১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১১:৩৮

রেল কলোনিতে ভাড়া বাণিজ্য

তেজগাঁও রেলস্টেশনের উল্টো দিকে দক্ষিণ পাশে রয়েছে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা। এখানে তিন সারিতে ৯২টি একতলা পাকা ভবন রয়েছে। এসব ভবন যাঁদের জন্য বরাদ্দ, তাঁদের বেশির ভাগই এখানে থাকে না। বরাদ্দ বাসা অন্যদের ভাড়া দিয়ে নিজেরা থাকেন বাইরে। যাঁরা ভাড়া নেন, তাঁরা আবার অন্যদের কাছেও ভাড়া দিচ্ছেন।

এ ছাড়া ভবনগুলোর যাতায়াতের রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে টিনের ও টিনশেড পাকা ঘর। যাঁদের নামে বাসা বরাদ্দ, তাঁরা যেমন এসব ঘর তৈরি করে ভাড়া দিচ্ছেন, তেমনি ভাড়াটিয়ারাও এ ধরনের ঘর তৈরি করে অন্যদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোয়ার্টারের ভেতর বস্তি রয়েছে এবং কোয়ার্টারে সরকারি কর্মচারীরা থাকেন না। এই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট বুকিংয়ের কাজ করেন ঊর্মি নামের এক কর্মচারী। তিনি তেজগাঁও এই রেল কলোনির বরাদ্দ বাসায় থাকেন না। তাঁর বাসায় থাকেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার সীমা। এই বাসা ঘিরে তৈরি করা হয়েছে আরো কিছু ঘর, যে ঘরগুলোর ভাড়াও সীমার মাধ্যমে নিয়ে থাকেন ঊর্মি।

মহিলা লীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার সীমা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঊর্মি আমার চাচাতো বোন। এখানকার পরিবেশ ভালো না, তাই ওর স্বামী এখানে থাকতে চান না। এখন আমি থাকি। ভাড়া যা ওঠে, তুলে ওরেই দিই।’

ঊর্মির সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর ফোন নম্বর চাইলে দিতে রাজি হননি সীমা। এমনকি ঊর্মির পুরো নাম জানতে চাইলেও তিনি বলতে চাননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ১৩টি বিভাগের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এখানে বাসা বরাদ্দ রয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, কলোনিতে বাসা বরাদ্দ বিভাগওয়ারি হয়। এটার জন্য আলাদা কোনো বিভাগ নেই। ফলে কারা থাকেন, কারা থাকেন না, সেটা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ছাড়া অন্যরা জানে না।

সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, কলোনির ৯২টি একতলা ভবনের প্রতিটিতে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রেড অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসার নকশাও আলাদা। তবে গড়ে প্রতিটি ভবনে ১০টি করে ঘর আছে। এগুলোতে রান্নাঘর ও টয়লেটসহ সব সুবিধা রয়েছে, যেগুলো বরাদ্দ পাওয়া কর্মচারীরা যৌথভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এ হিসেবে কলোনির ভবনগুলোতে অন্তত ৯২০টি ঘর রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ভেতরের রাস্তায় ও খোলা জায়গায় তৈরি করা টিনের ও আধাপাকা আরো ৪০০ ঘর। এসব ঘরের বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়া। প্রতিটি ঘরের ভাড়া গড়ে তিন হাজার টাকা। অর্থাৎ সব কটি ঘর ভাড়া দিলে মাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হয়।

কলোনিতে ভাড়া থাকেন এমন এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি তিনটি ভবন এক বছরের জন্য পাঁচ লাখ টাকা এককালীন দিয়ে ভাড়া নিয়ে অন্যদের ভাড়া দিয়েছেন এবং নিজেও থাকেন। ভবন লাগোয়া যেসব ঘর আলাদা তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোতে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে কিভাবে জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, পাশেই তো সরকারি ভবন। সংযোগ কিভাবে আসে বুঝে নিন। গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের কোনো বিল দিতে হয় না বলেও তিনি জানান।

রেলের আবাসনে বাসা বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি ঢাকার বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। তবে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেকেই সেখানে থাকেন না, তা আমি জানি। তবে কারা থাকেন আর কারা থাকেন না, সেটা আমার জানা নেই।’ তাঁর মন্তব্য, ‘সেখানে বসবাসের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ না থাকার কারণেই অনেকে থাকেন না।’

সরকারি বাসা অন্যদের কাছে ভাড়া দেওয়া অবৈধ হলেও রেল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2021/02/01/1000680