৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১০:১১

টিকা নিয়ে ‘টিপ্পনী’ নয়

ইবনে নূরুল হুদা : করোনার টিকা নিয়ে সন্দেহ-সংশয়, অনাস্থা এবং নানাবিধ প্রশ্নের মধ্যেই গত ২৭ জানুয়ারি একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন হয়েছে। সেদিন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল টিকাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাঁচজনকে টিকা দেওয়া হয় বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করলেও টিকা নিয়ে জনমনে যে ধরনের সন্দেহ-সংশয় উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু এখনও নিরসন করা সম্ভব হয়নি। টিকা নিয়ে জনমনে যেসব প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে সেসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনগণকে এখনও পুরোপুরি আস্বস্ত করতে পারেনি। ফলে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তাদের মধ্যে নানাবিধ ভয়ভীতি কাজ করছে এখনও। রয়েছে টিকার মান ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নও।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জরিপে যদিও এক ও অভিন্ন ফলাফল পাওয়া যায়নি। তবে টিকা গ্রহণের ব্যাপারে জনগণের বৃহৎ একটি অংশ অনাগ্রহী এ বিষয়ে রয়েছে ঐকমত্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ টিকা কার্যক্রম শুরুর সাথে সাথে টিকা নিতে আগ্রহী। আগ্রহী আরো ৫২ শতাংশ মানুষ আছেন, তবে তারা ঠিক এ মুহূর্তেই টিকা নিতে মোটেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তবেই টিকা নিতে আগ্রহী বলে গবেষণা দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৩ হাজার ৫শ লোকের ওপর জরিপ চালিয়ে এই ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যেই স্বাস্থ্যমন্ত্রণায়ের পক্ষে জানানো হয়েছে, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে টিকাদান কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। কিন্তু এই কার্যক্রমে যে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা থাকছে না তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় এর আগে জানানো হয় যে, অন্তত ৭৫ শতাংশ মানুষ টিকাদানে আগ্রহী। তবে সেই গবেষণায় বলা হয়েছিলো যে, শহরে বসবাসকারী নাগরিকরা গ্রামের মানুষের চেয়ে টিকা নেয়ার বিষয়ে বেশি আগ্রহী। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের চেয়ে গ্রামে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কম এবং সে কারণে গুজব ও নেতিবাচক প্রচারণাও সেখানে তুলনামূলক কম বলেই গ্রামের মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ বেশি বলে মনে করছেন তারা।

দেশের আট বিভাগের আটটি জেলা ও ষোলটি উপজেলায় এবং ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশনে জনসমাগম বেশি এমন জায়গাগুলোতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ১৬ শতাংশ মানুষ কখনোই টিকা নিতে চান না। মোট ৮৪% মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী তবে এর মধ্যে ৫২% এখনই না নিয়ে ধীরেসুস্থে নিতে আগ্রহী- এমনটিই জানানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে।

গবেষণায় উঠে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে যা পাওয়া গেছে তা হলো- ঢাকা সিটিতে টিকা নেয়ার আগ্রহ তুলনামূলক কম আবার যারা টিকা নিতে ইচ্ছুক তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। আবার যদিও বিনামূল্যে না দেয়া হয় তাহলে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ অপেক্ষাকৃত কম। এমনকি মোট যে ৮৪% মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী তাদের মধ্যে অর্থের বিনিময়ে টিকা নিতে আগ্রহী ৬৬%। আবার বয়স্কদের টিকা নেয়ার আগ্রহ নেই বললেই চলে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের গবেষণায় তিনটি বিশেষ কারণ উঠে এসেছে টিকা নিতে অনাগ্রহের বিষয়ে। এগুলো হলো টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় এবং টিকার মান নিয়ে সন্দেহ। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে টিকা আমদানি করায় জনমনে এই সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, মধ্য জানুয়ারিতে ভারতে টিকা কার্যক্রম শুরু করা হলে ব্যাপক পার্শপ্রতিক্রিয়াসহ প্রাণহানীর ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। যদিও দেশটির স্বাস্থ্যবিভাগ দাবি করেছে যে, প্রাণহানীর ঘটনা টিকাকেন্দ্রিক নয়। কিন্তু তাদের এই দাবিকে আমাদের দেশের একশ্রেণির মানুষ কোনভাবেই আমল দিতে চাচ্ছে না।

এর বাইরে একদল ব্যক্তি আছেন যারা মনে করেন টিকা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা তেমন একটা নেই। কারণ, ইতোমধ্যেই করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। তবে এই গবেষণার সাথে জড়িতরা মনে করছেন, মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব আর নেতিবাচক প্রচারণার কারণেই অনেকের মধ্যে টিকা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে এবং টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছেন। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্যবিভাগ এ বিষয়ে গুজব বা নেতিবাচক প্রচারণার যথোপযুক্ত জবাব দিতে পারেনি। ফলে জনমনে শঙ্কা এখনও দূর হয়নি।

গত বছরের মার্চ মাসে চীনে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর এই প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বেশ সফলতাও দাবি করেছে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতও ইতোমধ্যেই টিকা আবিষ্কার করেছে। দেশটিতে কোভিশিল্ড নামে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এই ভ্যাকসিনটি উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া ভারত বায়োটেক নামে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান কোভ্যাক্সিন নামে একটি টিকা উৎপাদন করছে।

রাশিয়া তাদের নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিন ভেক্টর ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি ব্যবহার করছে। যা ভাইরাসের একটি ভার্সন বা রূপ থেকেই বানানো হয়েছে। এ টিকাটি আর্জেন্টিনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। ফাইজার, ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন এন্ড জনসনের প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডোজ টিকা কেনার অর্ডার দিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। তবে জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির টিকাটি এখনো ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে।

মূলত টিকার কার্যকারিতা, উপযোগিতা, ক্রিয়াশীলতা ও পার্শপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন থাকলেও বৈশি^ক টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন অভিন্ন উপসংহারে পৌঁছতে পারেনি। সঙ্গত কারণেই বিশ্বের কোথাও এখনো টিকা নেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলে সবাইকেই এই টিকা নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, সংক্রমণ ছড়ানোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ৬৫% থেকে ৭০% মানুষের টিকা নেয়া দরকার। তার মানে হচ্ছে মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অনেক মানুষ অবশ্য যে দ্রুততার সাথে কোভিডের টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

যদিও এটা সত্য যে, বিজ্ঞানীরা একটা টিকার নকশা ও ট্রায়াল করতে কয়েক বছর পার করে দেন। তবে একটি সমাধান খুঁজে পাওয়ার পক্ষে বৈশ্বিক স্বার্থ কাজ করার কারণে টিকার উৎপাদন দ্রুততর হয়েছে। আর এই কাজটি করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিজ্ঞানী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ি, তাদের তালিকায় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে ১৫৪টি ভ্যাকসিন। এছাড়া ফেস-ওয়ানে ছোট আকারে নিরাপত্তা নিয়ে ট্রায়ালে রয়েছে ২১টি ভ্যাকসিন। ফেস টু-তে নিরাপত্তা ট্রায়ালে রয়েছে ১২টি এবং ফেস-থ্রি তে বিস্তারিত পরীক্ষা এবং কার্যকারিতার ট্রায়ালে রয়েছে আরো ১১টি ভ্যাকসিন।

ফাইজার, অক্সফোর্ড ও মডার্নার টিকার ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে বলা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, টিকার স্থানে ব্যথা, ফোলা বা লাল হওয়া, মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, জ্বর, শীতল অনুভূতি, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি। তবে এগুলোকে টিকা শরীরে সাথে মানিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বলেই ধরা হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বে যেসব স্থানে টিকা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

যাহোক অনেক আলোচনা-সমালোচনা, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও শঙ্কার মধ্যেই প্রতিদেশী দেশ ভারত থেকে পাওয়া উপহারের কুড়ি লাখ এবং ক্রয় করা টিকার ৫০ লাখ ডোজের চালান ঢাকায় এসে পৌঁছেছে এবং ইতোমধ্যেই টিকাদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনও করা হয়েছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, বেক্সিমকো এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে তারা যে পরিমাণ করোনার টিকা কিনেছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে তারা যে টিকা পাবার আশা করছেন তার পরিমাণ হবে সব মিলিয়ে চার কোটি ৯০ লাখ ডোজ। যা আমাদের মত জনবহুল দেশের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি হবে সাড়ে ১৩ কোটি’রও বেশি। অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ি টিকা সংগ্রহ এবং প্রয়োগে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। এমতাবস্থায়, এই টিকা সবার জন্য উম্মুক্তও থাকছে না। টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ১৭ ক্যাটাগরির নাগরিকদের নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও এই ক্যাটাগরি জনমনে নানাবিধ প্রশ্নে সৃষ্টি করেছে। এই ১৭ ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে-

সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী, বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখ সারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম-কর্মী, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক।

টিকা প্রাপ্তির অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের শীর্ষকর্তাদের কথা উল্লেখ না থাকায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ধোঁয়াসার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ভারতের টিকার উচ্চমূল্য ও মান নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছে দেশের বিরোধীদলগুলো। বিষয়টি নিয়ে তারা রাজপথে কর্মসূচিও পালন করেছে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য বা ভিআইপিরা আগে টিকা না নেয়ায় নতুন সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। টিকার মান ও কার্যকারিতা নিয়ে সরকার সংশ্লিষ্টরাই সংশয়মুক্ত হতে পারেন নি বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির লড়াইয়ে সামনের সারিতে যারা ছিলেন, ভিআইপিদের বাদ রেখে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যদিও এই কথায় পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না জনগণের বৃহৎ একটি অংশ। ফলে টিকা গ্রহণে জটিলতা এখন পর্যন্ত রয়েই গেছে।

বিভিন্ন জরিপের ফলাফল থেকে জানা গেছে যে, জনগণের একটি বৃহৎ অংশ টিকা নেয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এজন্য সরকার সংশ্লিষ্টরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও বিরোধী দলগুলোর অপপ্রচারকে দায়ি করলেও তা খুব একটা গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান শুরুতেই করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের অনাগ্রহ সার্বিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। তাই জনমনে টিকাকে কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে আমাদেরকে অন্যদের আদর্শই অনুসরণ করতে হবে। গুজব বা অপপ্রচারের কথা বলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না; বন্ধ হবে না টিকা নিয়ে টিপ্পনীও!

https://dailysangram.com/post/442627