ দেয়া উচিত নয় (ইবনে নুজায়ম, আল-বাহরুর রাইক, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩০৮; ইবনে ফারহুন, তাবছিরাতুল হুক্কাম, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠ-২০৫; তানকিহ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩০৬)

পরিশেষে আমরা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, কারাগারে বিরাজমান অনিয়ম, নৈরাজ্য, অর্থবাণিজ্য ও উৎকোচ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা আশু প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের জেল কোড ও বিদ্যমান আইন পর্যালোচনা করে কারাবন্দীদের ‘স্ত্রীসঙ্গ’ লাভের সুযোগ অবারিত করা দরকার। নইলে আইন ভঙ্গ করে, টাকা ঢেলে বিত্তশালীরা সে সুযোগ পেতে মরিয়া হয়ে উঠবেন। কারণ প্রয়োজন আইন মানে না। হ
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/561357