৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১০:১৯

আউটসোর্সিংয়ে কর্তার বেতন ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা

গ্রামীণ সড়কেও পরামর্শক খরচ ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা

দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের অনেক খরচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে সাধারণ ও গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পেছনে। যেখানে বাস্তবায়নকারী সংস্থারই রয়েছে প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। মাসে জনপ্রতি এক লাখ ৬১ হাজার টাকা বেতনে দু’জন কর্মকর্তার পরও আবার প্রকল্পের জন্য জনপ্রতি মাসে সোয়া ৩ লাখ টাকা বেতন দিয়ে রাখতে হচ্ছে চার কর্মকর্তা। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলছে, প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানে প্যাকেজের প্রাক্কলিত ব্যয়ের সাথে ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের সামঞ্জস্য নেই। প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানে উল্লেখিত তথ্যাদির মধ্যে সামঞ্জস্য আনয়ন, প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানে একই প্যাকেজের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট ক্রয় পদ্ধতি। উল্লেখ, অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ এবং ক্রয় কাজের সম্ভাব্য তারিখ বাস্তবতার নিরিখে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। এমনকি অনেক খাতে খরচ প্রাক্কলন অত্যধিকভাবে করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় টাঙ্গাইলে অবকাঠামো উন্নয়ন অনেক কম হয়েছে। এই জেলায় এখনো ১৪৪ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৪৭৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক এবং প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার গ্রাম সড়ক কাঁচা রয়েছে। তা ছাড়া জেলায় বিভিন্ন অসমাপ্ত সড়ক কানেকটিভিটি, ব্রিজ বা কালভার্ট ও বাজার নির্মাণের অভাবে মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে সংযোগ স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গ্রোথ সেন্টার, গ্রামীণবাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা সদর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সহজে যাতায়াত করা যায় না। তাই জেলার ১২টি উপজেলার সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি ৮৯৯ কোটি ৯৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চলতি বছরে অনুমোদন পেলে আগামী চার বছরে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।
প্রকল্পের কাজগুলো হলো, ২৩.০৪ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণ, ৭০.১৩ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ, ৫৯৬.২৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ। এ ছাড়া ২৫৫ মিটার ইউনিয়ন সড়কের ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ, ৭৪৭ মিটার গ্রাম সড়কের ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ, ২৬টি বাজার নির্মাণ, ১৮১.৪৬ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত এবং সাড়ে ১০ কিলোমিটার ইউনিব্লকে রাস্তা নির্মাণ। এসব কাজের জন্য দুইজন কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হবে। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারী ব্যতীত আরো ১০জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে। ৪ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে।

ব্যয়ের হিসাব থেকে জানা গেছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যে চারজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হবে তাদের বেতন খাতে খরচ হবে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে জনপ্রতি বেতন ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। আর যে দু’জনকে নিয়োগ দেয়া হবে তাদের বেতন ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তাদের মাসিক বেতন জনপ্রতি ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৫৮ টাকা। এই প্রকল্পেও বিদেশে প্রশিক্ষণে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে সোয়া কোটি টাকা। করোনার মাঝেও প্রকল্পে বিদেশ প্রশিক্ষণ থেমে নেই। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণেও পরামর্শক খাতে খরচ ধরা হয়েছে পৌনে তিন কোটি টাকা।

সড়ক নির্মাণের ব্যয় থেকে জানা যায়, প্রতি কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ধরে ২৩.০৪ কিলোমিটারের জন্য ২৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতি কিলোমিটার ৯১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা খরচ ধরে ৭০.১৩ কিলোমিটারের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার টাকা। আর প্রতি কিলোমিটার গ্রাম সড়ক নির্মাণে ৯১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ধরে ৫৯৬.২৫ কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৫৪৬ কোটি ৯৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। ইউনিয়ন সড়কের চেয়ে গ্রামের সড়ক নির্মাণে খরচ বেশি। গ্রাম ও ইউনিয়ন সড়কে ব্রিজ নির্মাণে প্রতি মিটারে খরচ ধরা হয়েছে ৯ লাখ টাকা। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা মেরামতে খরচ প্রায় ৫৮ লাখ টাকা। ফলে ১৮১ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতে ব্যয় হবে ১০৫ কোটি ২০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। আর ইউনিব্লক দিয়ে রাস্তা নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে কিলোমিটারে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যুগ্ম-প্রধান রবীন্দ্রনাথ বর্মন তার পর্যালোচনায় বলেছেন, প্রকল্পে রাস্তা মেরামত কাজে প্রতি কিলোমিটারে ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক। বন্যা, আমফান প্রকল্পে দেশব্যাপী পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। তা ছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা মেরামতকাজ সম্পদ আর্থিক ও পরিকল্পনার শৃঙ্খলা পরিপন্থী। তাই এটা বাদ দিতে বলা হয়েছে। ব্যক্তি পরামর্শক খাতে পৌনে তিন কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিপিপিতে পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা ও পরামর্শকের ক্যাটাগরি নাম এবং বেতন উল্লেখ করা প্রয়োজন বলেও অভিমত দেয়া হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/560178