২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১১:৫৩

টানা শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে

সর্বত্রই শীতের কাঁপন। ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ছিল দেশের কয়েকটি অঞ্চলে। এ ছাড়া রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু অংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। সকালের দিকে জনজীবনে নেমে আসে স্থবিরতা। কিন্তু দুপুরের দিকে অব্যাহত সূর্য কিরণের কারণে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি যায়। আজ মঙ্গলবার দেশের বিশাল অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দুই-তিনটি অঞ্চলের তীব্র তাপমাত্রা থাকবে। গতকাল রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও আজ দিনের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আজ থেকে আগামী কয়েক দিন রাত ও দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ফলে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কোথাও শৈত্যপ্রবাহ না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ছিল ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজারহাটে ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজধানী পড়েছে দেশের মধ্যাঞ্চলে। এখানে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও এর পাশের টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা শৈত্যপ্রবাহের আওতায় থাকায় সেখানকার ঠাণ্ডার প্রভাব পড়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ৭.১ থেকে ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সকাল ৯টার দিকের তাপমাত্রা থেকে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছ অঞ্চলেও শৈত্যপ্রবাহ ছিল।

উপমহাদেশের উচ্চচাপ বলয়টি গতকাল পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিরাজমান ছিল। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল থেকে উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশের উপস্থিতি

গতকাল ছিল না। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার এই প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশ অঞ্চল থেকে যত দূরে থাকবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা তত উষ্ণ থাকে। সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়ার এই প্রক্রিয়াটি আরো দূরে চলে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

টানা শৈত্যপ্রবাহে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, টানা শৈত্যপ্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। গত দুই দিন রাজশাহীতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে মানুষের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও শীতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহ থেকে রাজশাহীসহ সারা দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সকাল ৭টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৭টার পর থেকে আর তাপমাত্রা কমেনি। ফলে এটিই এ দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গত রোববার থেকে হঠাৎ তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি থেকে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি কমে যায়। এ দিন (রোববার) রাজশাহীর সর্বনম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ ছাড়া এটি দেশেরও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল।

গত রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার সেই তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। তবে সোমবারও রাজশাহীর ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহওয়া অফিস।

এ দিকে ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত রাজশাহীতে সূর্যের দেখা মেলেনি। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। হাড় কাঁপানো শীতে ছিন্নমূল মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। এরই মধ্যে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কোল্ড ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে আক্রান্ত মানুষ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ আরো বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে প্রধান সড়কগুলোতে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসন কম্বল বিতরণ শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন শীতার্ত মানুষেরা।

ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিলে রাজশাহীর কৃষিতে ক্ষতির হওয়ার আশঙ্কাও করছেন কৃষকরা। এই সময়ে কুয়াশার কারণে বরাবরই বোরো বীজতলা ও রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে জমির বোরোতে কোল্ড ইনজুরি ও আলুতে লেটব্লাইট (পচন) দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সকাল ৯টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়া সহকারী জাহেদুল ইসলাম মাসুম।

তিনি বলেন, গতকাল সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে। যার কারণে তাপমাত্রা নামার পাশাপাশি কনকনে হিমেল বাতাস বইছে। এটি আরো দুই-তিন দিন থাকবে বলেও জানান তিনি। এর আগের দিন গত রোববার (৩১ জানুয়ারি) কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে যোগ করেন।

শীতের শহর হিসেবে পরিচিত ও চায়ের রাজধানীখ্যাত পর্যটকের শহর শ্রীমঙ্গলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষসহ চা বাগানের শ্রমিকরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের তাপ বাড়লেও কন কনে হিমেল বাতাসের কারণে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব হয়। আবার সূর্যের তাপ কমার সাথে সাথে বিকেল থেকেই তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় শহরে জনসাধারণের উপস্থিতি কম লক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যাও অনেক কমেছে বলে জানিয়েছেন আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকরা।

মাঘ মাসের তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সাথে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা আবৃত থাকছে চারপাশ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়িসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সকালবেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

বগুড়ায় তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় চলতি শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। সোমবার সকাল ৯টায় এ তথ্য জানিয়ে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সজীব হোসেন জানান, এক দিন আগে গত রোববার বগুড়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ দিকে বগুড়ায় সকাল থেকেই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মানুষ জবুথবু হয়ে গেছে। বেলা ১১টার পর বগুড়ার আকাশে সূর্যের আলো পড়েছে। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ে। মাঘ মাসের শেষ বেলায় প্রডণ্ড শীত বলে দিচ্ছে শীতের বিদায় আসন্ন। প্রচণ্ড শীতে কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। এ ছাড়া রাস্তা ও রেলওয়ে স্টেশনের পাশের ছিন্ন মূল মানুষও দুর্ভোগে পড়েছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/559996