৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৩

হাজারে অকালমৃত্যুর শিকার ৩০ নবজাতক

বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ৩০ জন অকালমৃত্যুর শিকার হয়। এদের মধ্যে ১৯ শতাংশ মারা যায় অকালজাত জন্ম (প্রিম্যাচিওর বার্থ) এবং জন্মকালীন কম ওজনের (লো বার্থ ওয়েট) সম্মিলিত কারণে। গতকাল আইসিডিডিআর,বি’র বাংলাদেশে অকালজাত জন্ম ও জন্মকালীন কম ওজনের সমস্যা, সমাধান ও উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানান বক্তারা। এর আয়োজন করে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত আইসিডিডিআর,বি’র রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকারস (আরডিএম) প্রকল্প ও ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই)।

বক্তারা জানান, অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে শিশুর অকালজাত বা প্রিম্যাচিওর জন্ম (গর্ভে ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে) এবং জন্মকালীন ওজন ২ দশমিক ৫ কেজি বা ২,৫০০ গ্রামের নিচে হওয়া। প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫ লাখ ৭৩ হাজার নবজাতক প্রিম্যাচিওর অবস্থায় এবং ৮ লাখ ৩৪ হাজার নবজাতক কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। এদের মধ্যে ১ লাখ ৯২ হাজার নবজাতকের জন্মকালীন ওজন হয় ২ কেজি বা ২,০০০ গ্রামের নিচে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশে প্রতিবছর ১৭ হাজার ১০০ নবজাতক এই দুইয়ের সম্মিলিত কারণে মৃত্যুবরণ করে।

এদের মধ্যে ৭২ শতাংশ জন্মের প্রথম দিন পূর্ণ করার আগেই মৃত্যুবরণ করে। এই ১৭ হাজার ১০০ নবজাতক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পরিবার কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে না; আর অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ মৃত্যু ঘটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সহজে বাস্তবায়ন যোগ্য বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন এন্টিনেটাল কর্টিকোস্টেরয়েড (এসিএস), ক্যাংগারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) এবং স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট (স্ক্যানু) ইতিমধ্যেই এই মৃত্যুরোধে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে, নবজাতকের জন্মকালীন ওজন নির্ণয়ের মাধ্যমে তাকে কম ওজনের হিসেবে চিহ্নিত করার যে পদ্ধতি তার প্রস্তুতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অপ্রতুল। বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, দেশের মাত্র ৬৯ শতাংশ জেলা হাসপাতাল এবং ৬৫ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই ওজন পরিমাপক স্কেল আছে। দেশের মাত্র ২০০ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেএমসি সেবা প্রদানের ব্যবস্থা আছে যেখানে সীমিত সংখ্যক কম ওজনসম্পন্ন নবজাতক সেবা পাচ্ছে। কেএমসি প্রদানের গুণগতমান, ফলো আপ সুবিধার অপর্যাপ্ততা এবং কম সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবস্থানের প্রবণতাও সমীক্ষায় উঠে আসে। ২০২০ সালে মাত্র ৫ হাজার ৭৩১ জন নবজাতক কেএমসি সেবা লাভ করে যা সেবা প্রয়োজন এমন নবজাতকের সংখ্যার মাত্র এক শতাংশ।

অনুষ্ঠানের মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বি’র এসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান। ডা. এহসান বলেন, যদিও নবজাতকের মৃত্যুরোধে কেএমসি অত্যন্ত উপযোগী, একে একটি কম ব্যয়সাপেক্ষ ও সহজ সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু, এই পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগের জন্য চাই দীর্ঘ সময় শিশুকে মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে সেবা প্রদান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ। ফলে, আপাতদৃষ্টিতে একে সহজ সমাধান মনে হলেও এই পদ্ধতির বাস্তবায়নে প্রয়োজন আরো বেশি মনোযোগ।

আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান ডা. সায়েদ রুবায়েত বলেন, জীবনরক্ষাকারী সকল পদ্ধতি কম ব্যয়সাপেক্ষ হবে- এমনটা ভেবে নেয়া উচিত না, আর কেএমসি তেমনি একটি কার্যকরী পদ্ধতি।

বক্তারা আরো বলেন, কোভিড-১৯ এর মতো মহামারির সময়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, উপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে কেএমসি প্রদান করলে নবজাতকের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয় না। তাই, নবজাতক মৃত্যু রোধে কেএমসি সহ অন্যান্য সেবা সহজ লভ্য করার পাশাপাশি এর সুবিধা সম্পর্কে পরিবার ও কমিউনিটিকে অবহিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই লক্ষ্যমাত্রার ‘২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতক ও অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুর প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু বন্ধের পাশাপাশি প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার কমপক্ষে ১২তে এবং প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে অনূর্ধ্ব ৫ বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমপক্ষে ২৫-এ নামিয়ে আনা’ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন নবজাতক স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মাদ সহিদুল্লাহ, আইসিডিডিআর,বি’র ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর এবং আরডিএম প্রকল্প প্রধান ডা. শামস উল আরেফিন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=261469