৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১০:৫২

সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা

এবার অস্থির আটা ময়দার বাজার

চাল ও ভোজ্যতেলের পর এবার অস্থির হয়ে উঠছে আটা-ময়দার বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পণ্য দুটির দাম। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বুধবার প্রতি কেজি আটা ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। পাইকারি বাজারেও প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। তবে সুপার শপের সঙ্গে এই দামের মিল নেই। সেখানে পণ্যের দাম আরও বেশি। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও পণ্য দুটির দাম বৃদ্ধির চিত্র দেখা গেছে। তবে এবারও দাম বৃদ্ধির কারণ অজানা। খুচরা বিক্রেতাদের পুরোনো বক্তব্য। পাইকারি বাজারে বেড়েছে। খুচরা দোকানেও এর প্রভাব পড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এরপর নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে নিু আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। তিনি বলেন, বাজারে নজরদারির জন্য আমরা সবসময় বলে আসছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, কী কারণে দাম বাড়ছে, খতিয়ে দেখা উচিত। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কারসাজির মাধ্যমে বাড়ালে, তাদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাজারে মূলত দুই ধরনের আটা-ময়দা বিক্রি হয়। এগুলো হলো-খোলা এবং প্যাকেটজাত। আবার প্যাকেটজাত পণ্যের বিভিন্ন কোম্পানি ও খোলা পণ্যের বিভিন্ন মান রয়েছে।

রাজধানীর কাওরান বাজার, হাতিরপুর ও জিনজিরা বাজার ঘুরে বুধবার দেখা গেছে, খোলা আটা প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ খোলা আটা কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৩ টাকা। খোলা ময়দা ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। এ ছাড়া প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হয়েছে ৪১ থেকে ৪৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৩৬ থেকে ৪২ টাকা।

জানতে চাইলে জিনজিরা বাজারের খুচরা বিক্রেতা শাকুর আলম জানান, হঠাৎ করে পণ্য দুটির দাম বেড়েছে। বিক্রেতাদেরও এ ব্যাপারে প্রস্তুতি ছিল না। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদের কিছু করার থাকে না। শুধু খুচরা বাজারে নয় দাম বেড়েছে পাইকারি বাজারেও। কাওরান বাজারে বুধবার প্রতি ৫০ কেজির আটার বস্তা বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল এ হাজার ৩৮০ টাকা। প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও প্রতি বস্তা ময়দা বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭৫০ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল এক হাজার ৬৯০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি ও খুচরা সব বাজারেই দাম বেড়েছে।

কাওরান বাজারের মা ট্রেডার্সের মালিক আরিফুর রহমান জানান, মিল মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়ায়। এখানে ব্যবসায়ীদের কিছু করার থাকে না। সরকারি সংস্থাগুলো অবশ্যই মিলারদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ সিন্ডিকেটটি ওই লেভেল থেকে হয়।

জানা গেছে, ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। এর আগে পেঁয়াজ, চাল, আলু এবং ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছিল। কিন্তু এসব সিন্ডিকেটের কোনো বিচার হয়নি। কাওরান বাজারে বুধবার সকালে বাজার করতে আসা এক এনজিওর কর্মী শামীম আহমেদ জানান, শুধু আটা ময়দা নয়, সব পণ্যের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, করোনায় আমাদের বেতন অর্ধেক হয়েছে। এরপর জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবার নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিত্যপণের দাম নিয়ে এক সমাবেশে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, সিন্ডিকেট বরাবর অধরাই থেকে যায়। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা যতই বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেবেন, ততই তারা আরও সংহত হয়। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দামকে আর পাগলা ঘোড়া বলা যায় না। এটি এখন ‘পাগলা হাতি’তে রূপ নিয়েছে। উন্মাদের হাতে আগুন যেমন বিধ্বংসী, তেমনি বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার। অর্থনীতি, সমাজনীতি, বাজারনীতি কোনো কিছুই ধার ধারছে না অসাধু সিন্ডিকেট। ন্যাপ মহাসচিব বলেন, চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা থেকে শাকসবজি পর্যন্ত প্রতিটি পণ্যের দাম লাগামহীন। এতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই অসাধু সিন্ডিকেট শুধু জনগণকেই নয়, সরকারকেও জিম্মি করে ফেলছে।

এদিকে দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। গত ২-৩ দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আর কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য চাল বিক্রেতারা দুষছেন মিল মালিকদের। আর মিল মালিকরা বলছেন, বর্তমানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে আমদানিকারকরাই। তবে আমদানিকারকদের ভাষ্য, তারা মোট চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন, যা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

দিনাজপুর জেলার প্রধান চালের বাজার শহরের বাহাদুর বাজারে বুধবার দেখা যায়, মিনিকেট চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) দুই হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৯৫০ টাকা, বিআর-২৮ জাতের চাল দুই হাজার ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৭৫০ টাকা, বিআর-২৯ জাতের চাল দুই হাজার ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/390438/